শিশুকে নিজের জন্য বাঁচতে শেখাই

প্রকাশ : 2022-11-14 12:26:30১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

শিশুকে নিজের জন্য বাঁচতে শেখাই

আজকের শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষ্যত। তাদের শিশুদের পরিচর্যা ও মানসিক বিকাশে আমাদের যত্নবান হতে হবে। পরিপূর্ণ মানসিক বিকাশে বাধাপ্রাপ্ত হলে শিশুটি হয়তো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষিত হবে কিন্তু মানবিক গুণাবলী সম্পন্ন নাও হতে পারে। শিশুদের জীবনে কতটুকু হস্তক্ষেপ করতে হবে আর কতটুকু ছাড় দিতে হবে প্রত্যেকটি অভিভাবকের জানা প্রয়োজন। 

অভিভাবকগণ সবসময়ই শিশুর জীবনটাকে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করেন। কিন্তু প্রয়োজন হল তাকে নৈতিক শিক্ষা গুলো দিয়ে তাকে নিজের মত কাজ করতে দেয়া। কিছু উদাহরণের মাধ্যমেই আলোচনা করা যাক।

বর্তমানে সচেতন মায়েরা শিশুদের জন্য রুটিন মাফিক খাবারের তালিকা তৈরি করে থাকেন। সেই অনুযায়ী খাবার না খেলে মায়েরা জোরপূর্বক শিশুকে খাওয়ানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন শিশুকে জোড়পূর্বক খাওয়ানো স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। বেশি খাবার খেলেই শিশু স্বাস্থ্যবান হবে সেটা জরুরি নয় শিশুর পুষ্টি নিশ্চিত করা জরুরি। 

একটু বড় হতে না হতেই জোরপূর্বক আমরা তাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য পড়াশোনা করানোর চেষ্টা করি। প্রথম হতে হবে, ভাল ফলাফল করতে হবে! এই ধরণের প্রতিযোগিতা করতে বাধ্য করি। যেন অন্যান্য অভিভাবকের কাছে প্রতিপত্তি দেখানো যায়। অনেক সময় শিশু খেলার সময় বা তার প্রিয় টিভি শো দেখার সময় পায়না। এতে তার মানসিক বিকাশ কতটুকু ক্ষতিগ্রস্থ হয় তার ধারণা হয়তো আমরা পাইনা। 

কোন শিশুর মধ্যে কোন সুপ্ত প্রতিভা রয়েছে তা অভিভাবকের বের করার দায়িত্ব। কিন্তু তা না করে একজন শিশুকে দিয়ে নাচ, গান, ছবি আকা সবই শেখাতে চাই। সে কোনটাইয় পারদর্শী সেই অনু্যায়ী তাকে শিক্ষা দিতে হবে। অনেক অভিভাবক শিশু জন্মের সাথে সাথেই ঠিক করে রাখেন তার ছেলেমেয়ে বড় হয়ে কি হবে। পরবর্তীতে যখন ঠিক করে রাখা হয় সে ইঞ্জিনিয়ার হবে তখন যদি সে ছবি গান করতে চায়, তাকে গান করতে বাধা দেওয়া হয়। মনে রাখতে হবে, প্রতিভা এমন একটি ক্ষুধা যা নিবারণ করতে হয়, যদি তাতে বাধাগ্রস্থ হয় মানসিকভাবেও সে ভেঙে পড়ে।

আমাদের দেশে নবম শ্রেণি থেকে পড়াশোনার তিনটি বিভাগ হয়ে যায়। আর বিজ্ঞান বিভাগকে অধিকতর ভাল বিষয় মনে করা হয়। যারা সবচেয়ে ভাল ফলাফল করে তাদের বিজ্ঞান বিভাগ, পর্যায়ক্রমে ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক শিক্ষা দেয়া হয়। বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের অধিকতর মর্যাদা দেয়া হয়। অভিভাবক সর্বদা সন্তানকে বিজ্ঞান নিয়ে পড়ার জন্য চাপ দিয়ে থাকেন। যদিও তার মানবিক নিয়ে পড়ার ইচ্ছা থাকে। 

প্রয়াই আমরা শুনে থাকি পড়াশোনার চাপে এবং ভাল ফলাফল না করতে পেরে আত্মহত্যা করেছে ছাত্র। কারণ বাবা মা তার নিজের প্রতিপত্তি সমাজে দেখানোর জন্য সন্তানের আশ্রয় নিয়ে থাকে। আমরা সন্তানকে প্রায়ই বলে থাকি 'আমাদের মান সম্মান তোমার হাতে'। কিন্তু একটা ফলাফলের উপর কারো মান সম্মান নর্ভর করতে পারেনা। পিতা মাতার পরেও আশেপাশে কিছু মানুষ থাকবে ফলাফল নিয়ে কটু কথা শুনানোর জন্য, পিতামাতা নিজের সন্তানের কথা না ভেবে সেই মানুষের জন্য বেশি উদ্বিগ্ন থাকেন যে তাদের কি উত্তর দিবেন।

আমরা সন্তানকে একটা বোঝা চাপিয়ে দেই যে তার, ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হতে হবে, কিন্তু সে হয়তো ছবি আকতে বা লিখতে ভালবাসে। তাকে তার পছন্দের বিষয় থেকে দূরে রেখে তাকে চিরতরে মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করে দেই। হয়তো লেখক বা চিত্রশিল্পী হলে ইতিহাসে তার নাম লেখা থাকত যা ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হয়ে সে পারবেনা। আমরা অনেকে সন্তানকে এলেম শিক্ষা দেয়ার জন্য মাদ্রাসায় ভর্তি করি হাফেজ হবার জন্য। কথায় আছে আছে হাফেজ সন্তানের পিতামাতা পরকালে ভাল থাকবেন। এলেম ও ধর্ম শিক্ষা একজন শিশুকে মানবিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে। কিন্তু নিজে পরকালে ভাল থাকার জন্য শিশু হাফেজ হওয়ার মত মেধা না থাকলেও তাকে হাফেজ হবার জন্য জোর করা উচিত নয়। নিজে পরকালে ভাল থাকার জন্য নিজের ভাল কর্ম করতে হবে। কারণ হাফেজি না পড়েও নৈতিক ও ধর্ম শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়া যায়। 

শিশুকে অন্যের সাথে তুলনা করা সবচেয় জঘন্যতম একটি উদাহরণ। মানুষ বিচিত্র,কেউ কারো মত হয়না। সন্তানকে অতি নিরাপদ রাখতে অনেক সময় তার ভাল কাজ গুলোকে আমরা বাধা দিয়ে থাকি। যেমন সমাজসেবামূলক কাজ, শিক্ষাসফর, কোন প্রতিযোগিতা, পাঠাগার বা কোন ক্লাবে যাওয়া ইত্যাদি। আমাদের ধারণা এইসবে সন্তানের পড়াশোনা বিঘ্নিত হবে এবং সন্তান অনিরাপদ থাকবে। কিন্তু পাঠ্য বইতে ব্যাবহারিক শিক্ষা সে পায়না এবং কর্মক্ষত্রেও সে পিছিয়ে যায়। তখন অন্যের সাথে তাকে তুলনা করে তাকে আঘাত করা হয়। 

নিজের কাজের ফাকে সন্তানকে সময় দেয়াটা সবচেয়ে জরুরি। বিশেষ করে পিতারা নিজের কাজের ফাকে সন্তানকে সময় দিতে ভুলে যান। মায়েরা কর্মজীবী হলে নিজের সন্তানের জন্য সময় রাখা উচিত। মায়েরা গৃহিনী হলেও ঘরের কাজে অধিক সময় ব্যয় করে ফেলেন এবং সন্তানকে সময় দেননা। নিজের কাজের সময়টুকু সন্তান কার সাথে সময় কাটায় সে মানুষটি তাকে কি শেখাচ্ছে সেদিকে লক্ষ্য রাখা জরুরি। সন্তানদের নিয়ে প্রকৃতির মাঝে ঘুরতে যাওয়া উচিত, পরিবারের সাথে কাটানো ভাল সময়গুলো তার মানসিক বিকাশে অনেক জরুরি। 

এইবার বিভাজিত পরিবারের শিশুকে নিয়ে কিছু বলা যাক। অন্য আট দশটি শিশু হতে বিভাজিত শিশুরা অন্যরকম হয়ে থাকে। সে যার কাছেই থাকুক না কেন পিতা মাতা দুইজনের সাথেও মিশতে দেয়া জরুরি। কিন্তু অনেক কারণে পিতামাতা নিজের প্রতিপত্তি তার প্রাক্তনকে দেখানোর জন্য শিশুকে অপরপক্ষের সাথে মিশতে দেয়না। সে ভুলে যায় তার প্রাক্তণ তার প্রতিপক্ষ হতে পারে কিন্তু তার সন্তানের নয়। 

বলা হয় একমাত্র পিতামাতা পৃথিবীতে স্বার্থহীন ভালবাসে। আর সেটাই সত্য পিতামাতার চেয়ে আপন আর কেউ নেই। কিন্তু অনিচ্ছাকৃত ছোট ছোট ব্যাপার গুলো খেয়াল রাখলে সন্তান আরো ভালভাবে বেড়ে উঠবে। নিজের ঘর হবে সন্তানের জন্য স্বর্গ, সে কখনো বাইরে বা ভুল মানুষের কাছে নিজের আশ্রয় খুজতে যাবেনা।