সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন মানিক কারাগারে
প্রকাশ : 2024-08-24 18:43:36১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
সিলেটের দনা সীমান্ত দিয়ে ভারত পালানোর সময় আটক সাবেক আলোচিত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। এর আগে আদালত চত্বরে আনা হলে ক্ষুব্ধ জনতা তার ওপর ডিম ও জুতা নিক্ষেপ করে। এসময় কয়েকজন হামলারও চেষ্টা চালায়।
শনিবার (২৪ আগস্ট) বিকাল ৪টার দিকে তাকে পুলিশের প্রিজন ভ্যানে করে আদালত চত্বরে নিয়ে আসা হলে এমন দৃশ্যের অবতার হয়।পরে কঠোর নিরাপত্তায় তাকে আদালতে নিয়ে যায় পুলিশ।
বিকাল ৪টা ১০ মিনিটে সিলেটের জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট-১ আদালতের বিচারক আলমগীর হোসেনের আদালতে তাকে তোলা হলে বিচার তাকে জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশন দেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিলেটের আদালত পরিদর্শক মো. জমশেদ আলী। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সিলেটে কোনো মামলা হয়নি ৫৪ ধারায় সাবেক বিচারপতি মানিককে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
আদালতে জানিয়েছেন তিনি খুবই অসুস্থ। তখন আদালত জেল কোড অনুযায়ী তার ব্যবস্থা নিতে বলেছেন।’
তিনি বলেন, ‘আমরা খবর নিয়েছি ঢাকা ও বাড্ডা থানায় হত্যাসহ বিভিন্ন মামলা রয়েছে। এসব মামলার আসামি তিনি।
এর আগে গত শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার দনা সীমান্ত দিয়ে অবৈধপথে ভারত পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টাকালে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সাবেক আলোচিত-সমালোচিত বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে আটক করে বিজিবি। আটকের পর প্রথমে তাকে বিজিবি ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে কানাইঘাট পুলিমের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
সাবেক বিচারপতি মানিককে আটকের বিষয়টি শুক্রবার রাতেই নিশ্চিত করেন ১৯ বিজিবির দনা ক্যাম্প কমা-ার নায়েক সুবাদার আবিদুর রহমান এবং কানাইঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা নাসরীন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে স্থানীয় তিন আওয়ামী লীগ নেতার সহযোগীতায় সাবেক বিচারপতি মানিক সিলেটের কানাইঘাটে এসে পৌঁছান।
এর মধ্যে স্থানীয় দালালরা তাকে একদফা সীমান্ত অতিক্রম করে ভারত দিয়ে যায়। সেখানে তার সঙ্গে থাকা টাকা পয়সা রেখে তাকে ফের বাংলাদেশ সীমান্তে ছেড়ে যায়। তাঁর দাবি অনুযায়ী, দালালরা তাকে মারধর করে সঙ্গে থাকা ৬০ থেকে ৭০ লাখ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায়।’
এদিকে অবৈধভাবে চার-পাঁচজন সীমান্ত অতিক্রমের চেষ্টা করছেন এমন খবরে শুক্রবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে দনা সীমান্তে অভিযান চালায় বিজিবি। বিজিবির উপস্থিতি টের পেয়ে মানিককে রেখে বাকিরা পালিয়ে যায়।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য নাজিম উদ্দিনসহ এলাকার আরো অনেকে জানিয়েছেন, দনা পাতিছড়া গ্রামের রফিকুল হোসেনের ছেলে সাদ্দামের সহায়তায় অবৈধভাবে শুক্রবার বিকেলের দিকে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। পরে রাতে তাকে দনা বিজিবির সদস্যরা আটক করে তাদের হেফাজতে নিয়ে যান। সাদ্দাম হোসেনের বসতবাড়িটি বাংলাদেশ-ভারতের সীমান্তঘেঁষা। সে ভারতে অবৈধভাবে বিভিন্ন সময়ে অনুপ্রবেশ করে থাকে বলে জানা গেছে।
এদিকে বিজিবির সদস্যদের হাতে আটকের পর বিচারপতি শামসুদ্দিন মানিকের বেশ কিছু ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছেড়ে দিয়েছেন অনেকে। ভিডিওতে সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন মানিককে কলাপাতায় শুয়ে থাকতে দেখা যায়। দিনের আলোতে করা ভিডিওতে তাকে বিধ্বস্ত মনে হচ্ছিল। রাতের একাধিক ভিডিও ছড়িয়েছে। সেগুলোতে দড়ি দিয়ে হাত বাঁধা অবস্থায় তাকে দেখা গেছে। মলিন ও এলোমেলো পোষাকে মানিককে সেখানে হতাশ ও দিকভ্রান্ত মনে হচ্ছিল। একটি ভিডিওতে তাকে বিজিবির সদস্যরা তাকে জেরা করতে দেখা গেছে।
আবুল হোসেন মোহাম্মদ শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক আপিল বিভাগের বিচারপতি ছিলেন। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে তিনি অবসরে যান। এরপর বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও টেলিভিশন টক শোতে কথা বলতেন তিনি।
শেখ হাসিনা সরকার পতনের আগে কোটাবিরোধী আন্দোলন নিয়ে একটি টেলিভিশন চ্যানেলের টক শোতে আলোচক হিসেবে অংশ নিয়ে বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক আলোচনার এক পর্যায়ে মেজাজ হারিয়ে সঞ্চালকের ওপর চরম ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। পুরো অনুষ্ঠানে বেশ কয়েকবার সঞ্চালকের ওপর ক্ষোভ ঝাড়েন এবং উচ্চবাচ্য করেন। অনুষ্ঠান শেষে স্টুডিও ছাড়ার আগে সঞ্চালককে প্রকাশের অযোগ্য ভাষায় গালি দেন বিচারপতি মানিক। এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। পরে অবশ্য তিনি ক্ষমা চেয়েছিলেন।