সুদানে নিহত ৬ শান্তিরক্ষীর মরদেহ ঢাকায় পৌঁছালো
প্রকাশ : 2025-12-20 12:00:07১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
সুদানের আবেইতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালনকালে সন্ত্রাসী ড্রোন হামলায় নিহত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৬ সদস্যের লাশ দেশে পৌঁছেছে।শনিবার (২০ ডিসেম্বর) বেলা ১১টা ১৫ মিনিটে তাদের কফিন বহনকারী উড়োজাহাজ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
এর আগে, শহীদ শান্তিরক্ষীদের মরদেহ বহনকারী বিমানটি বাংলাদেশ সময় শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৭টায় উগান্ডার এন্টেব বিমানবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা হয়েছে।এই ঘটনায় আহত আরও ৮ জন শান্তিরক্ষী বর্তমানে কেনিয়ায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন এবং তারা শঙ্কামুক্ত বলে নিশ্চিত করেছে সেনাবাহিনী।
যেভাবে হামলার শিকার হলেন শান্তিরক্ষীরা
গত শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) সুদানের আবেই এলাকায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের আওতাধীন কাদুগলি লজিস্টিকস বেইসে এই বর্বরোচিত হামলা চালানো হয়। স্থানীয় সময় আনুমানিক দুপুর ৩টা ৪০ মিনিট থেকে ৩টা ৫০ মিনিটের মধ্যে বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র গোষ্ঠী ঘাঁটিতে আকস্মিক ড্রোন হামলা চালায়। এতে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান ৬ জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী।
বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় নিজেদের জীবন উৎসর্গ করা এই ৬ শহীদ শান্তিরক্ষী হলেন: করপোরাল মো. মাসুদ রানা (নাটোর), সৈনিক মো. মমিনুল ইসলাম (কুড়িগ্রাম), সৈনিক শান্ত মন্ডল (কুড়িগ্রাম), সৈনিক শামীম রেজা (রাজবাড়ী), মেস ওয়েটার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম (কিশোরগঞ্জ) এবং লন্ড্রি কর্মচারী মো. সবুজ মিয়া (গাইবান্ধা)।
আহতদের বর্তমান অবস্থা
হামলায় আহত ৮ জন শান্তিরক্ষীকে দ্রুততম সময়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে অবস্থিত আগা খান ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। তারা হলেন- লেফটেন্যান্ট কর্নেল খোন্দকার খালেকুজ্জামান (কুষ্টিয়া), সার্জেন্ট মো. মোস্তাকিম হোসেন (দিনাজপুর), করপোরাল আফরোজা পারভিন ইতি (ঢাকা), ল্যান্স করপোরাল মহিবুল ইসলাম (বরগুনা), সৈনিক মো. মেজবাউল কবির (কুড়িগ্রাম), সৈনিক মোসা. উম্মে হানি আক্তার (রংপুর), সৈনিক চুমকি আক্তার (মানিকগঞ্জ) এবং সৈনিক মো. মানাজির আহসান (নোয়াখালী)।
আহতদের মধ্যে সৈনিক মো. মেজবাউল কবিরের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তার সফল অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়েছে এবং তিনি নিবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। এছাড়া বাকিরা শঙ্কামুক্ত। তাদের মধ্যে একজন চিকিৎসা শেষে এরইমধ্যে হাসপাতাল ত্যাগ করেছেন।
সেনাবাহিনীর নিন্দা ও শোক
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এই নৃশংস ও কাপুরুষোচিত সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। এক শোকবার্তায় বলা হয়, শহীদ শান্তিরক্ষীদের এই আত্মত্যাগ বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের অঙ্গীকারের এক উজ্জ্বল ও গৌরবময় নিদর্শন হয়ে থাকবে। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে শহীদদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানানো হয়েছে।
রক্তে লেখা শান্তির ইতিহাস
১৯৮৮ সালে মাত্র ১৫ জন সদস্য নিয়ে শান্তিরক্ষা মিশনে যাত্রা শুরু করেছিল বাংলাদেশ। বর্তমানে বিশ্বের ১১৯টি দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে। তবে শান্তির এই পথ সবসময় মসৃণ ছিল না। এ পর্যন্ত জাতিসংঘ মিশনে বাংলাদেশের ১৬৮ জন বীর সদস্য (সেনা, নৌ, বিমান ও পুলিশ) বিশ্বশান্তির জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন। সুদানের মরুভূমিতে ঝরে যাওয়া এই ৬টি প্রাণ সেই ত্যাগের মিছিলে নতুন নাম, যা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের পতাকাকে আরও মহিমান্বিত করেছে।