বাগেরহাটে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া যন্ত্রপাতি ক্রয়ে নয়-ছয়ের অভিযোগ

প্রকাশ : 2024-09-26 19:39:59১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

বাগেরহাটে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া যন্ত্রপাতি ক্রয়ে নয়-ছয়ের অভিযোগ

বাগেরহাটে মাধ্যমিক পর্যায়ের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া শ্রেনিকক্ষ সৃজনের জন্য কম্পিউটারসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ক্রয়ে নয়-ছয়ের অভিযোগ উঠেছে। নিম্নমানের যন্ত্রপাতি বাজারদরের থেকে অতিরিক্ত দামে কিনে বড় অংকের টাকা তছরুপের ঘটনা ঘটেছে।সরকারি টাকায় যন্ত্রপাতি বা প্রয়োজনীয় মালামাল ক্রয়ের ক্ষেত্রে আরও বেশি সতর্ক হওয়ার আহবান জানিয়েছেন সচেতন মহল।

বাগেরহাট জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসসূত্রে জানাযায়, ২০২৪ সালের প্রথম দিকে মাল্টিমিডিয়া শ্রেনিকক্ষ সৃজনের জন্য বাগেরহাট জেলায় মাধ্যমিক পর্যায়ের ১১৬টি প্রতিষ্ঠান মন্ত্রণালয় থেকে ২ লক্ষ ৪৫ হাজার টাকা পায়। এর মধ্যে সব থেকে বেশি বাগেরহাট সদর উপজেলায় পেয়েছে ৩২টি প্রতিষ্ঠান। প্রাপ্ত টাকায় একটি ডেক্সটপ কম্পিউটার, একটি ৬৫ ইঞ্চি স্মার্ট টেলিভিশন, একটি ইউপিএস, একটি পেনড্রাইভ, একটি ওয়াইফাইরাউটার ক্রয়ের জন্য ২ লক্ষ ৪৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর আগেও জেলার বিভিন্ন মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একই পরিমান যন্ত্রপাতি ক্রয়ের জন্য একই ধরণের বরাদ্দ পেয়েছে। এর মধ্যে বাগেরহাট সদর উপজেলার ৩২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রনজিৎপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, চুলকাঠি ঘনশ্যামপুর মাধ্যমিক বালিকা  বিদ্যালয়, শহীদ নায়েক আ: জব্বার মাধ্যমিক বিদ্যালয়, চুলকাটি ঘনশ্যামপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ ১৫টি বিদ্যালয় খুলনার একটি কম্পিউটার প্যালেস নামের একটি প্রতিষ্ঠান থেকে এসব পন্য ক্রয় করেন।অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের ক্রয় ভাউচারে দেখা যায়, এসব পন্য ক্রয়ের জন্য ২ লক্ষ ৪৪ হাজার ৩০০ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। যেখানে একটি ডেক্সটপ কম্পিউটারের দাম দেখানো হয়েছে ১ লক্ষ ১০ হাজার ৩০০ টাকা, ৬৫ ইঞ্চি স্মার্ট ব্রান্ডের স্মার্ট টিভি ১ লক্ষ ২০ হাজার ৭০০ টাকা, ইউপিএস ৬ হাজার ৪০০ টাকা, পেনড্রাইভ ১ হাজার ৫০০ টাকা এবং রাউটার ৫ হাজার ৪০০ টাকা।

কিন্তু শিক্ষকদের দাবি এসব পন্যের বাজারদর আরও অনেক কম। এখানে একটা বড় অংকের টাকা যারা ক্রয়ের সাথে জড়িত টাকা আত্মসাত করেছিলেন।

রনজিৎপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাল্টিমিডিয়া শ্রেনি কক্ষ ঘুরে দেখা যায়, সেখানে একটি চায়না ব্রান্ডের স্মার্ট টিভি এবং একটি কাঠের টেবিলের উপর একটি কম্পিউটার রয়েছে। দেখেই বোঝা যায় ওই শ্রেনিকক্ষে আসলে ক্লাস হয় না।পন্যের মানও নিম্নমানের মনে হয়। তবে বিদ্যুৎ না থাকায় কম্পিউটার খুলে দেখাতে পারেননি প্রধান শিক্ষক দিপক চন্দ্র দাস।

তিনি বলেন, কয়েক বছর আগে বিদ্যালয়ের ফান্ড থেকে প্রিন্টারসহ একটি কম্পিউটার কিনেছিলাম ৫০ হাজার টাকারও কম ব্যয় হয়েছিল। এর পরে আর কখনও এসব পন্য ক্রয় করিনি। তবে এখন মনে হচ্ছে এইসব পন্যের দাম এত বেশি না। আমরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি। ক্রয়ের ক্ষেত্রে মধ্যস্ততাকারীও ছিলেন বলে দাবি করেন তিনি।

পার্শ্ববর্তী চুলকাটি ঘনশ্যামপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুশীল কুমার বিশ্বাস বলেন, এসব পন্য ক্রয়ের আগে সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও শহীদ নায়েক আ: জব্বার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খান রেজাউল ইসলাম বেশকয়েকটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিয়ে তার কার্যালয়ে একটি সভা করেছিলেন। ওই সভায় ২ জন কম্পিউটার ব্যবসায়ীও ছিলেন। তারপরই আমরা কিনেছিলাম। এখানে কোন ধরণের অনিয়ম হয়েছে কি না তা জানা নেই।

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, জেলায় মাধ্যমিক পর্যায়ের সকল প্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া শ্রেনিকক্ষ সৃজনের জন্য ২ লক্ষ ৪৫ হাজার টাকা পেয়েছে।এসব পন্য নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে ক্রয়ের জন্য প্রশিক্ষক, স্থানীয় রাজনীতিবিদ, শিক্ষক নেতাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিগন চাপ দিয়েছিল। কোন কোন প্রতিষ্ঠান তাদের কথা অনুযায়ী কিনেছে, আবার কেউ কেউ নিজেরা কিনেছে। যারা নিজেরা কিনেছে, তারা ভাল পন্য সাশ্রয়ী দামে কিনতে পেরেছেন। আর কম্পিটার প্যালেস থেকে যারা কিনেছে, তাদের কাছ থেকে অন্তত ১ লক্ষ টাকা বেশি নিয়েছে কম্পিউটার প্যালেস। তবে এই টাকার একটা বড় অংশ হয়ত কোন মধ্যস্থতাকারী খান রেজাউল ইসলাম নিয়েছেন। শিক্ষকরাও দায়ী থাকতে পারেন এর সাথে।

এ বিষয়ে বাগেরহাট জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ সাইদুর রহমান বলেন, প্রকল্প থেকে টাকা এসেছে, শিক্ষকরাই কিনেছেন। এতে আমাদের সম্পৃক্ততা ছিল না। যদি কোন অভিযোগ পাই, তাহলে প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের জানানো হবে। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।