বিদ্রোহী কবি নজরুলের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত ওসমান হাদি

প্রকাশ : 2025-12-20 15:53:24১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

বিদ্রোহী কবি নজরুলের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত ওসমান হাদি

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শহীদ শরিফ ওসমান হাদির দাফন সম্পন্ন হয়েছে। শ‌নিবার (২০ ডিসেম্বর) বিকেল ৩টা ২০ মিনিটের দি‌কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধি চত্বরে তা‌কে দাফন করা হয়।

গোটা বাংলাদেশ শহীদ শরিফ ওসমান হাদির শেখানো মন্ত্রে উজ্জীবিত হবে- বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শহীদ শরিফ ওসমান হাদির জানাজায় অংশ নিতে এসে প্রধান উপদেষ্টা এ কথা বলেন। 

জানাজায় অংশ নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, লাখো মানুষ হাদির কথা শুনতে এসেছে, আমরা হাদিকে বিদায় দিতে আসিনি, হাদির শেখানো মন্ত্র যেন বাংলাদেশের মানুষ বুকে ধারণ করে সে জন্য এসেছি। 

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, হাদি আমাদের বুকের ভেতর আছে। বাংলাদেশ যতদিন আছে, বাংলাদেশের মানুষের বুকের মধ্যে থাকবে হাদি।   

তিনি এ সময় বারবার বলেন, বলো বীর চির উন্নত মম শির, হাদি আমাদের মাথা নত না করার মন্ত্র শিখিয়ে গেছে, এ মন্ত্র আমাদের অন্তরে থাকবে- হাদির শেখানো এই মন্ত্রে উজ্জীবিত হবে বাংলাদেশ। 

এর আগে, সকালে ওসমান হাদির লাশের ময়নাতদন্ত সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে সম্পন্ন হয়। পরে তার লাশ আবারও নেওয়া হয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে। সেখানে গোসল শেষে সহযোদ্ধা ও সমর্থকদের অংশগ্রহণে মিছিলসহ লাশ নিয়ে নিয়ে আসা হয় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায়।  

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শহীদ শরীফ ওসমান হাদির জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (২০ ডিসেম্বর) দুপুর আড়াইটায় জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় লাখো মানুষের উপস্থিতিতে ওসমান হাদির জানাজা নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। 

ওসমান হাদির জানাজার নামাজে ইমামতি করেন তার বড় ভাই ড. মাওলানা আবু বকর সিদ্দিক। জানাজায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানসহ বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

ওসমান হাদির নামাজে জানাজায় অংশ নিতে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজা ও মানিক মিয়া এভিনিউ এলাকায় লাখো মানুষের ঢল নামে। খামারবাড়ি থেকে আসাদ গেট পর্যন্ত পুরো এলাকা এখন জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। 

জানাজার আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস, ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন। বক্তব্য দেন ওসমান হাদির বড় ভাই আবু বকর সিদ্দিক। বক্তব্য দেওয়ার সময় তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। এ সময় উপস্থিত মুসল্লিরা চোখে পানি রাখতে পারেননি। পরে হাদির বড় ভাই আবু বকর সিদ্দিক জানাজার ইমামতি করেন।

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্রের জানাজা ঘিরে সকাল থেকেই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছাত্র-জনতা এবং সাধারণ মানুষ দলে দলে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ এলাকায় জড়ো হতে শুরু করেন। দুপুর ১২টা বাজার আগেই পুরো মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়।

আমরা সবাই হাদি হবো, যুগে যুগে লড়ে যাবো’ এবং ‘হাদি ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দেব না’ এমন সব সংকল্পবদ্ধ স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। সবার চোখে জল আর মুখে প্রিয় নেতাকে হারানোর শোক থাকলেও বিচার পাওয়ার দাবিতে সবাই সোচ্চার।

হাদির জানাজাকে কেন্দ্র করে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ ও এর আশপাশের সকল প্রবেশ পথে নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্যের পাশাপাশি র‍্যাব ও আনসার মোতায়েন করা হয়েছে। বিশেষ টহলে রয়েছে সেনাবাহিনী। 

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ১ হাজার বডি ওর্ন ক্যামেরাসহ অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করে পুলিশ প্রশাসন।এর আগে সহযোদ্ধা ও সমর্থকদের অংশগ্রহণে একটি বিশাল শোক মিছিল নিয়ে হাদির মরদেহ সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় আনা হয়।

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণার পরদিন রাজধানীর বিজয়নগরের বক্স কালভার্ট রোড এলাকায় মোটরসাইকেলে আসা দুই সন্ত্রাসীর গুলিতে মারাত্মক আহত হন ওসমান হাদি। রিকশায় থাকা অবস্থায় তার মাথায় গুলি লাগে। প্রথমে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, পরে অবস্থার অবনতি হলে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে পাঠানো হলে সেখানে ১৮ ডিসেম্বর রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে মারা যান তিনি।

গতকাল শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৬টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আনা হয় ওসমান হাদির মরদেহ। সেখান থেকে সরাসরি জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের হিমঘরে নেওয়া হয় লাশ।

আজ সেখান থেকে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ নেওয়া হয় সোহরাওয়ার্দী মেডিকেলে। ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ নেওয়া হয় জাতীয় সংসদ সংলগ্ন মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে। জানাজার পর মরদেহ নেওয়া হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। এরপর নজরুল ইসলামের পাশে দাফন করা হবে জুলাইযোদ্ধা ওসমান হাদিকে।