বাম পা আগে দিন!
প্রকাশ : 2022-03-08 11:45:39১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
যাত্রীরা নামতে গেলেই হেল্পার যখন বুঝেন যাত্রী অজ্ঞ তখন চেচিয়ে বলেন, বাম পা আগে দিন। অনেকেই যে কোন কাজে ডান পা আগে বাড়ান ধর্মীয় কারণে। সেটা করতে গিয়ে যাতে হুমড়ি খেযে না পড়েন এজন্যই হেল্পার সতর্ক করে দেন। তারপরেও কিছু উজবুক যাত্রী ঠিকই ডান পা বাড়িয়ে লাফ দেন এবং হুমড়ি খেয়ে পড়েন। তো বাস থেকে আগে বাম পা দিয়ে নামতে হয় কেন?
বাস থেকে নামার সময় আমরা সামনে দিকে দৌড়ে এগিয়ে যাই। কেন? অর্থাৎ আমরা সামনের দিকে লাফ দেই। যদি পেছনের দিকে লাফ দিতাম তো কি ঘটতো?
আমরা সামনে-পিছনে যে দিকেই লাফাই না কেন, পড়ে যাওয়ার আশঙ্কাটা থেকেই যাবে। আমাদের পা যখন মাটি স্পর্শ করে থেমে পড়ে, তখনও কিন্তু আমাদের শরীরের অন্যান্য অংশগুলো সামনের দিকে এগুতে থাকে। পিছন দিকে না লাফিয়ে সামনের দিকে লাফালে আমাদের দেহাংশগুলো আরো বেশি গতিতে এগিয়ে যায়। কিন্তু পিছনের চেয়ে সামনে লাফানো অনেক নিরাপদ। সেক্ষেত্রে আমরা টাল সামলাতে যান্ত্রিকভাবেই একটা পা আগে বাড়িয়ে দেই বা কয়েক পা দৌড়ে এগিয়ে যাই। তাতে পড়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা পাই।
আমরা যখন চলন্ত বাসে থাকি তখন আমাদের মধ্যে গতি জড়তা তৈরি হয়। বাসের সাথে আমাদের শরীরও চলতে থাকে। সড়ক চূড়ান্ত মসৃণ হলে আমরা বুঝতেও পারবো না যে চলছি। এ কারণেই পৃথিবী লক্ষ কিলোমিটারের বেশি বেগে চলার পরেও আমরা বুঝতে পারি না। যখন চলন্ত বাস থেকে পা মাটিতে পড়ে তখন পায়ের পাতা স্থির হয়ে গেল কিন্তু আমাদের সারা শরীরে থাকা গতি জড়তা আমার সামনের দিকে ধাবিত করে। আমরা সামনের দিকে একটু দৌড়ে টাল ঠিক রাখি। ডান পা আগে দিলে তা গাড়ির নিকটে নামাতে হয় তাই টাল ঠিক রাখার জন্য দৌড়ানো সম্ভব হয় না। তাতে ডান পা গাড়ির চাকার নিচে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে। আর বাম পা আগে নামালে তা গাড়ি থেকে দূরে থাকে বলে সামনের দিকে ভালমতো দৌড়ানো যায়।
চলন্ত গাড়ি থেকে একটি কাচের বোতল বা কোন দ্রব্য নামাতে চাইলে কিন্তু উল্টোটা করতে হবে। জড়তার সূত্রানুয়ায়ী সামনের দিকে দ্রব্য ছূড়ে মারলে গাড়িতে থাকা অবস্থায় বস্তুটির গতি জড়তার সাথে ছূড়ে মারার গতি যোগ হয়ে আরো অধিক গতিতে তা ভূমিতে আছড়ে পড়বে। আর পেছনে ফেললে বস্তুটির গতি জড়তা থেকে ছূড়ে মারার গতি বাদ গিয়ে কম গতিতে আছড়ে পড়বে। ফলে বস্তুটির রক্ষা পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে। বাসের ছাদ থেকে লাফ দিতে চাইলে অবশ্য পেছনের দিকে লাফ দেয়া কম ক্ষতিজনক হবে।
ন্যাশনাল জিওগ্রাফির প্রোগাম ‘সাইন্স অফ স্টুপিড’ এ আমরা বিভিন্ন রকম বিজ্ঞানের ব্যাখ্যা দেখি। বাস্তবিক পৃথিবীর সব বস্তুগত ঘটনাই পদার্থ বিদ্যার সূত্র মেনে চলে।