শেখ হাসিনা সরকারের সাফল্যের মুকুট যোগ হয় আরেকটি হিরন্ময় পালক- সেতুমন্ত্রী
প্রকাশ : 2023-06-25 14:35:57১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
পদ্মা সেতুর এক বছর পূর্তি হলো আজ রবিবার (২৫ জুন)। গত বছরের (২০২২) এই দিনে দেশের যোগাযোগব্যবস্থায় বৈকল্পিক পরিবর্তন আনা সেতুটির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পদ্মা সেতুর প্রথম বর্ষপূর্তির দিন সেতু ভবনে প্রেস ব্রিফিং করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন, এক বছর আগে ঠিক এইদিনে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের রূপকার, সময়ের সাহসী নেতৃত্ব, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্মাণ কাজ শেষে পদ্মা সেতু যানবাহন চলাচলের জন্য আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এর পরদিন অর্থাৎ ২৬ জুন সকাল থেকে যানবাহন চলাচল শুরু করে আমাদের স্বপ্ন ও সম্ভাবনার প্রতীক পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে। বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় উন্মোচিত হয় নবদিগন্ত। শেখ হাসিনা সরকারের সাফল্যের মুকুট যোগ হয় আরেকটি হিরন্ময় পালক।’
উদ্বোধনের পর থেকে আর থেমে থাকতে হয়নি, সেতুটি নিরবচ্ছিন্ন সেবা দিয়ে আসছে, উল্লেখ করেন সেতুমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আজ আমি একবছর পূর্তিতে নিজস্ব অর্থায়নে সেতু নির্মাণে সাহসী সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি জানাচ্ছি কৃতজ্ঞতা।’ তিনি পদ্মা সেতু নির্মাণের সঙ্গে সম্পৃক্ত সবাই এবং সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানান।
মন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা সবই জানেন এবং দেখছেন, একটি সেতু কীভাবে বদলে দিতে পারে অর্থনৈতিক চালচিত্র। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১৯টি জেলার সঙ্গে এখন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সড়ক-সংযোগ। এ সেতুর মাধ্যমে মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দর, বেনাপোল স্থল বন্দরের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে। যাত্রী ও পণ্য পরিবহন এখন সময় ও ব্যয় সাশ্রয়ী। নদীর ওপারের একসময়ের অবহেলিত জনপদ আজ দ্যুতিময়। গড়ে উঠছে ছোট-বড় শিল্প কারখানা। খুলে গেছে স্বপ্নের দ্বার এবং সম্প্রসারিত হয়েছে সম্ভাবনার দিগন্ত।’
সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘সর্বশেষ সংশোধন অনুযায়ী এ সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৩২ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা। আপনাদের জানা রয়েছে যে, আমাজন নদীর পর পদ্মাকে বিবেচনা করা হয় মোস্ট আনপ্রেডিক্টেবল রিভার হিসেবে। নির্মাণ কাজের প্রতিটি ধাপেই ছিল নানান চ্যালেঞ্জ। নদীর আচরণ দেখে শেষদিকে এসে আমাদের ডিজাইনে সামান্য পরিবর্তন আনতে হয়েছিল।’
ডাবল ডেকার পদ্মা সেতু শুধু নিছক একটি পারাপারের সেতুই নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এর সঙ্গে যেমন রয়েছে রেললাইন, তেমন এপার থেকে ওপারে চলে গেছে গ্যাস এবং অপটিক্যাল ফাইবার লাইন। পাশাপাশি নির্মাণ করা হয়েছে পায়রা ও রামপাল থেকে ঢাকাসহ সারা দেশে বিদ্যুৎ সঞ্চালনের জন্য আলাদা ৪০০ কেভিএ বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমি আপনাদের গত এক বছরের যানবাহন বিষয়ক কিছু তথ্য দিতে চাই। ২৫ জুন ২০২২ হতে গতকাল অর্থাৎ ২৪ জুন রাত ১২টা পর্যন্ত এ সেতু দিয়ে পারাপার হয়েছে মোট ৫৬ লাখ ৭৫ হাজার যানবাহন। দৈনিক গড়ে সাড়ে ১৫ হাজার যানবাহন পারাপার হচ্ছে এ সেতু দিয়ে, যা আমাদের পূর্বানুমানের চেয়েও বেশি। এ থেকে বোঝা যায়, পদ্মা সেতু যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে অসামান্য অবদান রেখে চলেছে। শেখ হাসিনা সরকারের উন্নয়ন জনগণের জন্য। এর সুফল ভোগ করছে।’
টোল বিষয়ক পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে আপনারা হয়তো জেনেছেন, প্রতিদিন গড়ে টোল আদায় হচ্ছে প্রায় ২ কোটি ১৮ লাখ টাকা করে। গতকাল রাত পর্যন্ত পদ্মা সেতুর টোল-রাজস্ব আদায় হয়েছে ৭৯৮ কোটি ২৩ লাখ ১৬ হাজার টাকা। যা আজ বিকাল নাগাদ ৮০০ কোটিতে উন্নীত হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।’
পদ্মা সেতু টোল প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘আমি একটি বিষয় স্পষ্ট করতে চাই, পদ্মা সেতু পারাপারে একমাত্র রাষ্ট্রপতি ছাড়া রাষ্ট্রের সকল নাগরিককে টোল প্রদানে বাধ্যবাধকতা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীও সেতু পারাপারে টোল প্রদান করেছেন। তিনি উদ্বোধনের দিনেই ৫৯ হাজার ৬০০ টাকা টোল প্রদান করেছেন। এছাড়া, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও অন্যান্য সংস্থা তাদের যানবাহনের বিপরীতে ৯১ লাখ ৭০ হাজার টাকা টোল প্রদান করেছে।’
মন্ত্রী জানান, বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ বা বিবিএ একটি স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান। সরকারের নিকট হতে সেতু নির্মাণ ব্যয়ের অর্থ বিবিএ ঋণ হিসেবে নিয়েছে। এ ঋণের টাকা ধাপে ধাপে সরকারি কোষাগারে ফেরত দিবে বিবিএ। এরই মাঝে সদ্য সমাপ্ত অর্থ বছরে চারটি কিস্তি পরিশোধ করা হয়েছে। প্রথম দুটি কিস্তি বাবদ প্রায় ৩১৬ কোটি ৯১ লাখ এবং ৩য় ও ৪র্থ কিস্তি বাবদ প্রায় ৩১৬ কোটি ৩ লাখ টাকাসহ সর্বমোট প্রায় ৬৩২ কোটি ৯৪ লাখ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী ৩৫ বছরের মধ্যেই বিবিএ সম্পূর্ণ অর্থ সরকারকে ফেরত দেওয়ার কথা রয়েছে।
উন্নয়ন একটি বহুমাত্রিক ধারণা উল্লেখ করে তিনি বলেন, শেখ হাসিনা সরকারের উন্নয়ন ও অর্জন আজ ৫৬ হাজার বর্গমাইল জুড়ে। উন্নয়ন জনগণের জন্য। উন্নয়ন সমৃদ্ধির জন্য। উন্নয়ন আমাদের স্বপ্নের সোনার বাংলা নির্মাণের জন্য। তারই ধারাবাহিক প্রয়াসে নির্মিত হয়েছে পদ্মা সেতু। এই সেতুকে ঘিরে বদলে যাচ্ছে দক্ষিণ-পশ্চিমের জনপদ, দেশের অর্থনীতি। এরই মাঝে মধুমতি নদীর ওপর নির্মাণ করা হয়েছে কালনা সেতু। যাত্রী পরিবহনের পাশাপাশি আমদানি-রফতানি পণ্য পরিবহন, কৃষি পণ্য ও কাঁচামাল বিপণন, শিল্পায়ন এবং পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটছে। বেড়েছে পুঁজির প্রবাহ বেড়েছে। কর্মসংস্থান। শেখ হাসিনা সরকারের নেতৃত্বে যোগাযোগ ব্যবস্থায় আজ বৈপ্লবিক পরিবর্তন দৃশ্যমান।
পদ্মা সেতু নিয়ে ‘নানান অপপ্রচারকারীদের’ উদ্দেশ করে মন্ত্রী বলেন, ‘যারা অপপ্রচার করেছে, গুজব ছড়িয়েছে; ষড়যন্ত্র করেছে তাদের সকল অপপ্রচার, গুজব আর ষড়যন্ত্রের বিপরীতে প্রমত্তা পদ্মার বুক চিরে দাঁড়িয়ে আছে আমাদের সক্ষমতার প্রতীক পদ্মা সেতু। এ সেতুই তাদের ষড়যন্ত্রের যুতসই জবাব। নিন্দুকের মুখেও এখন আমরা প্রশংসা শুনতে পাই। দেশরত্ন শেখ হাসিনার অসীম সাহসই আমাদের অমিত সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত করেছে। পদ্মা সেতু আমাদের – এ ব্রিজ অব প্রাইড। এটি জাতীয় সম্পদ। এ সম্পদের ব্যবহার, সংরক্ষণ এবং রক্ষণাবেক্ষণে আমাদের হতে হবে যত্নবান।‘
এ সময় সেতু বিভাগের সচিব মো. মনজুর হোসেন, পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক সফিকুল ইসলাম এবং সেতু নির্মাণ প্রকল্পের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।