ভেড়ার মাংসে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট পেয়েছেন বাকৃবি'র এক গবেষক

প্রকাশ : 2022-05-28 09:59:36১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

ভেড়ার মাংসে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট পেয়েছেন বাকৃবি'র এক গবেষক

প্লানটেইন ঘাস ও রসুনের পাতা ব্যবহার করে ভেড়ার মাংসে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট পেয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) এক গবেষক। ১১ বছর ধরে গবেষণা চালিয়ে এ সফলতা পেয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পশুপুষ্টি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আল মামুন।

মেডিসিন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ভেড়ার মাংস ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং ক্যানসার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখবে। 

ভেড়ার উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি এবং মাংসের গুণগত মানোন্নয়নের লক্ষ্যে অধ্যাপক আল মামুন ২০০৪ সালে জাপানের ইয়াতো ইউনিভার্সিটিতে প্লানটেইন ঘাসের ওপর গবেষণা শুরু করেন। গবেষণায় সাফল্যের জন্য সেখানে প্রেসিডেন্ট ও ডিন অ্যাওয়ার্ড পান। ২০০৯ সালে জাপানে এবং ২০১৩ সালে চীনে সেরা তরুণ গবেষক হিসেবে স্বীকৃতি পান।

প্লানটেইন ঘাসের ওপর পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করে দেশে ফেরেন আল মামুন। ২০১১ সাল থেকে প্লানটেইন ঘাস এবং রসুন পাতা ব্যবহার করে ভেড়ার ওপর গবেষণা অব্যাহত রাখেন। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে সফলতার মুখ দেখেন। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১৮ ও ২০২০ সালে বেস্ট গ্লোবাল রিচার্স ইমপ্যাক্ট অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন।
 
গবেষণায় দেখা গেছে, প্লানটেইন ঘাস ও রসুনের পাতা খাওয়ানোর ফলে ভেড়ার রক্তে সাত শতাংশ অ্যান্টি অক্সিডেন্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই সঙ্গে মাংস উৎপাদন বেড়েছে ৫ থেকে ৭ শতাংশ।

২২ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের পশুপালন অনুষদের সম্মেলন কক্ষে ‘অধিক অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ভেড়ার মাংস’ শীর্ষক কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে এসব তথ্য তুলে ধরেন গবেষক ড. আল মামুন। পশুপুষ্টি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. রাখী চৌধুরীর  সভাপতিত্বে কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন বাকৃবির ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম, বিশেষ অতিথি ছিলেন কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে এম জাকির হোসেন।

আল মামুন বলেন, ‘বিভিন্ন উপাদান থেকে প্লানটেইন ঘাস ও রসুন পাতাকে কাজে লাগিয়ে গবেষণা করেছি। এটি মানবদেহের উপকারী অ্যান্টি অক্সিডেন্ট বৃদ্ধিতে কাজ করে। সেই সঙ্গে এটি ভেড়ার মাংস বৃদ্ধি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, রুমেন হিস্টোলজি, সিরাম অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এবং মাংসের গুণগত মান বৃদ্ধি করে। এই ঘাস ভেড়ার ক্ষেত্রে হিটস্ট্রোক কিংবা গরমের ধকল কমিয়ে প্রোটিন বৃদ্ধি করে। এছাড়া ইনসুলিনের সেনসিটিভিটি বৃদ্ধি করে গ্লুকোজ মেটাবলিজমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।’

তিনি বলেন, ‘খাবারে প্লানটেইন ঘাস ও রসুনের পাতা ব্যবহারে ভেড়ার ২০-২৬ শতাংশ বৃদ্ধি, ৫-৭ শতাংশ মাংস উৎপাদন বৃদ্ধি এবং ৭ শতাংশ রক্তে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট বৃদ্ধি পায়। শরীরের চর্বি এবং পেলভিক চর্বি যথাক্রমে ২৪ শতাংশ এবং ৫৬ শতাংশ হ্রাস পায়। মাংসে গুণগত মান উন্নয়নে ঔষধি ঘাসসমূহে কার্যকরী ভূমিকা পাওয়া গেছে। গবেষণায় দেখা গেছে, ভেড়ার মাংসে ১৫ শতাংশ কোলেস্টেরল কমিয়ে এবং ৩০ শতাংশ পলি-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড বাড়িয়ে দিয়েছে।’

আল মামুন আরও বলেন, ‘বৈশ্বিক উষ্ণতার জন্য দায়ী মিথেন গ্যাসের অন্যতম অংশ রুমিন্যাট প্রাণী তথা গরু, মহিষ, ভেড়া ও ছাগলের আন্ত্রিক বিপাকীয় ক্রিয়া থেকে উৎপন্ন হয়। এই ঘাস ব্যবহারে ভেড়া থেকে ১১-১৪ শতাংশ কম মিথেন গ্যাস নির্গত হয়। প্লানটেইন ঘাস ও রসুন পাতা খাবার হিসেবে ব্যবহার করে ভেড়ার মাংস উৎপাদন করলে কম কোলেস্টেরল ও অধিক অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ নিরাপদ মাংস উৎপাদন হয়।’

অধ্যাপক আল মামুনের সহযোগী হিসেবে গবেষণায় কয়েকজন নবীন গবেষক অংশ নেন। এই কাজে যুক্ত হতে পেরে খুশি তারা। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘সারাবিশ্বে ভেড়ার মাংসের মূল্য তৃতীয় অবস্থানে থাকলেও আমাদের দেশে তেমন গুরুত্ব নেই। পশুপুষ্টি বিভাগের অধ্যাপক ড. আল মামুন স্যারের গবেষণার বিষয়টি সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে পারলে ভেড়ার মাংসের জনপ্রিয়তা বাড়বে। সেই সঙ্গে মূল্যও বাড়বে। এতে কৃষকরা লাভবান হবেন।’ 

নবীন বিজ্ঞানী মেহেদি হাসান বলেন, ‘মানসম্মত ভেড়ার মাংস সবার জন্য নিশ্চিত করা গেলে নতুন প্রজন্ম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নিয়ে পৃথিবীতে জন্মাবে। এই অনুপ্রেরণা নিয়ে নতুন নতুন গবেষণা হবে।’

খাদ্য নিরাপত্তায় এই গবেষণা কার্যকরী ভূমিকা রাখবে উল্লেখ করে কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে এম জাকির হোসেন বলেন, ‌‘দেশ স্বাধীন হওয়ার পর যেখানে পাঁচ লাখ মেট্রিক টন মাংস উৎপাদনের ক্ষমতা ছিল। আজ সেখানে উৎপাদন ক্ষমতা বেড়ে ৭৪ লাখ মেট্রিক টনে দাঁড়িয়েছে। বিজ্ঞানীদের গবেষণার কারণেই দেশ মাংস উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ।’

এ বিষয়ে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন ইউনিট-২-এর বিভাগীয় প্রধান ডা. মো. খুরশেদ আলম বলেন, ‘অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ভেড়ার মাংস মানুষের শরীরে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও ক্যানসারসহ জটিল রোগ প্রতিরোধে কাজ করে।’