ভারতীয় প্রাচ্যকলা রক্ষায় চিরস্মরণীয় যামিনী রায়
প্রকাশ : 2024-04-24 17:31:40১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন সংস্কৃতির মধ্যে একটি নিজস্বতা রয়েছে। ভৌগলিক ও পরিবেশগত কারণে সংস্কৃতিগত পার্থক্য হয়ে থাকে। যার প্রভাব পরে সেখানকার মানুষের উপর, স্থাপত্য, আচার অনুষ্ঠান এবং চিত্রকর্মের উপর। ভারতীয় উপমহাদেশের সংস্কৃতি শিল্প আবহমানকাল ধরে চলে আসা একটি সম্পদ। সারাবিশ্বে ভারতের সংস্কৃতির খ্যাতি রয়েছে, অজন্তা ইলোরা, পাল পুথি চিত্র, মাটির তৈজসপ্ত্র, টেরাকোটা নানান সম্পদে পরিপূর্ণ এই অঞ্চল।
১৭৫৭ সালের পর ব্রিটিশ শাসনামলে ভারতীয় সংস্কৃতিতে পাশ্চাত্য প্রভাব পড়তে শুরু করে। ইউরোপের প্রভাবে অনেক স্থাপত্যসহ অনেক কিছু গড়ে উঠেছিল। তবে তারা বুঝাতে চাইত ভারতীয় স্থাপত্যশৈলী, চিত্রকর্ম এবং এর কৌশল সঠিক নয়, ভারতীয়দের পাশ্চাত্য কৌশল অবলম্বন করা উচিত। ধীরে ধীরে প্রাচ্যকলা থেকে পারফেশনিসম এবং মর্ডানিসমের দিকে ধাবিত হতে থাকে ভারতীয় চিত্রকর্ম। যদিও নতুন কৌশল রপ্ত করা ভারতীয় শিল্পীদের জন্য লাভজনক ছিল কিন্তু ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে থাকে সুপ্রাচীন কৌশলগুলো।
১৮৯৬ সালে কোলকাতা আর্ট স্কুলের সহকারী অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তিনিই প্রথম প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্য শিল্পকে পুনরজ্জীবিত করার উদ্যোগ নেন। তার আঁকা ভারতমাতা সর্বপ্রথম সারা ফেলে পুরো ভারতবর্ষে। এটি যেমন ভারতীয় সংস্কৃতিকে পুনরজ্জীবিত করে তেমনি ব্রিটিশদের থেকে ভারতকে স্বাধীন হওয়ার একটি প্রতিবাদের প্রতীক হিসাবে কাজ করে। তার উদ্যোগে অনেক ছাত্র ভারতীয় কৌশলে চিত্রকলা সাধনে উদ্বুদ্ধ হয়, তার মধ্যে যামিনী রায় অন্যতম। তার সফল প্রচেষ্টা প্রতি যুগে প্রতি মানুষের মনে দাগ কেটেছে।
যামিনী রায় ছিলেন একজন বাঙালি চিত্রশিল্পী। তিনি বাংলার বিখ্যাত লোকচিত্র কালীঘাট পটচিত্র শিল্পকে বিশ্বনন্দিত করে তোলেন। তিনি নিজে পটুয়া না হলেও নিজেকে পটুয়া হিসেবে পরিচয় দিতেই তিনি পছন্দ করতেন।
১৯০৬ থেকে ১৯১৪ সাল পর্যন্ত তিনি কলকাতা গভর্নমেন্ট আর্ট স্কুলে ইউরোপীয় অ্যাকাডেমিক রীতিতে পড়াশোনা করেন। আর্ট স্কুলে ইতালীয় শিল্পী গিলার্দি ও পরে অধ্যক্ষ পার্সি ব্রাউনের সংস্পর্শে এসে তিনি প্রাচ্য-প্রতীচ্যের উভয় শিল্পের কলা-কৌশলের সাথে পরিচিত হন। ইউরোপীয় অ্যাকাডেমিক রীতি শিখলেও শেষ পর্যন্ত দেশজ সরল রীতিতে চিত্র নির্মাণ করেন। এছাড়া কিছুদিন তিনি ফার্সি শিল্পীদের মতো চিত্র চর্চা করেন। এইসময় তিনি তার চিত্র চর্চার বেগ আরও বৃদ্ধি করেন। তিনি ১৬ বছর বয়সে কলকাতা আর্ট কলেজে চিত্র চর্চার জন্য ভর্তি হন।
বিদেশি ভাবধারায় প্রথম দিকে ছবি আঁকলেও পরবর্তীতে সম্পূর্ণ দেশীয় তথা গ্রামবাংলার প্রতিরূপ তার ছবিতে ফুটে উঠেছে। নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ও স্বকীয়তার লক্ষ্যে তিনি লোক ও নৃগোষ্ঠীদের সংস্কৃতি বেছে নেন। নিজস্ব বাঙালি সংস্কৃতি ও ভাবধারার জন্য তিনি গর্বিত ছিলেন। তিনি বহুবার বিদেশ থেকে আমন্ত্রণ পেলেও কখনও বিদেশে যাননি।-
“আমরা গরিব দেশের মানুষ, এত পয়সা খরচ করে ওদের দেশে যাব কেন? ওদের অনেক পয়সা, ওরা এসে আমাদেরটা দেখে যাক।”
বাংলার লোকজ পুতুল, শিশু, গ্রাম বাংলার সরল মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সুখ-দুঃখর চিত্র ইত্যাদি তিনি তার ছবির ‘ফর্ম’ হিসেবে গ্রহণ করেন।
ভারতীয় সংস্কৃতিকে সম্পদশালী করতে যেসব মানুষের কথা চিরস্মরনীয় তার মধ্যে যামিনী রায় একজন। এইসকল অমূল্য সম্পদ রক্ষা করা সকলের দায়িত্ব। বর্তমানে ব্রিটিশ আমলের মত সংস্কৃতি আজ হুমকির মুখে। যা আরো একবার ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় চেষ্টা করা হয়েছিল কিন্তু সংস্কৃতিপ্রিয় বাঙালি তাহতে দেয়নি। অতীতের মত বর্তমানেও নিজের সংস্কৃতি রক্ষার্থে এগিয়ে সকলের এগিয়ে আসা উচিত।