ব্যবসায়ীদের চাহিদা অনুযায়ী চলতি মূলধন ঋণসীমা বাড়াতে পারবে ব্যাংক
প্রকাশ : 2022-04-27 14:32:47১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
দেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রম সচল রাখার স্বার্থে গ্রাহকের সঙ্গে পরামর্শ করে চলতি মূলধন ঋণসীমা বাড়াতে পারবে ব্যাংকগুলো। ব্যবসায়ীদের দাবির প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক বুধবার (২৭ এপ্রিল) এ সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করেছে।
এর আগে বিদ্যমান চলতি মূলধন ঋণ সীমা অন্তত ৪০ শতাংশ বাড়াতে বাংলাদেশ ব্যাংককে বিশেষ অনুরোধ জানিয়েছিল ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন-এফবিসিসিআই। সেই অনুরোধের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন নির্দেশনা দিয়েছে ব্যাংকগুলোকে।
এর ফলে চলতি মূলধন ঋণসীমা সংক্রান্ত আগের সার্কুলার কার্যকর হওয়ার আগেই আরেকটি নতুন সার্কুলার জারি করলো বাংলাদেশ ব্যাংক।
নতুন নির্দেশনায় বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডেরর গতিশীলতা বজায় রাখার স্বার্থে ব্যাংক কর্তৃক ঋণগ্রহীতাদের অনুকূলে ইতোমধ্যে মঞ্জুরিকৃত চলতি মূলধন ঋণসীমা প্রয়োজনের নিরিখে অন্তর্বতীকালীন সময়ের জন্য ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে ঋণঝুঁকি নিরসন/হ্রাস করে এবং গ্রাহকের আর্থিক সক্ষমতা যাচাইপূর্বক যৌক্তিক পর্যায়ে বৃদ্ধি করার জন্য আপনাদের নির্দেশনা প্রদান করা হলো।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালসহ বিভিন্ন উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে এবং পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের অর্থনীতির স্বার্থে চলতি মূলধন ঋণসীমা বাড়ানোর সুযোগ দিলো ব্যাংকগুলোকে। অর্থাৎ ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে চলতি মূলধন ঋণ বাড়ানো যাবে।’
এর আগে চলতি এপ্রিল মাসে চলতি মূলধন ঋণসীমা অন্তত ৪০ শতাংশ বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বরাবর একটি চিঠি দেন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন।
ওই চিঠিতে এফবিসিসিআই সভাপতি লিখেন, বিরাজমান কোভিড ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালসহ অন্যান্য পণ্যের মূল্য ও জাহাজ ভাড়া প্রতিনিয়ত বাড়ছে। কাঁচামাল, শিপিং, যাবতীয় লেনদেন চার্জসহ অন্যান্য খরচ বাড়ার কারণে দেশের উৎপাদন ও ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে।
এছাড়াও আমদানি করা পণ্যের দাম বাড়ার কারণে কর আপাতন বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয় বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যসহ সব ধরনের পণ্যের দাম ক্রমাগতভাবে বাড়ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বাড়ার কারণে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনায় ব্যাঘাত ঘটছে। কাঁচামালের দাম বাড়ার কারণে ব্যবসায়ীদের ঋণসীমা উত্তীর্ণ হয়ে গেছে। ফলে আমদানিকারক ও রফতানিকারক উভয়ই স্বাভাবিক ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করতে পারছেন না। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় মূলধনসীমা বাড়ানোর বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের হস্তক্ষেপ জরুরি বলে মনে করছি।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ‘চলমান এই পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীদের ব্যাংকিং সুবিধা দেওয়ার মাধ্যমে অর্থনৈতিক কার্যক্রম সচল রাখার স্বার্থে বিদ্যমান চলতি মূলধন ঋণসীমা অন্তত ৪০ শতাংশ বাড়ানো দরকার।’ সে জন্য সব তফসিলি ব্যাংককে নির্দেশনা দেওয়ার জন্য গভর্নরকে বিশেষ অনুরোধ জানান তিনি।
নতুন নির্দেশনায় বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, সাম্প্রতিক বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে আর্ন্তজাতিক বাজারে কাঁচামালসহ বিভিন্ন উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি এবং পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে ঋণগ্রহীতাদের অনুকূলে তফসিলি ব্যাংকসমূহ কর্তৃক ইতোমধ্যে মঞ্জুরিকৃত চলতি মূলধন ঋণ সীমার সর্বোচ্চ ব্যবহার সত্ত্বেও চাহিদা মোতাবেক প্রয়োজনীয় কাঁচামালের মূল্য পরিশোধসহ উৎপাদন কার্যক্রম সম্পন্ন করা সম্ভব হচ্ছে না। এর ফলে উৎপাদন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে আমদানি-রফতানিসহ চলমান অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের গতিশীলতা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে, উৎপাদন কার্যক্রম চলমান রাখা এবং আমদানি-রফতানিসহ দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের গতিশীলতা বজায় রাখার স্বার্থে ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে ঋণ ঝুঁকি নিরসন/হ্রাস করে এবং গ্রাহকের আর্থিক সক্ষমতা যাচাইপূর্বক যৌক্তিক পর্যায়ে বৃদ্ধি করা যাবে।
এতদিন একটি গ্রুপ ফান্ডেড ও নন-ফান্ডেড মিলে একটি ব্যাংকের মূলধনের ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ ও ঋণসুবিধা পেত। এই ৩৫ শতাংশের হিসাব হতো সুদসহ।
এপ্রিল থেকে কার্যকর হলো না যে নির্দেশনা
গত জানুয়ারি মাসে জারি করা বাংলাদেশ ব্যাংক মূলধন ঋণ সংক্রান্ত যে সার্কুলার জারি করেছিল, তাতে বলা হয়েছিল, কোনও ব্যাংক তার মূলধনের ২৫ শতাংশের বেশি ঋণ কোনও কোম্পানি বা গ্রুপকে দিতে পারবে না। এই ঋণ ফান্ডেড ও নন-ফান্ডেড উভয় মিলেই। এ ক্ষেত্রে ফান্ডেড বা সরাসরি ঋণ হবে ১৫ শতাংশ। আর নন-ফান্ডেড ঋণে রফতানি খাতের ক্ষেত্রে ১০০ টাকার ঋণকে ৫০ টাকা এবং বিদ্যুৎ খাতের ক্ষেত্রে ১০০ টাকার ঋণকে ২৫ টাকা হিসাবে গণনা করতে হবে।
২০১৩ সালের অনুমোদন হওয়া ব্যাংক কোম্পানি আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নতুন করে এই নীতিমালা প্রণয়ন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই নির্দেশনা ১ এপ্রিল থেকে কার্যকর হওয়ার কথা ছিল।
আইনের সঙ্গে ঋণসীমার সামঞ্জস্য নেই—আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলসহ কয়েকটি উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠান থেকে এমন আপত্তি আসার পর কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত জানুয়ারি মাসে এই নির্দেশনা দেয়।
এই নির্দেশনায় বলা ছিল, ব্যাংক তার মূলধনের ১৫ শতাংশের বেশি ঋণ (ফান্ডেড) কোনও গ্রুপকে দিতে পারবে না, যা বড় ঋণ হিসেবে চিহ্নিত হবে। আগে সুদসহ ঋণের পরিমাণ ছিল ১৫ শতাংশ।
একইসঙ্গে বলা হয়েছিল, ৩ শতাংশের কম খেলাপি আছে এমন ব্যাংকগুলো তার মোট ঋণের ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বড় ঋণ দিতে পারবে। তবে যাদের খেলাপি ২০ শতাংশের বেশি, তাদের ঋণের ৩০ শতাংশ হবে বড় ঋণ।
আর খেলাপি ঋণ ৩-৫ শতাংশ হলে বড় ঋণ হবে ৪৬ শতাংশ, ৫-১০ শতাংশ হলে বড় ঋণ হবে ৪২ শতাংশ, ১০-১৫ শতাংশ হলে বড় ঋণ হবে ৩৮ শতাংশ আর ১৫-২০ শতাংশ হলে বড় ঋণ হবে ৩৪ শতাংশ।