বিশ শতকের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক নেতা কামাল আতাতুর্ক
প্রকাশ : 2022-11-10 13:27:17১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
"পূর্ণ স্বাধীনতার মাধ্যমে আমরা সম্পূর্ণ অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক, বিচারিক, সামরিক, সাংস্কৃতিক ও সর্বক্ষেত্রে স্বাধীনতা বোঝাতে চাই। এগুলোর মধ্যে কোনো একটিতে স্বাধীনতা বঞ্চিত হলে সমগ্র স্বাধীনতাই বিপন্ন বলে বিবেচিত হবে।"
মোস্তফা কামাল আতাতুর্ক, ১৯২১ সাল পর্যন্ত মোস্তফা কামাল পাশা এবং ১৯২১ থেকে ১৯৩৪ সাল পর্যন্ত গাজি মোস্তফা কামাল, – ১০ নভেম্বর ১৯৩৮) একজন তুর্কি ফিল্ড মার্শাল, বিপ্লবী রাষ্ট্রনায়ক, লেখক এবং তুরস্ক প্রজাতন্ত্রের জাতির জনক, যিনি ১৯২৩ থেকে ১৯৩৮ সালে তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত তুরস্কের প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ব্যাপক প্রগতিশীল সংস্কার গ্রহণ করেন, যা তুরস্ককে একটি ধর্মনিরপেক্ষ, শিল্পায়িত দেশে উন্নত করে।তিনি আদর্শগতভাবে একজন ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী ও জাতীয়তাবাদী ছিলেন এবং তাঁর নীতি ও সামাজিক-রাজনৈতিক তত্ত্ব আতাতুর্কবাদ নামে পরিচিত পায়। সামরিক ও রাজনৈতিক কৃতিত্বের কারণে আতাতুর্ককে ২০ শতকের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক নেতা হিসেবে গণ্য করা হয়।
আতাতুর্ক প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় গ্যালিপলির যুদ্ধে (১৯১৫) উসমানীয় তুর্কিদের বিজয় নিশ্চিত করায় তাঁর ভূমিকার জন্য লোকদৃষ্টিতে আসেন। উসমানীয় সাম্রাজ্যের পরাজয় ও বিলুপ্তির পর তিনি তুর্কি জাতীয় আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন, যা বিজয়ী মিত্রশক্তির মাঝে তুরস্কের মূল ভূখণ্ডের বিভাজন প্রতিহত করে। বর্তমান তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায় একটি অস্থায়ী সরকার প্রতিষ্ঠা করে তিনি মিত্রশক্তির প্রেরিত বাহিনীকে পরাজিত করেন, এইভাবে বিজয়ী হন যা পরবর্তীতে তুরস্কের স্বাধীনতা যুদ্ধ নামে পরিচিত হয়। পরবর্তীকালে তিনি ক্ষয়িষ্ণু উসমানীয় সাম্রাজ্যের বিলুপ্তি ঘটান এবং তাঁর স্থলে তুর্কি প্রজাতন্ত্রের ভিত্তি ঘোষণা করেন।
নবগঠিত তুর্কি প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি হিসাবে আতাতুর্ক একটি আধুনিক, প্রগতিশীল এবং ধর্মনিরপেক্ষ জাতিরাষ্ট্র গঠনের চূড়ান্ত লক্ষ্যে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংস্কারের জন্য একটি কঠোর কর্মসূচি শুরু করেছিলেন। তিনি প্রাথমিক শিক্ষাকে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক করেন, সারা দেশে হাজার হাজার নতুন স্কুল খোলেন। তিনি পুরোনো উসমানীয় তুর্কি বর্ণমালা প্রতিস্থাপন করে লাতিন ভিত্তিক তুর্কি বর্ণমালাও প্রবর্তন করেন। আতাতুর্কের রাষ্ট্রপতিত্বকালে তুর্কি নারীরা সমান নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার লাভ করে। বিশেষ করে ৩ এপ্রিল ১৯৩০ তারিখে ১৫৮০ নং আইনের মাধ্যমে স্থানীয় নির্বাচনে নারীদের ভোটাধিকার দেওয়া হয় এবং কয়েক বছর পর ১৯৩৪ সালে তাঁরা পূর্ণ সার্বজনীন ভোটাধিকার লাভ করে।
তাঁর সরকার তুর্কিকরণের নীতি গ্রহণ করে, তুর্কি পতাকার ছায়ায় একটি সমজাতিক, ঐক্যবদ্ধ এবং সর্বোপরি ধর্মনিরপেক্ষ জাতি গঠনের চেষ্টা করেছিল। আতাতুর্কের অধীনে কিছু অবশিষ্ট সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীদের জনসমক্ষে তুর্কি ভাষায় কথা বলতে বলা হয়েছিল, কিন্তু একই সময়ে তাঁদের নিজস্ব ভাষা বজায় রাখার অনুমতিও দেওয়া হয়েছিল; অতুর্কি উপনাম ও সংখ্যালঘুদের নামের তুর্কি অনুবাদ অনুসারে একটি তুর্কি ডাকনাম গ্রহণ করতে আদেশ দেওয়া হয়েছিল।[১৫][১৬] আধুনিক তুর্কি প্রজাতন্ত্র নির্মাণে তাঁর ভূমিকার স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৩৪ সালে তুর্কি আইনসভা তাঁকে আতাতুর্ক উপাধিতে ভূষিত করে, যার অর্থ "তুর্কিদের জনক"। তিনি ১০ নভেম্বর ১৯৩৮ তারিখে ৫৭ বছর বয়সে ইস্তাম্বুলের দোলমাবাচে প্রাসাদে মৃত্যুবরণ করেন; তাঁর দীর্ঘকালীন প্রধানমন্ত্রী ইসমত ইনোনু রাষ্ট্রপতি হিসাবে তাঁকে স্থলাভিষিক্ত করেন এবং একটি রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার মাধ্যমে তাঁকে সম্মানিত করা হয়।
১৯৮১ সালে আতাতুর্কের জন্মের শতবার্ষিকীতে তাঁর স্মৃতিকে জাতিসংঘ ও ইউনেস্কো সম্মানিত করেছিল, সালটিকে বিশ্ব আতাতুর্ক বর্ষ হিসাবে ঘোষণা করে এবং আতাতুর্ক শতবর্ষে রেজোল্যুশন গ্রহণ করে, যেখানে তাঁকে "ঔপনিবেশিকতা ও সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে প্রদত্ত প্রথম সংগ্রামের নেতা" হিসেবে বর্ণনা করা হয় এবং যিনি "জনগণের মাঝে বোঝাপড়া এবং বিশ্বের বিভিন্ন জাতির মধ্যে টেকসই শান্তির ধারণার অসাধারণ প্রবর্তক এবং তিনি সারাজীবন মানুষের মাঝে বিভেদ ছাড়াই সম্প্রীতি ও সহযোগিতার বিকাশের জন্য কাজ করেছেন"। আতাতুর্ককে বিশ্বমুখী পররাষ্ট্রনীতি এবং ইরান, যুগোস্লাভিয়া, ইরাক ও গ্রিসের মতো প্রতিবেশী দেশগুলির সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের পাশাপাশি বলকান চুক্তি করার জন্যও কৃতিত্ব দেওয়া হয় যা সম্প্রসারণবাদী ফ্যাসিবাদী ইতালির আগ্রাসনকে প্রতিহত করেছিল।