মেয়ের চিকিৎসা আর ঋণ পরিশোধের অর্থ জোগাতে কিডনি বিক্রি করতে চায় দম্পতি
প্রকাশ : 2025-01-18 12:47:57১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
পঞ্চগড়ে অসুস্থ মেয়েকে বাঁচাতে গিয়ে ঋণগ্রস্ত এক দম্পতি নিজেদের একটি করে দুটি কিডনি বিক্রির জন্য দেওয়ালে লিফলেট সাঁটিয়ে দিয়েছে। তবে অসুস্থ মেয়ের চিকিৎসা করাতে গিয়ে ইতোমধ্যে ভিটেমাটি বিক্রি করেছেন। তাতেও মেয়ে সুস্থ না হওয়ায় বিভিন্ন এনজিও থেকে প্রায় ১৫ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে মেয়ের চিকিৎসা অব্যাহত রেখেছেন। এখন উপায়ন্তর না পেয়ে ঋণ পরিশোধে নিজেদের কিডনি বিক্রি করতে চাইছেন সদর উপজেলার কামাত কাজলদিঘী ইউনিয়নের দক্ষিণ তালমা ডিয়াবাড়ি এলাকার নবিউল্লাহ ও জাহানারা দম্পতি।
দেওয়ালে দেওয়ালে লাগানো নবীউল্লাহ'র কিডনি বিক্রির লিফলেটের ছবি এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
কামাত কাজলদীঘি ইউনিয়ন ও আশপাশের এলাকার বিভিন্ন দেওয়ালে কিডনি বিক্রির লিফলেট দেখে হতভম্ব হয়ে গেছে এলাকাবাসী। লিফলেটে লেখা, মহান রাব্বুল আলামীন আমাকে যে বিপদ দিয়েছে, এরকম বিপদ যেন না দেয় মানু্ষকে। আল্লাহ আপনি আমাকে মাফ করে দিবেন। আমি জানি জীবিত অবস্থায় মানু্ষের শরীরের যে কোন অংশ বিক্রি করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। বাঁচার কোন রাস্তা পাইনি। এরপর নিচে লিখে দেন, দুইটি কিডনী বিক্রি করতে চাই। এমন অবস্থায় সাধারন মানুষের মনকে নাড়া দিয়েছে এই কিডনি বিক্রির বিষয়ে একজন লিফলেট লাগানোর বিষযটি।
মেয়ের চিকিৎসা আর ঋণ পরিশোধের দুশ্চিন্তায় নিজেরাও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন এই দম্পতি। শারীরিক অসুস্থতার কারণে এখন কাজে যেতে পারেন না নবিউল্লাহ।নবিউল্লাহ ও জাহানারা দম্পতির ১৮ বছর বয়সী মেয়ে নিতু আক্তার ১৩ মাস বয়স থেকে থ্যালাসেমিয়ায় ভুগছেন। যার কারণে প্রায়ই অসুস্থ থাকতে হয় নিতুকে। নিতে হয় নিয়মিত রক্ত। ইচ্ছে থাকার পরও অষ্টম শ্রেণীর পর আর পড়াশোনা করতে পারেনি নিতু। নিতুর ভাই জিহাদও ভুগছে অ্যাজমাতে। দুই সন্তানের অসুস্থতা কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে বাবা-মাকে।
নিতুর মা জাহানারা বলেন, থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার কয়েক বছর পর পেটে টিউমার ধরা পড়ে নিতুর। এরপর তা অপারেশন করে অপসারণ করা হয়। তবে অভাবের সংসারে পরে আর চিকিৎসা চালিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়নি।
কান্না জড়িত কণ্ঠে নবীউল্লাহ বলেন, বাধ্য হয়ে কিডনি বিক্রির জন্য বিভিন্ন জায়গায় লিফলেট লাগিয়েছি। মানুষের সব ঋণ পরিশোধ করতে চাই। ইচ্ছে থাকলেও উপায় নেই। মেয়ের চিকিৎসায় নিঃস্ব হয়ে গেছি।এইদিকে পরিবারটির এমন দুঃসহ সময়ে সরকার ও সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে নবীউল্লাহ'র প্রতিবেশীরা।
এব্যাপারে পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক মো. সাবেত আলী বলেন বিষয়টি জেনেছি আমি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে বলেছি তাদের আমার কাছে নিয়ে আসতে বলেছি। বিষয়টি আমি দেখবো।