রোববার থেকে ৩০ কোম্পানির বাস ই-টিকেটিংয়ের অধীনে চলবে
প্রকাশ : 2022-11-12 15:30:34১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
রাজধানীর মিরপুরের ৩০টি কোম্পানির বাস রোববার (১৩ নভেম্বর) থেকে ই-টিকেটিংয়ের আওতায় আসছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ।
শনিবার (১২ নভেম্বর) রাজধানীর ইস্কাটন এলাকায় ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি আয়োজিত রাজধানী ঢাকার গণপরিবহনে ই-টিকেটিং পদ্ধতি চালু বিষয়ক এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান তিনি।
তিনি বলেন, রোববার থেকে মিরপুর রুটের ৩০টি কোম্পানির গাড়ি ই-টিকেটিংয়ের আওতায় চলাচল করবে৷ ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি থেকে ঢাকা শহরে চলাচলকারী ৬০ কোম্পানির বাস এবং ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ঢাকা ও ঢাকার শহরতলীর ৯৭ কোম্পানির বাস ই-টিকেটিংয়ের আওতায় চলাচল করবে৷
খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়ে আমরা দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ পেয়ে আসছি। সেগুলো দূর করার জন্য ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছে। বর্তমানে ঢাকা শহর এবং শহরতলীতে মোট ৯৭টি বাস কোম্পানি পরিচালনা করে। তাদের নিয়ে আমরা বিভিন্ন সময় সভা করেছি।
তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন সময় মোট ২১টি সার্কুলার দিয়েছি। ৯টি ভিজিল্যান্স টিম গঠন করে রাস্তায় মাসের পর মাস ডিউটি করিয়েছি এবং আমি নিজেও মাঠে ছিলাম দীর্ঘ সময়। বিশেষ করে অতিরিক্ত ভাড়ার বিষয়টি আমরা বিগত দিনে সমাধান করতে পারিনি। দীর্ঘ সময় পরে আমরা গেটলক সার্ভিস, সিটিং সার্ভিস এগুলো আমরা বন্ধ করতে পেরেছি। কিন্তু তারপরও অতিরিক্ত ভাড়ার বিষয়টি আমাদের অভিযোগে বারবার আসছিল।
তিনি বলেন, গত ২২ সেপ্টেম্বর থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধে ই-টিকেটিং পদ্ধতি চালু করা হয়। ওই সময় মিরপুরের ৮টি বাস কোম্পানিতে প্রথম পরীক্ষামূলকভাবে এটি চালু করা হয়েছিল। এ পদ্ধতিতে যাওয়ার পর দেখা গেলো মালিকদের আয় সঠিকভাবে পাচ্ছি না। একদম কমে গেছে। তাদের অনেকে বাস চালাতে আগ্রহী হলো না। পরে তাদের সঙ্গে কথা বলে ই-টিকেটিং মেশিন বাসের ভেতরে দেওয়া হল। পরীক্ষামূলকভাবে সেই কাজটি করায় দেখা গেছে আগের চেয়ে ফলাফল অনেক ভালো এসেছে। এতে করে মালিকদের আয় বেড়েছে। আগে গাড়িতে দুইজন কর্মী থাকলেও এখন সেখানে তিনজন কর্মীর প্রয়োজন হচ্ছে। এদের মধ্যে একজন চালক, হেলপার এবং কন্টাকটার।
তিনি আরও বলেন, পরিবহন মালিক সমিতির পক্ষ থেকে আমরা একটি মনিটরিং সেল গঠন করেছি ই-টিকেটিংয়ের জন্য। দুজন কর্মকর্তা এটি সমন্বয় করবেন। এর জন্য আমরা একটি হটলাইন তৈরি করেছি, যেখানে তিনটি নম্বর রয়েছে। সমিতির পক্ষ থেকে ৮ জনকে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, যারা পুরো ঢাকা শহর ঘুরে ঘুরে বিষয়টি দেখবেন। পাশাপাশি কয়েকটি কোম্পানির পক্ষ থেকে তারাও স্পেশাল চেকার রাখবেন।
তিনি বলেন, আগামীকাল রোববার থেকে মিরপুরের ৩০টি কোম্পানিকে আমরা এ টিকিটের আওতায় নিয়ে আসছি। এর জন্য সকল প্রকার প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। এরই মধ্যে মিরপুর মালিক সমিতির সেন্ট্রাল কমিটির মাধ্যমে সব কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আগামী ৩১ জানুয়ারির মধ্যে ঢাকা শহরের মধ্যে চলাচলকারি কোম্পানির বাসকে ই-টিকেটিংয়ের আওতায় আনবো। এছাড়া আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ঢাকা শহরতলীতে (গাজীপুর, সাভার, নবীনগর, ধামরাই, মুন্সিগঞ্জ) চলাচল করি ৩৭টি বাসকেও ই-টিকেটিংয়ের আওতায় আনা হবে। সুতরাং ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যেই ঢাকা শহর এবং শহরতলীতে চলাচলকারী সকল বাস ই টিকেটিংয়ের আওতায় আসবে। ঢাকা শহর এবং শহরতলীতে মোট চলাচলকারী বাসের সংখ্যা হচ্ছে ৫ হাজার ৬৫০টি। এর মধ্যে ঢাকা সিটিতে চলে ৩ হাজার ১১৪টি এবং শহরতলীতে চলে ২ হাজার ৩৩৬টি।
ই-টিকেটিং চালু হলে ঢাকা শহরের মধ্যে চলাচলকারী বাসগুলোর যে অসম প্রতিযোগিতা থাকতো সেগুলো বন্ধ হবে কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, ই-টিকেটিং চালু হলে অসম প্রতিযোগিতা বন্ধ হবে। কারণ চালকদের বেতন নির্ধারণ করা দেওয়া থাকবে। ই-টিকেটিংয়ের জন্য বর্তমান থেকে আরও অনেক বেশি টাকা নির্ধারণ করে তাদের দেওয়া হচ্ছে।
ই-টিকেট চালু হলে গাড়ির সংখ্যা কমে যায় যাত্রীদের দুর্ভোগ বাড়ে, এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ অভিযোগ সঠিক। শুরুর দিকে যখন আমরা ই-টিকেটিং রাস্তায় দেওয়া শুরু করেছি তখন মালিকরা ইনকাম ঠিকমতো পেত না। যার ফলে মালিকরা রাস্তায় গাড়ি চালাতে উৎসাহী ছিল না। পরবর্তী পর্যায়ে আমরা সাধারণ মালিকদের নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়ে বাসের ভেতর ই-টিকেটিং মেশিনটি দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি।
আপনারা তো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আগামীকাল মিরপুরে ই-টিকেটিং চালু করবেন, এরপরও যদি অনেক বাস মালিক বাস না চালাতে আগ্রহী হয় সেক্ষেত্রে মালিক সমিতির পক্ষ থেকে কি সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে-সাংবাদিকদের এমন প্রশ্রে তিনি বলেন, আমরা আগামীকাল থেকে যে কোম্পানিগুলোকে ই-টিকেটিংয়ের আওতায় নিয়ে আসছি তাদের মালিকদের সঙ্গে আমরা কথা বলে নিয়ে আসছি এবং তারা রাজি হয়েছেন। তারপরও না মানলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং তাদের অবশ্যই ই-টিকেটিংয়ের আওতায় আনা হবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের ই-টিকেটিং সফল হলে আমরা আরও আধুনিক ব্যবস্থা করবো ভবিষ্যতে।