রংপুরের কাউনিয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে গরীবের খাদ্য হিসেবে পরিচিত কাউনের চাষ

প্রকাশ : 2023-05-14 16:27:38১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

রংপুরের কাউনিয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে গরীবের খাদ্য হিসেবে পরিচিত কাউনের চাষ

কাউনের ব্যাপক চাষের কারনে এই উপজেলার নাম কাউনিয়া হয়েছে মর্মে জনশ্রুতি রয়েছে। কাউন  থেকে কাউনিয়া। রংপুরের কাউনিয়া উপজেলায় এক সময়ে ব্যাপক ভাবে কাউনের চাষ হতো। ছোট দানা বিশিষ্ট শস্যটি এ দেশে গরীবদের খাদ্য হিসেবে বিবেচিত হতো। সেই কাউনিয়ায় এখন আর কাউনের তেমন চাষাবাদ হয় না। ফলে কাউনিয়ার নাম করনের সার্থকতা ও কাউন চাষের ঐতিহ্য দিন দিন হারাতে বসেছে। সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন চরাঞ্চলের গ্রাম ঘুরে বয়স্ক মানুষের কাছ থেকে জানাগেছে, এক সময়ে কাউনিয়ায় আনাচে কানাচে বিশেষ করে চরাঞ্চলে কাউনের চাষ বেশী হতো। রংপুর আঞ্চলের মানুষের আথিতিয়তার বিশেষ স্থান করে নিয়েছিল কাউন। গ্রাম বাংলার জনপ্রিয় পায়েস, ক্ষীর, মলা, বিস্কুট তৈরীর উপাদানে কাউনের চাউলের কদর ছিল ব্যাপক, তাই ভোজন প্রিয়াসী গৃহস্থরা ধান চাষের পাশা পাশি কাউনের চাষ করতো। রংপুর অঞ্চলের রাজা জমিদার বিত্তবানদের খাবার তালিকায় প্রসিদ্ধ কাউনের চালের পায়েস ও ক্ষীর সর্বাগে শীর্ষে ছিল। বর্তমানে কৃষি বিভাগের নজরদারীর অভাবে কালের আবর্তে কাউন চাষ হারিয়ে যাচ্ছে। সাধারন মানুষের রুটি রুজি ও সময়ের ক্রমাগত পরিবর্তন ও প্রযুক্তির উৎকর্ষে কাউনের চাষকে পেছনে ফেলে নিয়ে এসেছে বছরে ৩-৪ ফসলি উৎপাদন, ফলে দিনদিন হারিয়ে যাচ্ছে কাউন চাষ। 

উপজেলার বিভিন্ন চরাঞ্চল ঘুরে দেখাগেছে হাতে গোনা দু-একটি কাউনের ক্ষেত। কিছু সৌখিন চাষি তিস্তার চরের পতিত জমিতে কাউনের চাষ করেছেন। ঢুসমারা চরের কৃষক মনসুর আলী জানান তিনি চলতি মৌসুমে ৪৬শতক জমিতে কাউনের চাষ করে সারে ৮ মন কাউন পেয়েছেন। একই চরের মফিজুল হোসেন জানান, তিনি ৩৫শতক জমিতে চাষ করে সারে ৭মন কাউন পেয়েছেন। কাউন চাষে তেমন কোন খরচ নেই, সেচ দিতে হয় না, কিটনাশক লাগে না। অল্প ইউরিয়া সার দিলেই হয়। কাউনের বাম্পার ফলন হলেও সঠিক বাজার ব্যাবস্থাপনা না থাকায় চাষিরা কাউন চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। উপজেলা কৃষি বিভাগ জানায় কাউনের তেমন চাষ না হওয়ায় এর চাষের সঠিক পরিসংখ্যান নাই। কৃষি কর্মকর্তা শাহনাজ পারভীন জানান প্রায় সব ধরনের মাটিতে কাউনের চাষ করা যায়। তবে পানি দাঁড়ায় না এমন বেলে দোঁআশ মাটিতে এর ফলন ভাল হয়। উত্তরাঞ্চলে অগ্রহায়ণ থেকে মাঘ মাস (মধ্য নভেম্বর থেকে মধ্য ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত বীজ বোনা যায়।

দেশের দক্ষিণাঞ্চলে সাধারণত অগ্রহায়ণ মাসে বীজ বোনা হয়। কাউনের শীষ খড়ের রং ধারন করলে এবং বীজ দাঁতে কাটার পর কট করে শব্দ হলে বুঝতে হবে কাটার উপযুক্ত সময় হয়। চরাঞ্চলের কৃষকদের ধান চাষের পাশা পাশি কাউন সহ ভিন্ন ভিন্ন ফসলের চাষের জন্য উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। এলাকাবাসীর দাবী কাউনিয়ার ঐতিহ্য কাউন, এ কাউন চাষ বৃদ্ধির জন্য কৃষি বিভাগ এর উদ্যোগসহ সরকারের প্রণোদনা দেওয়া প্রয়োজন।