বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র নির্মাতা সত্যজিৎ রায়
প্রকাশ : 2023-05-02 12:29:45১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
সত্যজিৎ রায় ছিলেন একজন ভারতীয় চলচ্চিত্র নির্মাতা, চিত্রনাট্যকার, শিল্প নির্দেশক, সংগীত পরিচালক এবং লেখক। তাঁকে বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র নির্মাতাদের একজন হিসেবে গণ্য করা হয়। সত্যজিতের জন্ম কলকাতা শহরে সাহিত্য ও শিল্প সমাজে খ্যাতনামা রায় পরিবারে। তার পূর্বপুরুষের ভিটা ছিল তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের কিশোরগঞ্জে [বর্তমানে বাংলাদেশ] কটিয়াদী উপজেলার মসূয়া গ্রামে। তিনি কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ ও শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রতিষ্ঠিত বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। সত্যজিতের কর্মজীবন একজন বাণিজ্যিক চিত্রকর হিসেবে শুরু হলেও প্রথমে কলকাতায় ফরাসি চলচ্চিত্র নির্মাতা জঁ রনোয়ারের সাথে সাক্ষাৎ ও পরে লন্ডন শহরে সফররত অবস্থায় ইতালীয় নব্য বাস্তবতাবাদী চলচ্চিত্র লাদ্রি দি বিচিক্লেত্তে দেখার পর তিনি চলচ্চিত্র নির্মাণে উদ্বুদ্ধ হন।
চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে সত্যজিৎ ছিলেন বহুমুখী এবং তার কাজের পরিমাণ বিপুল। তিনি ৩৭টি পূর্ণদৈর্ঘ্য কাহিনীচিত্র, প্রামাণ্যচিত্র ও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। তার নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র পথের পাঁচালী (১৯৫৫) ১১টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করে, এর মধ্যে অন্যতম ১৯৫৬ কান চলচ্চিত্র উৎসবে পাওয়া “শ্রেষ্ঠ মানুষে-আবর্তিত প্রামাণ্যচিত্র” [Best Human Documentary] পুরস্কার। পথের পাঁচালী, অপরাজিত ও অপুর সংসার – এই তিনটি একত্রে অপু ত্রয়ী নামে পরিচিত, এবং এই চলচ্চিত্র-ত্রয়ী সত্যজিতের জীবনের শ্রেষ্ঠ কর্ম হিসেবে বহুল স্বীকৃত। চলচ্চিত্র মাধ্যমে সত্যজিৎ চিত্রনাট্য রচনা, চরিত্রায়ন, সঙ্গীত স্বরলিপি রচনা, চিত্রগ্রহণ, শিল্প নির্দেশনা, সম্পাদনা, শিল্পী-কুশলীদের নামের তালিকা ও প্রচারণাপত্র নকশা করাসহ নানা কাজ করেছেন। চলচ্চিত্র নির্মাণের বাইরে তিনি ছিলেন একাধারে কল্পকাহিনী লেখক, প্রকাশক, চিত্রকর, গ্রাফিক নকশাবিদ ও চলচ্চিত্র সমালোচক। বর্ণময় কর্মজীবনে তিনি বহু আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন, যার মধ্যে বিখ্যাত হল ১৯৯২ সালে পাওয়া একাডেমি সম্মানসূচক পুরস্কার (অস্কার), যা তিনি সমগ্র কর্মজীবনের স্বীকৃতি হিসেবে অর্জন করেন। তিনি এছাড়াও ৩২টি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, ১টি গোল্ডেন লায়ন, ২টি রৌপ্য ভল্লুক লাভ করেন।
তিনি বেশ কয়েকটি ছোট গল্প এবং উপন্যাস রচনা করেছেন, প্রাথমিকভাবে শিশু-কিশোরদের পাঠক হিসেবে বিবেচনা করে। কল্পবিজ্ঞানে তার নির্মিত জনপ্রিয় কাল্পনিক চরিত্র গোয়েন্দা ফেলুদা এবং প্রোফেসর শঙ্কু। সত্যজিৎ অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৯২ সালে ভারত সরকার তাঁকে দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার ভারত রত্ন সম্মাননা প্রদান করে। সত্যজিৎ ভারত রত্ন এবং পদ্মভূষণসহ সকল মর্যাদাপূর্ণ ভারতীয় পুরস্কার লাভ করেছেন।
২০০৪ সালে, বিবিসির সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি তালিকায় সত্যজিৎ ১৩তম স্থান লাভ করেছিলেন। হৃদযন্ত্রের জটিলতার কারণে ১৯৯২ সালের ২৩ এপ্রিল সত্যজিৎ মৃত্যুবরণ করেন।
সত্যজিৎ রায় তার জীবদ্দশায় প্রচুর পুরস্কার পেয়েছেন। তিনিই দ্বিতীয় চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব যাঁকে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় সাম্মানিক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে। প্রথম চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব হিসেবে অক্সফোর্ডের ডিলিট পেয়েছিলেন চার্লি চ্যাপলিন। ১৯৮৭ সালে ফ্রান্সের সরকার তাকে সেদেশের বিশেষ সম্মনসূচক পুরস্কার লেজিওঁ দনরে ভূষিত করে। ১৯৮৫ সালে পান ভারতের সর্বোচ্চ চলচ্চিত্র পুরস্কার দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার। ১৯৯২ সালে মৃত্যুর কিছুদিন পূর্বে একাডেমি অফ মোশন পিকচার আর্টস অ্যান্ড সাইন্সেস তাকে আজীবন সম্মাননাস্বরূপ একাডেমি সম্মানসূচক পুরস্কার প্রদান করে। মৃত্যুর কিছুদিন পূর্বেই ভারত সরকার তাকে প্রদান করেন দেশের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান ভারতরত্ন। সেই বছরেই মৃত্যুর পরে তাকে মরণোত্তর আকিরা কুরোসাওয়া পুরস্কার প্রদান করা হয়। প্রয়াত পরিচালকের পক্ষে এই পুরস্কার গ্রহণ করেন শর্মিলা ঠাকুর।