শিশু দিবসে অনন্য নজির স্থাপন করলেন চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং

প্রকাশ : 2023-06-01 13:51:09১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

শিশু দিবসে অনন্য নজির স্থাপন করলেন চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং

১৩ বছর বয়সী বাংলাদেশি এক শিশুর চিঠির জবাব পাঠিয়েছেন চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। চিঠিতে আলিফা নামের ওই শিশুকে ভালো পড়াশোনার পাশাপাশি স্বপ্ন পূরণ করার তাগিদ দিয়েছেন সি। এ ছাড়া দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ঐতিহ্য এগিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। ২০১০ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে অবস্থিত ‘পিস আর্ক’ নামে চীনা নৌবাহিনীর হাসপাতালে জন্ম হয়েছিল আলিফার। এ জন্য মা-বাবা নাম রেখেছিলেন আলিফা চীন। চিঠিতে সি চিন পিং আলিফাকে ‘চীন’ নামেই সম্বোধন করেন। চীনা গণমাধ্যম সিজিটিএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১ জুন বিশ্ব শিশু দিবস সামনে রেখে সম্প্রতি পাঠানো ওই ফিরতি চিঠিতে আলিফার সুস্বাস্থ্য ও পরিবারের সুখ-শান্তি কামনা করেন সি চিন পিং।

জন্মের সময় আলিফার মা জান্নাতুল ফেরদৌস মারাত্মক হৃদ্‌রোগ সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিলেন। এই অবস্থায় চীনা চিকিৎসকেরা সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে নিরাপদে আলিফাকে ভূমিষ্ঠ করেন।

আলিফাকে পাঠানো চিঠিতে সি স্মরণ করিয়ে দেন, এই অঞ্চলের সঙ্গে চীনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকেই। হাজার বছর ধরে এই দুই অঞ্চলের মানুষের মধ্যে বিনিময় চালু ছিল। এ ছাড়া ৬০০ বছর আগে চীনের মিং রাজবংশের নাবিক ঝেং হি এই অঞ্চলে দুবার ভ্রমণ করেছিলেন এবং দুই দেশের মানুষের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের বীজ বপন করেছিলেন। আর ওই ঘটনার ৬০০ বছর পর চীনা সামরিক চিকিৎসকদের সহযোগিতায় আলিফার জন্মের ঘটনাকে সম্পর্কের নতুন মোড় হিসেবে আখ্যা দেন সি।

এর আগে সি চিন পিংকে লেখা চিঠিতে আলিফা জানিয়েছিল, সে দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের দূত হতে চায়। আর চিকিৎসা বিষয়ে চীনে পড়াশোনা করতে চায়। তার মায়ের জীবন বাঁচিয়ে দেওয়া শেং-রুইফেং নামের সেই নারী চিকিৎসকের মতো সে-ও অনেকের জীবন বাঁচাতে চায়। সিজিটিএনকে আলিফা জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট সির চিঠি পাওয়ার দিনটি তার কাছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। সির পরামর্শ মেনে পড়াশোনায় আরও মনোযোগী হওয়ার পরিকল্পনার কথাও জানায় সে।

 

তাছাড়া আন্তর্জাতিক শিশু দিবস উপলক্ষে বুধবার সকালে বেইজিং ইয়ুইং স্কুল পরিদর্শন করেছেন চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। তিনি স্কুলের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দেখা করেছেন এবং চীনের সব শিশুদের দিবসটির শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

জনাব সি জোর দিয়ে বলেন, শিশুরা দেশের ভবিষ্যত ও চীনা জাতির আশা। নতুন যুগে চীনা শিশুদের উচিত স্বপ্ন ও উচ্চাকাঙ্ক্ষা নিয়ে ভালোভাবে লেখাপড়া করা ও পরিশ্রম করা, বন্ধুত্ব ও উদ্ভাবন করা। যাতে, নৈতিকতা, বুদ্ধি, শরীর ও শ্রমসহ সার্বিক উন্নয়ন বাস্তবায়ন করা যায়।

পরিদর্শনকালে ইয়ুইং স্কুলের পরিবেশ উপভোগ করেন সি। তিনি মনে করেন, মানুষের শারীরিক মান উন্নত করতে হলে কিশোর বয়সটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এসময় তাদের শরীর স্বাস্থ্যকর হলে ভবিষ্যতে চাকরি ও পড়াশোনার ভালো ভিত্তি স্থাপন করা যায়। শরীরচর্চা হবে কিশোর ও শিশুদের শারীরিক অবস্থা উন্নয়নের কার্যকর পদ্ধতি। তাই স্কুলে ক্রীড়া শিক্ষা থাকা, পরিবার, স্কুল ও সমাজের বিভিন্ন মহলে শিশুদের শরীরচর্চার পরিবেশ তৈরি করতে হবে।

এদিন শিক্ষার্থীদের খামারও পরিদর্শন করেন জনাব সি। এখানে তারা কৃষিকাজ অনুশীলন করতে পারে। এ সম্পর্কে প্রেসিডেন্ট বলেন, জীবনের অনেক জ্ঞান ও তত্ত্ব শ্রমের মাধ্যমে অনুভব করা যায়। তাই ছোটবেলা থেকে বাচ্চাদের শ্রমের প্রতি আবেগ ও অভ্যাস তৈরি করতে হবে। খাদ্যশস্যকে গুরুত্ব দেওয়া এবং প্রকৃতিকে সম্মান করাসহ চরিত্র গঠন করাও জরুরি। এভাবে তারা ‘সবুজ পাহাড় ও পরিচ্ছন্ন নদী সোনা ও রূপার মতো শ্রেষ্ঠ’ চিন্তাধারা ভালোভাবে বুঝতে পারে।

পরিদর্শন শেষে চীনের সব শিশুদের আন্তর্জাতিক শিশু দিবসের শুভেচ্ছা জানান সি। তিনি তাদের বলেন, বর্তমান শিশুরা দেশের শক্তিশালী উন্নয়ন ও জাতীয় পুনরুত্থানের প্রধান শক্তি। এ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে ‘সার্বিক আধুনিক সমাজতান্ত্রিক শক্তিশালী চীন গঠনের’ লক্ষ্য- নিরলস প্রচেষ্টা ও সংগ্রামের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে পারবে।

শিশু দিবস একটি স্মরণীয় দিন যা শিশুদের সম্মানে প্রতি বছর উদযাপিত হয়, এটি উদযাপনের তারিখ দেশ অনুসারে পরিবর্তিত হয়। ১৯২৫ সালে জেনেভায় বিশ্ব শিশু কল্যাণ সম্মেলনে প্রথম আন্তর্জাতিক শিশু দিবস ঘোষণা করা হয়। ১৯৫০ সাল থেকে, এটি বেশিরভাগ কমিউনিস্ট এবং পোস্ট-কমিউনিস্ট দেশগুলোতে ১ জুন উদযাপিত হয়। ১৯৫৯ সালের ২০ নভেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ কর্তৃক শিশু অধিকারের ঘোষণাকে স্মরণ করার জন্য ২০ নভেম্বর বিশ্ব শিশু দিবস পালন করা হয়। কিছু দেশে, এটি শিশু সপ্তাহ হিসেবে পালিত হয়।