বাগেরহাটে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে মৃতের স্বজনদের ঘরে তালা!

প্রকাশ : 2025-02-03 18:53:46১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

বাগেরহাটে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে মৃতের স্বজনদের ঘরে তালা!

বাগেরহাটে বিরোধপূর্ণ জমি দখলে রাখতে মৃতের স্বজনদের ঘরে প্রবেশ করতে বাঁধা, ঘরে এবং বাড়ি প্রবেশের প্রধান ফটকে তালা দিয়ে রাখার অভিযোগ উঠেছে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে। বিষয়টি জানাজানি হলে স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।পরে স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিদের মধ্যস্ততায় বাড়ি প্রবেশের ফটক ও ঘরের তালা খুলে দেন তারা। ন্যাক্কারজনক এই ঘটনা ঘটেছে বাগেরহাট সদর উপজেলার কালদিয়া গ্রামে।

জানাযায়, রবিবার (০৩ জানুয়ারি) রাতে বাগেরহাট সদর উপজেলার কালদিয়া গ্রামের মৃত শেখ ইয়াকুব আলীর বড় ছেলে শেখ আব্দুর রাজ্জাক (৬৫) ঢাকায় থাকাকালীন অবস্থায় মারা যায়। প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া শেষে মরদেহ বাড়িতে নিয়ে আসলে মৃতের চাচাতো ভাই একই বাড়ির বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বাবু ঝামেলা শুরু করেন । তিনি  স্বজনদের বাড়ি প্রবেশ করতে বাঁধা দেয়। বাড়ি প্রবেশের প্রধান ফটকে তালা দিয়ে রাখেন। পূর্বে থেকে নিহত ও তার ভাইদের বসত ঘরে দেওয়া তালা খুলতে রাজি হয় না। নিহতের মরদেহ নিয়ে নজরুল ইসলাম বাবুর বাড়ির সামনে রাখেন। পরে স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিদের হস্তক্ষেপে বাড়ি ও ফটকের তালা খোলা হয়। এবং মৃতের দাফন সম্পন্ন করা হয়। ভুক্তভোগীদের দাবি জোরপূর্বক জমি দখলে রাখতে বছর দুয়েক ধরে এভাবেই অত্যাচার করছেন নজরুল ইসলাম বাবু।  

মৃত শেখ আব্দুর রাজ্জাকের ছোট ভাই শেখ জিল্লুর রহমান বলেন, ১৯৫৫ সালে আমার বাবা মৃত শেখ ইয়াকুব আলী এই বাড়ি তৈরি করেন। এই জমির মালিকানার স্বপক্ষে সব ধরণের কাগজপত্র রয়েছে। এরপরেও ২০২৩ সাল থেকে আমাদের চাচাতো ভাই নজরুল ইসলাম বাবু ও তার ছেলে বাপ্পি শেখ আমাদের বাড়ি দখল করার চেষ্টা করেন। এজন্য আমাকে, আমার স্ত্রী সাবিনা বেগম ও আমার ছোট ভাই মোঃ রিপন শেখকেও মারধর করেছে। কয়েকদিন আগে আমাদের ঘরে থাকা ফ্রীজ, আলমিরা, খাট, পোশাক-আশাক সবকিছু রাতের আধারে নিয়ে যায়। এই অন্যায়কারীর বিচার চাই বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন এই যুবক।

আব্দুর রাজ্জাকের আরেক ভাই মোঃ রিপন শেখ বলেন, গেল দুই বছরে থানা পুলিশ, আদালত ও স্থানীয়ভাবে কয়েকবার শালীস-মীমাংসা হয়েছে। কিন্তু নজরুল ইসলাম বাবু ও তার ছেলে বাপ্পি শেখ কোন শালীস মানেন না। একের পর এক আমাদের উপর অত্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে। আমার ভাই মারা গেছে, এর পরেও আমরা এসে আমার বাবার ঘরে প্রবেশ করতে পারিনি। এত অত্যাচার মানুষ, মানুষের উপর করে না।

স্থানীয় বাসিন্দা হাফিজুর রহমান বলেন, জমি সংক্রান্ত বিরোধ আছে এটা আদালত বা স্থানীয় শালীস মিমাংসার মাধ্যমে সমাধান হবে। কিন্তু একজন মানুষের বসত ঘর তালা দিয়ে রাখা, বাড়ি প্রবেশের পথ ও মরদেহ আটকে রাখা তো কোন সমাধান হতে পারে না। নজরুলের বিচার হওয়া উচিত বলে দাবি করেন তিনি।

ওই বাড়িতে উপস্থিত স্থানীয় বাসিন্দারা আরও বলেন, নজরুল ইসলাম বাবু একজন অত্যাচারী মানুষ। তার অত্যাচারে এর আগে এখলাছ, রুপিয়া ও নজরুলের আপন ভাই এই বাড়ি থেকে চলে গেছে। নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে তার বংশের অন্য লোকদেরও মারধর ও অত্যাচারের অভিযোগ রয়েছে। নিরহ ওই পরিবারের শান্তির জন্য নজরুলের হাত থেকে এদের বাঁচানো উচিত।

অভিযোগের বিষয়ে নজরুল ইসলাম বাবু বলেন, ওই জমির দলিল আমার, এ কারণে আমি ঘরে তালা মেরে ছিলাম। আর মরদেহটি রাস্তার উপর রাখা ছিল, যার কারণে আমি এনে আমার ঘরের সামনে রেখেছি। স্থানীয়রা বললে, গেটে তালা খুলে দিয়েছি। ঘরের তালা ওরা নিজেরা খুলেছে।

স্থানীয় ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মোঃ কামাল উদ্দিন বলেন, নজরুল ইসলাম বাবু ও তার চাচাতো ভাইদের জমি নিয়ে সমস্যা সমাধানের জন্য আমরা চেষ্টা করেছি। কিন্তু নজরুল ইসলাম বাবু কারও কথা মানেন না। এর আগে নজরুল ইসলাম বাবু ও তার লোকজন শেখ জিল্লুর রহমানদের ঘর থেকে সব মালামালও নিয়ে গেছে। একটি মরা বাড়িতে তার ভাই-বোনদের প্রবেশে বাঁধা দিয়েছে। স্থানীয় সব বাসিন্দারা তার আচরণে হতবাক হয়ে গেছে। আমাদের সমঝোতায় মরদেহের দাফন ও ঘরের তালা খোলা হয়েছে। আশাকরি আলোচনা সাপেক্ষে একটি সমাধানে আসা যাবে।