বৃষ্টি, জলজট ও জলাবদ্ধতায় নাজেহাল নগরবাসীর জীবন

প্রকাশ : 2025-09-17 10:41:16১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

বৃষ্টি, জলজট ও জলাবদ্ধতায় নাজেহাল নগরবাসীর জীবন

জলাবদ্ধতা আর ঢাকা শহর যেন একই সূত্রে গাঁথা। হালকা বৃষ্টি হলেই পানি জমে যায় শহরের অলিগলিতে। পথঘাট ভেসে যায় পানিতে। জলজট আর জলাবদ্ধতার ভোগান্তি পোহাতে হয় নগরবাসীকে। প্রতি বছরই যেন রাজধানীর জলাবদ্ধতার সমস্যা তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। সরকার হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে নানান উদ্যোগ নিলেও কোনও সুফল পাচ্ছে না জনগণ।

সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) রাত থেকে শুরু হওয়া টানা বৃষ্টিতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় জলজট লেগে যায়। ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় ২৪ ঘণ্টাতেও সেই পানি নিষ্কাশন হয়নি। ফলে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা।

সরেজমিন দেখা যায় রাজধানীর লালবাগ, ধানমন্ডি, নিউমার্কেট, মিরপুর, বংশাল, দক্ষিণ যাত্রাবাড়ী, নাখালপাড়া, কাজীপাড়া-শেওড়াপাড়া, কালশী, বিমানবন্দর, গেন্ডারিয়াসহ পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় পানি জমে গেছে। জলাবদ্ধতার কারণে এসব এলাকার বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে। জলাবদ্ধতা নিরসনে সিটি করপোরেশন থেকে উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানানো হলেও আদতে সুরাহা হয়নি।

আজ সকালের দিকে এসব এলাকার অধিকাংশ সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় যান চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। ফলে অফিসগামী মানুষ, স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীরা পড়েন বিপাকে। পানি ঢুকে পড়ে অনেক দোকান ও বাসাবাড়িতে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, জলজটের কারণে দিনের শুরুতেই তাদের বেচা-বিক্রি প্রায় বন্ধ।

দক্ষিণ যাত্রাবাড়ীর স্থানীয় বাসিন্দা রাশেদা বেগম বলেন, ‘বৃষ্টি মানেই পানিবন্দি জীবন। গত কয়েক বছর ধরে সড়ক সংস্কারের নামে খোঁড়াখুঁড়ি করে সড়কের আরও বাজে অবস্থা করেছে। ড্রেনেজ সিস্টেম ঠিক না থাকায় অল্প বৃষ্টিতেই জলজট হয়। প্রতিবারই এমন হয়, কেউ দেখে না। সিটি করপোরেশনকে ফোন দেওয়ার পরেও এর কোনও সুরাহা হয় না।’

গেন্ডারিয়ার বাসিন্দা আবুল বাশার বলেন, ‘বৃষ্টিতে জীবন অভিশপ্ত হয়ে উঠেছে। আমরা বড়রা যেই ভোগান্তিতে পড়ি তারচেয়ে বেশি পড়ে আমাদের বাচ্চারা। স্কুলে যাওয়ার সময় তাদের খুব ভোগান্তি পোহাতে হয়। বেশি বৃষ্টি হলে তো পানিবন্দি থাকতে হয়। আর অল্প বৃষ্টিতে কাঁদা মাখামাখি। গেন্ডারিয়ার অধিকাংশ সড়কের বেহাল দশা। ড্রেনেজ ব্যবস্থা অচল। যার কারণে এখানকার বাসিন্দাদের বৃষ্টি হলেই দুর্ভোগ পোহাতে হয়।’

বিমানবন্দর এলাকার বাসিন্দা মির্জা সৌরভ বলেন, ‘রাজধানীর কোথাও জলাবদ্ধতা না হলেও বিমানবন্দর এলাকায় ঠিকই জলাবদ্ধতা হবে। অথচ এই এলাকায় সিটি করপোরেশনের বিশেষভাবে নজর দেওয়া উচিত। কারণ এখান দিয়ে দেশ-বিদেশের লাখো মানুষের যাতায়াত। এসব এলাকায় যদি জলাবদ্ধতা থাকে তাহলে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়।’

বিমানবন্দর এলাকার রিকশাচালক হাসান বলেন, ‘ঢাকা শহরে তো এখন ব্যাটারি রিকশার দৌরাত্ম্য। আমাদের প্যাডেল রিকশা তাদের কাছে অসহায়। বৃষ্টিতে আরও ভোগান্তিতে পড়তে হয়। রাস্তাঘাটে এতো পানি যে রিকশা চালিয়ে নেওয়া যায় না, ঠেলে নেওয়াও মুশকিল। যাত্রীও ওঠে না, আয়ও হয় না।’

এদিকে জলাবদ্ধতার বিষয়ে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, পানি নিষ্কাশনের জন্য জরুরি কর্মী মোতায়েন করা হয়েছে। কিছু এলাকায় রাস্তাঘাট সরু হওয়ায় দ্রুত পানি সরানো কঠিন। তাই সাময়িকভাবে রাজধানীর কোথাও কোথাও জলজট সৃষ্টি হয়েছে। তবে সেটা জলাবদ্ধতা নয়।

জলাবদ্ধতার বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. রাসেল রহমান বলেন, ‘সিটি করপোরেশন থেকে আমরা রাতেই পানি নিষ্কাশনের কাজ শুরু করেছি। তবে এলাকাগুলোর পুরনো ও অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা আমাদের কাজকে ব্যাহত করছে। তাছাড়া এখন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নতকরণের কাজ চলমান।’

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় এবার উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় উল্লেখযোগ্যভাবে জলাবদ্ধতা কমেছে। কিছু জায়গায় সাময়িক জলজট সৃষ্টি হয়। তবে সেটা সিটি করপোরেশনের লোকজন তাৎক্ষণিক নিরসনে কাজ করে। তাছাড়া উত্তর সিটি করপোরেশনের কোথাও যদি এমন দেখা দেয় তাহলে সিটি করপোরেশনের হটলাইনে ফোন দিলেই আমরা জলজট নিরসনে ব্যবস্থা নেব।’

ডিএনসিসি প্রশাসক আরও বলেন, ‘বিমানবন্দর এলাকায় কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্প চলমান থাকায় জলাধার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে সে এলাকায় জলাবদ্ধতা নিরসন কঠিন হয়ে পড়েছে। এসব প্রকল্প শেষ না হওয়া পর্যন্ত, বিশেষ করে জলাধার পুনরুদ্ধার না হলে, স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়। আপাতত ওই এলাকায় জলাবদ্ধতার অস্থায়ী সমাধান করা হয়েছে।’

ভবিষ্যতে স্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতা নিরসনের বিষয়ে এজাজ বলেন, ‘স্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতার সমস্যা সমাধানের জন্য প্রকৌশল বিভাগ, ড্রেনেজ সার্কেল ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগকে সমন্বিত করে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। ধানমন্ডি, নাখালপাড়া, কাজীপাড়া-শেওড়াপাড়া, মিরপুর, কালশী ও বিমানবন্দর এলাকাসহ ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে খাল খনন, নালা নির্মাণ ও পানি নিষ্কাশনের নতুন পথ তৈরির কাজ চলছে। বিশেষ করে কল্যাণপুর, বগার মা, প্যারিস ও কসাইবাড়ি খাল পুনঃখননের কাজ অব্যাহত রয়েছে।’

 

কা/আ 

সৌজন্যে : বাংলা ট্রিবিউন