মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের অস্বীকার করছে না, আবার ফেরতও নিচ্ছে না
প্রকাশ : 2022-08-17 15:46:41১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
জোরপূর্বক বিতাড়িত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিকদের তাদের মাতৃভূমিতে প্রত্যাবর্তন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মিয়ানমার তাদের রোহিঙ্গা নাগরিকদের অস্বীকার করছে না। আবার তাদের ফেরতও নিচ্ছে না।
বুধবার (১৭ আগস্ট) গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ও চিলির সাবেক প্রেসিডেন্ট মিশেল ব্যাচলেট। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একথা বলেন।পরে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের শিক্ষা ও কাজের সুযোগ বাড়ানোর প্রস্তাব দেন।
এর জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা কক্সবাজারে সম্ভব নয়। ভাষানচরে এই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব। সেখানে অধিকতর ভালো মৌলিক সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে সেখানে ২০ হাজারের মতো রোহিঙ্গা স্থানাত্তর করা হয়েছে।
সাক্ষাতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, রোহিঙ্গা সংকট, জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব, নারীর ক্ষমতায়নসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করা হয়।
৭৫ পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে সামরিক শাসকদের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৫ সালের পর মানুষের মৌলিক এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন করে বাংলাদেশে দীর্ঘ দিন সামরিক শাসন ছিল। ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে সামরিক শাসকরা ন্যায় বিচার চাওয়ার পথে বাধা সৃষ্টি করেছিল।তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের পর খুনি এবং যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতিতে পুর্নবাসন করা হয়।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাবা-মাসহ পরিবারের সবাইকে হারানো এবং বিদেশে থাকায় তিনি ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা সেই হত্যাযজ্ঞ থেকে প্রাণে বাঁচার কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ওরা ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করেছিল বলে আমরা যখন দেশে ফিরে আসি তখন বিচারও চাইতে পারিনি।
চিলিতে নিপীড়ক শাসকদের সময় শেখ হাসিনার মতো তার পরিবারও নির্যাতনের শিকার হয়েছে বলে স্মরণ করেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার।মিশেল ব্যাচলেট বলেন, বঙ্গবন্ধু জাদুঘর পরিদর্শনের সময় এটি তার হৃদয় গভীরভাবে স্পর্শ করেছে।
কোভিড-১৯, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং স্যাংশন-কাউন্টার স্যাংশন সারা বিশ্বে সংকট সৃষ্টি করছে বলে একমত পোষণ করেন প্রধানমন্ত্রী এবং মিশেল ব্যাচলেট।শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ পৃথিবীর কোনো প্রান্তে কোনো যুদ্ধ চায় না।
সাক্ষাতে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার প্রধানমন্ত্রীকে জানান, তারা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কাজ করছেন।
জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সন্ত্রাসবাদ দমনের ওপর জোর দিয়ে বলেন, তার সরকার বাংলাদেশের মাটিতে কোনো ধরনের সন্ত্রাসকে প্রশ্রয় দেবে না।
চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি এবং ৬২ হাজার রিফিউজিকে ঘরে প্রর্ত্যাবর্তন এবং ১৮০০ সশস্ত্র সন্ত্রাসী সারেন্ডার করানোর কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
দেশে আর্ত-সামাজিক উন্নয়নের কথা উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, তার সরকার এখন কৃষি সেক্টর এবং অ্যাগ্রো-প্রসেসিং শিল্পের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী একে আবদুল মোমেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস এবং ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক গোয়েন লুইস।