সবুজের সমারোহ, কাউনিয়ায় তিস্তার চরে বাদাম চাষিদের মুখে হাসি
প্রকাশ : 2024-04-06 19:19:33১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার তিস্তা নদী বেষ্টিত চরাঞ্চলে চলতি মৌসুমে বাদামের বাম্পার ফলনের আশা করছে কৃষক। কয়েকদিনের মধ্যেই চরাঞ্চলে শুরু হবে বাদাম কাটা মাড়াইয়ের উৎসব। ফলন ও দাম পাওয়ার আশায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে।
সরেজমিনে উপজেলার চরাঞ্চলের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে দিগন্ত মাঠ জুড়ে বাদামের চাষ হয়েছে। বাদাম ক্ষেত যেন নয় সবুজ গালিচা। উপজেলার চর গনাই, চর হয়বত খাঁ, চর বিশ্বনাথ, প্রাননাথ চর, চর নাজিরদহ, গুপিডাঙ্গা, গদাই, পাঞ্চরভাঙাগা, ঢুসমারা চর, তালুকশাহবাজ গ্রামসহ তিস্তার নদীর জেগে উঠা চরের জমিতে চলতি মৌসুমে বাদামের চাষ বেশী হয়েছে। গ্রাম গুলোতে কৃষক কৃষানী বাদাম ক্ষেত পরিচর্যার কাজে ব্যাস্ত সময় পাড় করছে। চর গনাই গ্রামের বাদাম চাষি দুদু মিয়ার সাথে কথা বলে জানাগেছে চলতি মৌসুমে তিস্তার চরে সে ১২ একর জমিতে বাদাম চাষ করেছে। চিলমারী ও দুরাকুটি হাট এবং বিএডিসি থেকে ১৪ হাজার টাকা মন দরে বীজ কিনে এনে রোপন করেছে। ফসল তোলা পর্যন্ত ১২ একর জমিতে তার খরচ হবে প্রায় ৯লাখ টাকা। সে আশা করছে একরে প্রায় ৩৩ থেকে ৩৫ মন বাদাম পাবে। বর্তমানে বাজারে বাদাম ৫ হাজার ২শত টাক, কিন্তু মৌসুমে বাজার যাবে ৪ হাজার টাকা মন দরে বিক্রয় হবে। সে আশা করছে চলতি মৌসুমে বাদাম বিক্রয় করে তার প্রায় ৮লাখ টাকা আয় হবে। সে জানায় ধানের চেয়ে বাদাম অনেক লাভ জনক ফসল। তার দেখা দেখি প্রায় শতাধিক কৃষক বাদাম চাষ করেছে। এবার নদীর চরে পলি পড়ায় গাছে তেজ অনেক বেশী। কৃষক ইমান আলী জানান, আমি ১৫ একর জমিতে বাদাম চাষ করেছি। প্রাকৃতিক কোন দুর্যোগ বা বন্যা না হলে বাম্পার ফলনের আশা করছি। চরগনাই গ্রামের ভেলু শেখ জানান, সরকারী ভাবে উপজেলায় ভাল মানের বীজ মাঘ মাস থেকে শুরু করে ফাল্গুন এর ১৫ তারিখের মধ্যে সরবরাহ করতে পারলে উপজেলা বাদামের ফলন আরও ভাল হবে। বর্তমানে কাউনিয়ায় ভাল বীজের খুবই সংকট। কাউনিয়ার বাদাম স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন জেলায় রপতানি হয়। কৃষি বিভাগ জানায় চলতি মৌসুমে বাদাম চাষের লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয়েছিল ৭৩০ হেক্টর অর্জন হয়েছে ৭৫০ হেক্টর। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্র ১৪৭৯ মেঃটন। আনেক কৃষক অভিযোগ করে বলেন তাদের আধুনিক প্রশিক্ষন ও ভাল বীজের অভাবে তারা ভাল করতে চাইলেও তেমন ভাল করতে পাচ্ছে না। তারা সরকারী ভাবে ভাল বীজ সরবরাহ ও আধুনিক প্রশিক্ষনের দাবী জানিয়েছেন। ব্যাংক গুলো ঋণ দিলেও কাগজ পত্রের নানা জটিলতায় কৃষক ঋণ নিতে আগ্রহী হয় না। তারা সহজ ভাবে এনজিও বা দাদান ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চরা সুদে ঋণ নিয়ে থাকে। এলাকার কৃষক নিজ চেষ্টায় চরাঞ্চলে এ বছর বাদাম চাষে বিপ্লব ঘটিয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহনাজ পারভীন জানান, উপজেলায় বাদাম চাষে ২০টি প্রদর্শনী প্লোট রয়েছে, রবি চিনাবাদাম ৮, ৯, বিনা ৯ সহ উপজেলায় মাইজচর, বাসন্তি, বারি ৫/৬ ও কিছু স্থানীয় জাতের বাদাম চাষ হয়েছে। এলাকার ৬০০ জন চাষিকে প্রনোদনার আওতায় বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে। চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় বাদামের ভাল ফলন আশা করছি। কৃষক দামও পাচ্ছে ভাল। তিস্তার চরাঞ্চলের জমি বাদাম চাষের উপযোগি। তিস্তার পতিত জমি গুলোতেও এবার বাদাম চাষ হয়েছে বেশী।