সাংবাদিকদের খুঁজে বেড়াচ্ছে তালেবানরা, নারীরা ফিরতে পারছে না কাজে!
প্রকাশ : 2021-08-20 13:40:59১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
ঘরে ঘরে ঢুকে সাংবাদিকদের চিহ্নিত করছে তালিবান। কাবুলে তো বটেই, অন্যান্য অঞ্চলেও সাংবাদিকদের খুঁজে বের করা হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত আফগানিস্তানে বেশ কয়েকজন সাংবাদিকের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। নিখোঁজ রয়েছেন একটি বেসরকারি টেলিভিশনের সাংবাদিক নেমাতুল্লাহ হেমাত। তবে এসব নিষ্ঠুরতা ছাড়িয়ে গেল তালিবান। সাংবাদিককে খুঁজে না পেয়ে হত্যা করেছে তার পরিবারের সদস্যকে। নারী সাংবাদিকরা ঢুকতে পারছে না কর্মক্ষেত্রে।
সূত্র মতে, বেশ কয়েকদিন ধরেই ডিডাব্লিউয়ের তিনজন সাংবাদিককে খুঁজছে তালিবান। তাদের সন্ধানে বিভিন্ন বাড়িতে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। তেমনই একটি বাড়িতে ঢুকে সাংবাদিককে খুঁজে না পেয়ে তার পরিবারের এক সদস্যকে হত্যা করা হয়। গুরুতর আহত আরও এক সদস্য। বাকি সদস্যরা তালিবান পৌঁছানোর আগেই পালিয়ে যেতে পেরেছিলেন। ডিডাব্লিউয়ের ওই সাংবাদিক এখন জার্মানিতে আছেন।
ঘটনার পর ডিডাব্লিউয়ের ডিরেক্টর জেনারেল পিটার লিমবুর্গ জার্মান সরকারকে ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানিয়েছেন। এ সংক্রান্ত চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘আমাদের এক এডিটরের পরিবারের সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে। এর থেকেই বোঝা যায়, আফগানিস্তানে আমাদের কর্মী এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা কী ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে আছেন। এই ঘটনা স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, তালিবান সাংবাদিকদের সঙ্গে কী ধরনের আচরণ করছে। আমাদের হাতে আর সময় নেই। এখুনি এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।’
ডয়েচে ভেলে জানায়, গত কয়েকদিনে বেশ কয়েকজন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে। তার মধ্যে একটি রেডিও স্টেশনের প্রধান তুফান ওমর অন্যতম। তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ।
দুইজন দোভাষীকেও (ট্রান্সলেটর) হত্যা করা হয়েছে। তারাও জার্মানির একটি খবরের কাগজে নিয়মিত লিখতেন। এর আগে পুলিৎজার জয়ী ভারতীয় ফটোগ্রাফার দানিশ সিদ্দিকীকেও হত্যা করেছিল তালিবান।
কয়েকদিন আগে কাবুলে প্রথম সংবাদ সম্মেলন করে তালিবান। সেখানে বলা হয়েছিল, যারা বিদেশিদের সঙ্গে কাজ করেছেন, তাদের ওপর হামলা করা হবে না। হত্যা করা হবে না। যারা বিদেশে পালিয়ে গেছেন, তাদেরকেও ফিরে আসার আহ্বান জানানো হয়েছিল।
কিন্তু বাস্তব ছবি অন্যরকম। স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, রীতিমতো তালিকা তৈরি করে বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালানো হচ্ছে। একের পর এক হত্যার ঘটনা ঘটছে। যত দিন যাবে, এ ধরনের হত্যা আরও বাড়বে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে ডিডাব্লিউসহ একাধিক জার্মান সংবাদসংস্থা সরকারের কাছে একটি আর্জি জানিয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব জার্মান সংবাদমাধ্যমের জন্য কর্মরত আফগান সাংবাদিকদের জার্মানিতে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করা হোক। সপ্তাহের শুরুতেই এই আবেদনপত্র চ্যান্সেলরের কাছে পাঠানো হয়েছিল। তার কয়েকদিনের মধ্যেই সাংবাদিকের পরিবারের সদস্যকে হত্যার ঘটনা ঘটল।
এদিকে, পরিচয়পত্র দেখিয়েও এক আফগান নারী সাংবাদিক অফিসে ঢুকতে পারেননি। সোশ্যাল মিডিয়ায় ওই নারী সাংবাদিক নিজের অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করে সহযোগিতা চেয়েছেন।
সম্প্রতি এ ঘটনার একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সেখানে হিজাব পরে ওই নারী সাংবাদিক বলছেন, আমাদের জীবন সংকটের মধ্যে রয়েছে।
সূত্র মতে, ওই নারী আফগানিস্তানের সংবাদ পরিবেশক শবনম দাউরান। তিনি ৬ বছর ধরে একটি সরকারি খবরের চ্যানেলে কাজ করতেন। তার অভিযোগ, সম্প্রতি তাকে অফিসে ঢুকতে দিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ।
এ ব্যাপারে ভিডিওতে তিনি বলেন, পরিস্থিতি বদলের পরও আমি আশা ছাড়িনি। অফিসেও গিয়েছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্য। হিজাব পরে অফিসের পরিচয়পত্র দেখানোর পরও আমায় ঢুকতে দেওয়া হয়নি।
তবে শবনমের পুরুষ সহকর্মীরা কাজে যোগ দিতে পেরেছেন। শবনম বলেছেন, আমার যে সব পুরুষ সহকর্মীর পরিচয়পত্র রয়েছে তাদের অফিসে ঢুকতে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমাকে বলা হয় ব্যবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। তাই আমি আর কাজ করতে পারব না।
তার আকুতি, যারা আমার কথা শুনছেন, তাদের কাছে আমার অনুরোধ দয়া করে আমাদের সাহায্য করুন।