সৌদির সঙ্গে মিল রেখে দেশের বিভিন্ন স্থানে ঈদ উদযাপন
প্রকাশ : 2021-05-13 14:48:59১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
দেশের কয়েকটি স্থানে বিভিন্ন পীরের অনুসারীরা সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদসহ ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করে থাকে। সে হিসেবে দেশের বিভিন্ন স্থানে আজ বৃহস্পতিবার পবিত্র ঈদুল ফিতর পালন করছেন।
হাজীগঞ্জ (চাঁদপুর): চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের ১৫টি গ্রামে বৃহস্পতিবার সকালে পবিত্র ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। হাজীগঞ্জ উপজেলার ৭ নং বড়কুল ইউনিয়নের সাদ্রা দরবার শরীফের পীর হযরত মাওলানা ইসহাক সাহেবের অনুসারীরা এভাবে ঈদসহ সকল ধর্মীয় অনুষ্ঠান করেন।
হাজীগঞ্জ পৌরসভার দক্ষিণ বলাখাল জামে মসজিদে এলাকা থেকে স্থানীয় বাসিন্দা সাবেক পৌর কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান বলেন, তাদের বলাখাল গ্রাম দুটি জামায়াত অনুষ্ঠিত হয়। একটিতে ইমামতি করেন মাওলানা শরিফুল ইসলাম।
এদিকে সাদ্রা দরবার শরিফে সকাল ১০ টায় ঈদের জামায়াত অনুষ্ঠিত হয়। ইমামতি করেন হযরত মাওলানা আরিফুল ইসলাম চৌধুরী।
হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি হারুনুর রশিদ গণমাধ্যমকে জানান, হাজীগঞ্জ উপজেলার ১৫টি গ্রামে আজ ঈদুল ফিতরের জামায়াত হয়েছে। আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় আমাদের কর্মকর্তারা কাজ করেছে। তবে শান্তিপূর্ণ ভাবেই ঈদের জামায়াত হয়েছে।
রাঙ্গাবালী (পটুয়াখালী): সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে মিল রেখে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার ৭ গ্রামে প্রতিবছরের মতো এবারও আগাম ঈদুল ফিতর উদযাপন করছে কাদরিয়া-চিশতিয়া তরিকার অনুসারীরা। বৃহস্পতিবার ঈদের নামাজ আদায় করেছেন তারা।
রাঙ্গাবালী ইউনিয়নের পশুরবুনিয়া, উত্তর পশুরবুনিয়া, নিজ হাওলা, সেনের হাওলা, চর যমুনা, ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের ফুলখালী ও কোড়ালিয়া গ্রামে আজ ঈদুল ফিতর উদযাপিত হচ্ছে।
ওইসব গ্রামে সকাল ৮ টা থেকে ৯ টার মধ্যে ঈদের নামাজের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। অন্তত ৪-৫ হাজার মানুষ আজ ঈদ উদযাপন করছে। তারা সকলে কাদরিয়া-চিশতিয়া তরিকার চট্টগ্রাম চন্দনাইশ জাগিরিয়া শাহ সুফি মমতাজিয়া দরবার শরীফের অনুসারী।
কাদরিয়া-চিশতিয়া তরিকার অনুসারী রাঙ্গাবালী জাগিরিয়া শাহ সুফি মমতাজিয়া সুন্নিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার (ভারপ্রাপ্ত) আনোয়ার হোসেন শাহিন বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনে মসজিদে ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়।
রায়পুর (লক্ষ্মীপুর): সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে প্রতি বছরের মতো এবারও লক্ষ্মীপুরের রায়পুরসহ ১০টি গ্রামে বৃহস্পতিবার ঈদুল ফিতর উদযাপিত হচ্ছে।
জেলার রামগঞ্জ উপজেলার নোয়াগাঁও, জয়পুরা, বিঘা, বারো ঘরিয়া, হোটাটিয়া, শরশোই, কাঞ্চনপুর ও রায়পুর উপজেলার কলাকোপা এবং সদর উপজেলার বশিকপুরসহ ১০টি গ্রামের প্রায় সহস্রাধিক মুসল্লি ঈদুল ফিতর উদযাপন করছেন।
সকাল ১০টায় রায়পুর উপজেলার বামনী ইউপির কোলাকোপা গ্রামের মোলায়েম ভুঁইয়া বাড়ীর মসজিদে ঈদের জামাত হয়। এতে মো. হোসাইন আহাম্মদ মজনু ইমামতি করেন ও ৩০ জন মুসুল্লি অংশগ্রহণ করেছেন।
রামগঞ্জ উপজেলার খানকায়ে মাদানিয়া কাসেমিয়া মাদ্রাসায় ও নোয়াগাঁও বাজারের দক্ষিণ-পূর্ব নোয়াগাঁও ঈদগাহ ময়দানে একই সময়ে ঈদের নামাজের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইমামতি করেন মাওলানা রুহুল আমিন ।
উল্লেখ্য, এসব গ্রামের প্রায় সহস্রাধিক মুসল্লি পৃথক পৃথকভাবে ঈদগাহ মাঠে ঈদের নামাজ আদায় করেন। মাওলানা ইসহাকের (রা.) অনুসারী হিসেবে এসব এলাকার মানুষ মক্কা ও মদিনার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ঈদসহ সব ধর্মীয় উৎসব পালন করে আসছে।
নাজিরপুর (পিরোজপুর): পিরোজপুরের নাজিরপুরের অর্ধশত পরিবারে আজ বৃহস্পতিবার ঈদ পালন অনুষ্ঠান চলছে। সৌদী আরবের সঙ্গে মিল রেখে এসব পরিবার ঈদ পালন করছেন বলে তারা জানান।
জানা গেছে, উপজেলার শেখমাটিয়া ইউনিয়নের রঘুনাথপুরের খেজুরতলা গ্রামের এ ঈদ পালন করা হচ্ছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. বাবুল খান জানান, তারা অর্ধশত পরিবারের ৬০ পুরুষ স্থানীয় খেজুরতলা বাজারের আল-আমিন জামে মসজিদে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় ঈদের নামাজ আদায় করেছেন। ওই নামাজে ইমামতি করণে স্থানীয় স্কুল শক্ষিক মো. কামরুজ্জামান। তারা প্রায় এক যুগেরও বেশী ধরে এ মসজিদে ঈদের নামাজ জামায়াতের সঙ্গে আদায় করেছেন।
ওই মসজিদে নামাজ পড়তে আসা বাগেরহাট জেলার মোড়লগঞ্জ উপজেলার হোগলা গ্রামের ইমাম হোসনে জানান, আমাদের গ্রামে কোন জামায়াত না হওয়ায় আমরা ঈদের জামায়াত আদায় করতে এখানে এসেছি।
উল্লেখ্য, শুরেশ্বর পীরের অনুসারীরা প্রতি বছর সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখ রমজান (ঈদ-উল-ফিতর) ও কোরবানীর (ঈদ-উল-আযহা) দুই ঈদ পালন করে থাকেন।
সাতকানিয়া (চট্টগ্রাম): দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাতকানিয়াসহ আশপাশের উপজেলার ৬০টি গ্রামে বৃহস্পতিবার পবিত্র ঈদুল ফিতর পালিত হচ্ছে। সাতকানিয়া উপজেলার মির্জাখীল দরবার শরীফের অনুসারীরা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে মিল রেখে একদিন আগে রোজা শুরু করেছিলেন। সে হিসেবে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে মিলিয়ে একদিন আগেই তারা ঈদ উদযাপন করছেন।
মির্জাখীল দরবার শরীফের অনুসারীদের সঙ্গে চন্দনাইশ, পটিয়া, লোহাগাড়া, বাঁশখালী, আনোয়ারা উপজেলার আরও অর্ধশতাধিক গ্রামে ঈদ উদযাপন করছেন।
সাতকানিয়া উপজেলার মির্জাখীল, সোনাকানিয়া, গারাঙ্গিয়া, বাজালিয়া, কাঞ্চনা, আমিলাইশ, খাগরিয়া ও গাটিয়াডাঙ্গা, লোহাগাড়া উপজেলার কলাউজান, বড়হাতিয়া, পুটিবিলা, চুনতি ও চরম্বা, বাঁশখালী উপজেলার জালিয়াপাড়া, ছনুয়া, মক্ষিরচর, চাম্বল, শেখেরখীল, ডোংরা, তৈলারদ্বীপ ও কালিপুর, পটিয়া উপজেলার হাইদগাঁও, বাহুলী ও ভেলাপাড়াসহ ৬০ গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ পবিত্র ঈদুল ফিতর পালন করছেন।
কলাপাড়া (পটুয়াখালী): পটুয়াখালীর কলাপাড়ার প্রায় পাঁচ হাজার পরিবার বৃহস্পতিবার ঈদুল-ফিতর উদযাপন করছেন। সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে এরা ঈদ উদযাপন করে থাকেন। এরা এলাকায় 'চান টুপি'র লোক হিসেবে পরিচিত। মূলত এরা কাদরিয়া চিশতিয়া তরিকতের অনুসারী।
এ জামাতে ধানখালী ইউনিয়নের চালিতাবুনিয়া, গিলাতলা, ফুলতলী ও পাঁচজুনিয়া গ্রামের চান টুপির লোকেরা অংশগ্রহণ করেছেন।
এ ছাড়া কলাপাড়া পৌর শহরের নাইয়াপট্টি, উত্তর লালুয়া মাঝিবাড়িসহ বিভিন্ন স্পটে আরও আটটি ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ধানখালী ইউনিয়নের নিশানবাড়িয়া, গন্ডামারি, মরিচবুনিয়া, চালিতাবুনিয়া, ছইলাবুনিয়া, সেনের হাওলা, পৌর শহরের নাইয়াপট্টি, বাদুরতলী, মিঠাগঞ্জ ইউনিয়নের তেগাছিয়া, সাফাখালী, চরপাড়া এবং আজিমদ্দিন গ্রামে প্রায় পাঁচ হাজার পরিবারে এ তরিকার ১৫ হাজার লোক বসবাস করেন।
উপজেলার ধানখালী ইউনিয়নের নিশানবাড়িয়া দরবার শরীফের পরিচালক মো. নিজাম উদ্দিন বিশ্বাস জানান, তারা চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার কাঞ্চন নগর ইউনিয়নের পশ্চিম এলাহাবাদ গ্রামের সিলসিলায়ে আলীয়া কাদরিয়া চিশতিয়া জাহাগিরিয়িা তরিকতের অনুসারী। যার কারণে তারা একদিন আগে রোজা রাখা শুরু করেন এবং ঈদও একদিন আগে উদযাপন করে থাকেন।
নারায়ণগঞ্জ: প্রতিবছরের মতো এবারও সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে নারায়ণগঞ্জের একটি মসজিদে পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেছে ‘জাহাঁগিরিয়া তরিকার’ অনুসারীরা।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় ফতুল্লার লামাপাড়ায় হযরত শাহ সুফি মমতাজিয়া এতিমখানা ও হেফজখানা মাদ্রাসায় ঈদের নামাজটি অনুষ্ঠিত হয়।
ঈদের জামাতে অংশ নেয়া মুসল্লিরা চট্টগ্রামের চন্দ্রনাইশ থানার কাঞ্চন নগরের এলাহাবাদ সুফিয়া দরবার শরীফের অনুসারী। তাদের দাবি, পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তে চাঁদ দেখা গেলে নির্ধারিত সময়ে ঈদ পালন করা যায়।
প্রতিবছরের মতো এবারও ঈদের জামাতে অংশ নিতে গাজীপুরের টঙ্গী, ঢাকার কেরানীগঞ্জ, পুরান ঢাকা, ডেমরা, সাভার এবং নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ, বন্দর ও সোনারগাঁ উপজেলা থেকে দুই শতাধিক মুসল্লি অংশ নেন। নামাজ শেষে তারা দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনা করে মোনাজাত করেন।