বিশ্ব হিমোফিলিয়া দিবস
প্রকাশ : 2023-04-17 13:19:04১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
হিমোফিলিয়া একটি রক্তক্ষরণজনিত জন্মগত রোগ, যা বংশানুক্রমে ছেলেদের হয়ে থাকে। স্বাভাবিকভাবে শরীরের কোনো জায়গায় আঘাত পেলে বা সামান্য কেটে গেলে ওই স্থান থেকে রক্তক্ষরণ হতে থাকে, যা স্বতঃস্ফূর্তভাবে বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু হিমোফিলিয়া রোগীর ক্ষেত্রে সহজে রক্তক্ষরণ বন্ধ হয় না অথবা বিলম্বিত হয়। সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা না নিলে জীবনের মারাত্মক ঝুঁকি থাকে। হিমোফিলিয়া কেন হয় : মানবদেহে একটি X ও অন্যটি Y ক্রোমোজম থাকলে সে হয় ছেলে (46,XY) আর যদি দুটিই X ক্রোমোজম থাকে তাহলে সে হয় মেয়ে (46,XX)। X ক্রোমোজমে F8 ও F9 নামক জিন থাকে, যা F-VIII ও F-IX নামক ক্লোটিং প্রোটিন তৈরি করে। এই ক্লোটিং প্রোটিন রক্তের সাদা অংশে পরিমাণমতো থাকে। ফলে আপনাআপনি রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়। যাদের রক্তে এই ক্লোটিং প্রোটিন কম থাকে, তাদের রক্ত পড়া বন্ধ হয় না অথবা বিলম্বিত হয়। তারাই হিমোফিলিয়ার রোগী। ছেলেদের দেহে যেহেতু একটামাত্র X ক্রোমোজম থাকে এবং এই একমাত্র X ক্রোমোজম যদি অসুস্থ/defect থাকে, তাহলে F-VIII/F-IX তৈরি হয় না। ফলে ছেলেরাই হিমোফিলিয়ার রোগী হয়। আর মেয়েদের দেহে যেহেতু দুটি X ক্রোমোজম থাকে, তাই একটি X অসুস্থ/defect হলেও অন্য X সুস্থ থাকায় পর্যাপ্ত F-VIII/F-IX তৈরি হয়। তাই সাধারণত মেয়েরা হিমোফিলিয়ার রোগী হয় না, রোগের বাহক হয়। তবে ১. Lyonisation/inactivation of healthy X chromosome হলে, ২. বাবা রোগী ও মা বাহক হলে অথবা ৩. Turner syndrome (45,XO) হলে মেয়েরাও রোগী হতে পারে। তাই হিমোফিলিয়ার রোগীর সঙ্গে মামাতো, খালাতো প্রভৃতি বোনের বিয়ে হলে ছেলে ও মেয়ে উভয়েরই রোগী হওয়ার ঝুঁকি থাকে। তবে পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, প্রতি তিনজন হিমোফিলিয়ার রোগীর মধ্যে অন্তত একজন বংশানুক্রমে সঞ্চারিত না হয়ে নতুনভাবে আক্রান্ত হয়। হিমোফিলিয়ার লক্ষণ : বাচ্চা ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর নাভি থেকে রক্ত পড়া, যখন হামাগুড়ি দিতে শেখে তখন আপনাআপনি হাঁটু, কনুই, পায়ের গোড়ালি ফুলে যাওয়া, খেলাধুলার সময় সামান্য আঘাতে মাংসপেশিতে কালো কালো দাগ পড়া, জয়েন্ট ফুলে যাওয়া। দাঁত পড়ার সময় অতিরিক্ত রক্তপড়া, খতনা করার সময় প্রচুর রক্তক্ষরণ হওয়া প্রভৃতি। প্রতিটি লক্ষণ শুরু হলেই হাসপাতালে যেতে হয়।
প্রতিরোধ : বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের genetic testing, genetic counseling I prenatal test (amniocentesis) করে অনাগত সন্তান রোগী না বাহক তা নিশ্চিত হয়ে হিমোফিলিয়ার আক্রান্তের সংখ্যা কমানো যায়। দেশেই এসব পরীক্ষা করা হচ্ছে। হিমোফিলিয়া রোগীকে পুরোপুরি সুস্থ করানোর কোনো চিকিৎসা এখনো আবিষ্কার হয়নি। তবে জিন থেরাপি গবেষণায় রয়েছে। সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে যেমন নিয়মমাফিক বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত F-VIII/F-IX শিরায় ইঞ্জেকশন নিয়ে, রক্তের সাদা অংশ (FFP, Cryoprecipitates) নিয়ে, সঠিক ব্যায়াম করে মোটামুটিভাবে স্বাভাবিক জীবনযাপন করা গেলেও চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল, যা অনেকের পক্ষেই সম্ভব হয় না। তাই সচেতনতার মাধ্যমে প্রতিরোধ করাই উত্তম।
নিষেধ : ১. আঘাত পাওয়ার আশঙ্কা আছে এমন খেলাধুলা নিষেধ, ২. মাংসে ইঞ্জেকশন দেওয়া নিষেধ, ৩.. বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের/রক্ত রোগ বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধান ছাড়া ছোট থেকে বড় সব অপারেশন নিষেধ, ৪. Anticoagulants নিষেধ।
রাণী ভিক্টোরিয়া হিমোফিলিয়ার বাহক ছিলেন এবং তার বংশে অনেকেই এই রোগে আক্রান্ত হয়, তাই হিমফিলিয়াকে রাজকীয় রোগ বলা হয়ে থাকে।