সাবেক চেয়ারম্যানের বাড়িসহ ১২টি ঘরে অগ্নিসংযোগ-লুটপাট

প্রকাশ : 2022-02-09 09:59:36১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

সাবেক চেয়ারম্যানের বাড়িসহ ১২টি ঘরে অগ্নিসংযোগ-লুটপাট

মাদারীপুরের কালকিনিতে কৃষক লীগ নেতা মানিক সরদারের (৪৫) জানাজা শেষে কবর দেওয়া হয় মঙ্গলবার বিকেলে। জানাজা শেষে তাঁর সমর্থকরা দল বেঁধে আলীনগর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান মিলন সরদারের বাড়িতে হামলা ও লুটপাট চালায়। পরে পেট্রোল ঢেলে হাফিজুরের ঘরসহ ১২টি ঘর ও একটি ইটভাটায় আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধরা।

খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট ৪ঘন্টা চেষ্টা চালিয়ে রাত সাড়ে ৯টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রনে আনে। হত্যাকান্ড কিংবা অগ্নিসংযোগের দুটি ঘটনার একটিতেও এখনো কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। এদিকে ঘরবাড়িতে আগুন ও লুটপাটের ঘটনায় পুরো ইউনিয়ন জুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

এর আগে গত সোমবার রাত ৯টার দিকে আলিনগর ইউনিয়নের কালিনগর এলাকার পালরদী নদীর পাড় থেকে মানিক সরদারের লাশটি উদ্ধার করা হয়। নিহত মানিক সরদার একই এলাকার আলমগীর সরদারের ছেলে। তিনি কালকিনি উপজেলা কৃষক লীগের কৃষিবিষয়ক সম্পাদক ও মৎস্যজীবী লীগের সহসভাপতি ছিলেন।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, কৃষকলীগ নেতা মানিক সরদারের লাশ ময়না তদন্ত শেষে মঙ্গলবার বিকেলে পারিবারিক কবর স্থানে দাফন করা হয়। দাফন শেষে তার কর্মী সমর্থকরা আলিনগর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মিলন সরদারের বসতঘরে লুটপাট শেষে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে তার সমর্থিত পাশের ১১টি বসতঘর ও একটি ইউভাটায় পেট্টোল দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয় তারা। খবর পেয়ে মাদারীপুর ফায়ার সার্ভিসের দুটি ও বরিশালের গৌরনদী ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ৪ ঘন্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণ আনে। ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করেছেন জেলার পুলিশ সুপার, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ প্রশাসনের উদ্বর্তন কর্মকর্তা।

মাদারীপুরের পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল বলেন, মানিক সরদার হত্যাকান্ডের ঘটনার জেরে ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যানের বসতঘরসহ বেশ কয়েকটি ঘর ও ইটভাটায় আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ লোকজন। তারা মনে করছে, মানিককে সাবেক চেয়ারম্যান মিলন সরদারের লোকজন হত্যা করেছে। কিন্তু আইন হাতে তুলে নেয়া কারই ঠিক হয়নি। দুটি ঘটনার এখনো কাউকে আটক করা সম্ভব না হলেও অভিযান চলছে।

মাদারীপুর ফায়ার সার্ভিসের পরিদর্শক নুর মোহাম্মদ শিকদার বলেন, 'আগুনে খবর পেয়ে মাদারীপুর ও গৌরনদী ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট ৪ ঘন্টা চেষ্টা চালিয়ে নিয়ন্ত্রনে আনে। একাধিক স্থানে আগুনের ঘটনা থাকায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে বেগ পেতে হয়। তবে, কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।'

কালকিনি থানা পুলিশের সূত্র জানায়, সোমবার রাত ৮টার দিকে মানিক সরদারের মুঠোফোনে একটি ফোন আসে। পরে তিনি মোটরসাইকেলে করে কালকিনি সদরের উদ্দেশ্যে রওনা হন। পালরদী নদীর পাড়ে পৌঁছানোর পর দুর্বৃত্তরা তাঁর গতিরোধ করে দেশি অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করে। মানিকের চিৎকার শুনে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এলে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। মানিককে উদ্ধার করে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে এলে দায়িত্বরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

স্থানীয় সূত্র জানায়, দ্বিতীয় ধাপে কালকিনি উপজেলার আলীনগর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন হয়। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাহিদ পারভেজের সমর্থক ছিলেন নিহত মানিক সরদার। নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন ওই ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান সরদার। রাজনৈতিক দ্ব›দ্ব ছাড়াও দীর্ঘদিন ধরে জমিজমা নিয়ে হাফিজুর রহমানের সঙ্গে মানিকের বিরোধ ছিল। এই বিরোধের জেরেই হাফিজুরের নির্দেশে মানিককে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ নিহতের স্বজনদের।

নিহত মানিক সরদারের স্ত্রী সীমা খানম বলেন, আমার স্বামীকে ওই মিলন সরদারই (হাফিজুর রহমান) হত্যা করেছে। তার নির্দেশ ছাড়া আমার স্বামীকে কেউ মারতে পারে না। আমার স্বামীকে যারা মেরেছে আমি তাদের বিচার চাই।

এদিকে ঘটনার পর থেকে হাফিজুর রহমানকে এলাকায় দেখা যায়নি। তাঁর মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। তাঁর প্রতিবেশী কয়েকজন বলেন, হাফিজুর রহমান ঢাকায় আছেন। তাঁর পরিবারের লোকজন ঘরছাড়া।