মাদারীপুরে প্রকাশ্যে হয় নারী বেচা-কেনা, জানেনা রাজৈর পুলিশ

প্রকাশ : 2024-08-01 17:10:41১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

মাদারীপুরে প্রকাশ্যে হয় নারী বেচা-কেনা, জানেনা রাজৈর পুলিশ

মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার নটাখোলা গ্রামের নিমাই যেন নারী বেচা- কেনার মহাজন। প্রায় রাতেই মদ, গাঁজা ও নারী নিয়ে বসে আসর। এই আসরে আসে প্রভাবশালী সব শ্রেণী পেশার মানুষ। স্থানীয় চেয়ারম্যানের মদদে নিমাই এসব করছে বলে দাবী নিমাইয়ের স্ত্রীর। বিষয়টি ধামাচাপা দিতে ব্যস্ত রাজৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। আসরে আসা প্রভাবশালীদের প্রভাবে প্রভাবশালী হয়ে উঠেছে নিমাই নিজেও। তাই নিমাইয়ের বিরুদ্ধে স্থানীয় কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়না।

সরোজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার কদমবাড়ি ইউনিয়নের প্রত্যান্ত একটি গ্রাম নটাখোলা। হিন্দু অধ্যুষিত এই গ্রামটিতে খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের বাস। এখানেই বসবাস নিমাইয়ের। নিজ বাড়িতেই খুলে বসেন সাউন্ডসিস্টেমের ব্যবসা। আর এই ব্যবসার সাথে সাথে আসেপাশের গ্রামের মেয়েদের এনে তার বাড়িতে রেখে অশ্লীল নাচের আয়োজন করে। সাথে চলে মদ গাজা। এছাড়া তার কাছ থেকে মেয়ে ও সাউন্ড সিস্টেম ভাড়া নিয়ে যে কেউ যে কোন স্থানে এই আসর বসাতে পারেন। নিমাইয়ের এই ব্যবসায় স্থানীয় চেয়ারম্যানসহ রাজনীতিবিদ ও প্রশাসনের মদদ আছে বলে ভয়ে স্থানীয় কেউ কথা বলতে চায় না।

২০ বছর ধরে এই ব্যবসা করছে নিমাই। স্ত্রী বাধা দিলে তার উপর চালায় সীমাহীন অত্যাচার। বিভিন্ন স্থানে বিচার চেয়েও পায়নি কোন বিচার। বন্ধ করা যায়নি নিমাইয়ের মেয়ে আর মদের ব্যবসা। বাধ্য হয়ে দুই ছেলেকে নিয়ে বাবার বাড়ি থাকছেন স্ত্রী। চেয়ারম্যানের মদদে নিমাই এই ব্যবসা করছে বলে দাবি স্ত্রীর। অন্যদিকে ছেলে মানতে পারছেনা বাবার এই ব্যবসা তাই বাবার শাস্তি দাবি ছেলের। নিমাইয়ের স্ত্রী দিপালী রায় বলেন, আমার বিয়ে হয়েছে ২০ বছর। তখন থেকেই নিমাই এই ব্যবসা করে। আমি বাঁধা দিলে আমার উপর অত্যাচার করে। এরপর একে এক দুটি সন্তান হয় আমার। সন্তানদের দোহাই দিয়েও আমি এ কাজ করতে না বলেছি। তাতে অত্যাচারের পরিমান আরও বাড়িয়ে দেয়। বাড়ির ভিতর ছোট একটি রুমে আমাদের আটকে রেখে ঘরের মধ্যেই ২০/২৫ জন লোক নিয়ে মদ, গাঁজাসহ মেয়েদের নাচাতো। এছাড়া আরও খারাব কাজ করত। আমি স্থানীয় চেয়ারম্যান বিধানকে জানিয়েছি তিনি দেখব বলে আমাকে বিদায় করে দেয়। চেয়ারম্যানের আত্নীয় স্বজনই নিয়মিত আসা-যাওয়া করত এবং নিমাইয়ের সাথে আসরের আলাপ আলোচনা করত। লোকজন এসে চেয়ারম্যানের কথা বলতো আর নিমাই তখন আমাকে বলতো চেয়ারম্যানের কথাতো আমাকে রাখতে হবে। এ বিষয়ে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীন চৌধুরীকেও বলেছি। তিনিও বিধান চেয়ারম্যানের মতই দেখছি দেখব করত। তাই সহ্য করতে না পেরে ২ বছর হলো দুই ছেলেকে নিয়ে বাপের বাড়ি চলে এসেছি। এই নিমাইসহ যারা নিমাইকে এই ব্যবসা করতে সহযোগীতা করছে তাদের বিচার চাই।

নিমায়ের ছেলে রুদ্র রায় বলেন, বাবা মেয়ে মানুষ নিয়ে ব্যবসা করে। মানুষ আমাদের বিভিন্ন ধরণের খারাব খারাব কথা বলে। বাবা আমার মাকে অনেক অত্যাচার করেছে। আমি আমার বাবার বিচার চাই। সম্প্রতি কদমবাড়ি ফাঁড়ির সুজন নামের এক পুলিশ সদস্য রাত ১২টার দিকে নিমাইয়ের বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে আসে রাজৈর থানার পুলিশ। বিষয়টি নিমাই ও তার বাড়িতে থাকা ড্যান্সার সোনালী স্বীকার করলেও ধামাচাপা দিতে ব্যস্ত হয়ে পরেছে কদমবাড়ি ফাঁড়ি ও রাজৈর থানার কর্মকর্তারা। কদমবাড়ি পুলিশ ফাঁড়ির দায়ীত্বে থাকা কর্মকর্তা এ বিষয়ে রাজৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সাথে কথা বলতে বলেন। আর রাজৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পুরো বিষয়টি অস্বীকার করে। এমনকি নিমাই প্রকাশ্যে ব্যবসা করলেও এধরণের কোন ব্যবসা রাজৈরে হয় না বলেও তিনি জোর দিয়ে বলেন। অন্যদিকে রিপোর্ট করতে গেলে সোনালী নামের মেয়েটি গোপালগঞ্জ জেলার ভাঙ্গার হাট ফাড়ির এএস আই রাকিবকে ফোনে ধরিয়ে দেন। ফোনেই রিপোর্টটি না করার অনুরোধ করেন এএস আই রাকিব।

নিমাই বলেন, প্রায় ২০/২৫ বছর ধরে এ ব্যবসা করছি। আমার কোন অসুবিধা হয় না। থানা পুলিশসহ কেউ আমাকে কোন ডিস্ট্রাব করে না। আমার কছে একাধিক মেয়ে আছে। ১ জোড়া মেয়ে রাত ৮টা থেকে রাত ২ টা পর্যন্ত ভাড়া দেয়া হয় ৫ হাজার টাকায়। তবে নিমাইকে কারা সাহায্য করে বা কোথায় কোথায় টাকা দিতে হয় তা বলতে অস্বীকার করে। নিমাইয়ের ঘরে থাকা ড্যান্সার সোনালী জানায়, কোন রকম ঝুট ঝামেলা হলেই মেয়েদের ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। যেখানে ঝামেলা হয় সেখানের পুলিশ এসে এই ১০ হাজার টাকা নিয়ে যায়। এছাড়া আমাদের আর কোন সমস্যা হয় না। জেলার বিশেষ শাখার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর সাহা জানান, বিষয়টি গোপন সূত্রে তারা জানতে পেরেছেন। এই বিষয়ে গোপন তদন্ত শুরু হয়েছে। এরসাথে স্থানীয় প্রভাবশালী ও পুলিশের কেউ জড়িত থাকলে তাদের সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

সান