বাগেরহাটের বিভিন্ন স্থানে মাদকের স্বর্গরাজ্য
প্রকাশ : 2024-06-27 11:08:04১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
বাগেরহাটের বিভিন্ন উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বেড়েছে মাদকের ছড়াছড়ি। বিভিন্ন সময় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের মাধ্যমে ছোটখাটো কিছু মাদক কারবারি এবং কিছু মাদক সেবী গ্রেফতার হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে মূল হোতারা।
বর্তমানে জেলার কয়েকটি স্থান মাদককারবীদের জন্য নিরাপদ রুট হিসেবে তৈরি হয়েছে। যেসব স্থান থেকে সাধারণত বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য অবাধে প্রবেশ করছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য স্থানগুলো হচ্ছে কচুয়া সদর ইউনিয়নের বাগমারা খেয়া ঘাট,কচুয়া চালিতা খালি ব্রিজ এলাকা, ৮ নং ওয়ার্ড এর খোন্তাকাটা চর। তবে এসব এলাকা থেকে মাদকের চালান আসলেও এ সকল মাদকদ্রব্য বিক্রি করার জন্য ভিন্ন ভিন্ন স্থান এবং ভিন্ন ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করেন মাদক কারবারিরা। বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার মেইন বাজারের আশেপাশেই এসব মাদক কারবারিদের কয়েটি আস্তানা রয়েছে। এছাড়া কচুয়া ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন নদীর ওপারে কয়েলের ভিটা নামক স্থানে প্রায়ই সন্ধ্যার পরেই বসে মাদক সেবীদের আড্ডা। এখানে বিভিন্ন সময় লোক দেখানো অভিযান হলেও প্রতিবারই ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায় মাদক সেবীরা । এছাড়াও বারুইখালী, টেংরাখালী সহ বেশ কয়েকটি স্থানে মাদক সেবীদের অবাদ বিচরণ লক্ষ্য করা যায়। মাঝে মাঝে কচুয়ার বিষখালী নির্মাণাধীন ব্রিজ এলাকাও মাদক কারবারীদের রুট হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এ ছাড়াও গজালিয়া ইউনিয়নের কয়েকটি স্থান মাদকসেবী ও মাদক কারবারিদের আস্তানা রয়েছে। এ ইউনিয়নের মাদারতলা গ্রামের জোবাই সংযোগ রাস্তায় মাদকসেবীদের আড্ডার অন্যতম স্থান। এই রাস্তার ঢালাই ব্রীজের পাস থেকে ইটের সলিং এর পশ্চিম দিকে ডুকে কিছু দুর গিয়ে ম্যানেজার বাড়ির পাশ নামক কিছু ঘেরের বাসায় নিরাপদে মাদক সেবন করে থাকেন । এছাড়াও গজালিয়া বাজারের ইউনিয়ন পরিষদের আশেপাশেও মাদক সেবী ও মাদক কারবারিদের বিচরন লক্ষ্য করা যায়। সাধারণত এখানকার রাজনৈতিক দলের গুরুত্বপূর্ণ পদধারী কয়েকজন চিহ্নিত ব্যক্তি এ ব্যবসার সাথে জড়িত রয়েছেন। রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে স্থানীয়রা এ বিষয়ে মুখ খুলতে সাহস পায় না। এছাড়াও ধোপাখালীর গাবতলা, বগা গুচ্ছ গ্রাম,রাড়িপাড়া ইউনিয়নের গোয়ালমাঠ এবং দোবাড়িয়া মাদ্রাসা এলাকা, গোপালপুর ইউনিয়নের বিষখালী, বাঁধাল ইউনিয়নের পানবাড়িয়া,কাঠালতলা,আঠারোগাতী,মসনী সহ উপজেলার বেস কয়েকটি স্থান মাদক ব্যবসায়ী ও মাদক সেবীদের শক্ত অবস্থান গড়ে উঠেছে। গোপনে বিভিন্ন এলাকার একাধিক ব্যক্তিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এক সময় হেরোইনে আসক্তের সংখ্যা বেশি থাকলেও বর্তমানে এ উপজেলায় ইয়াবা এবং গাঁজা জাতীয় নেশায় আসক্তের সংখ্যাই সবচাইতে বেশি। তবে অবাক করার বিষয় হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে কিছু গাঁজা জাতীয় নেশা আটক হলেও ইয়াবা আটক এর ঘটনা নামমাত্র।
সম্প্রতি গজালিয়া ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের জন প্রতিনিধি মহাসিন মোল্লার ইয়াবা সেবনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে দেখা যায় ওই ইউপি সদস্য প্রকাশ্য মোবাইলে পর্ন ভিডিও দেখছে এবং ইয়াবা সেবন করছে। পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে দৃশ্যমান কোন আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে দেখা যায়নি। অদৃশ্য শক্তি বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনীর নাকের ডগায় দেদারসে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এতে করে জনমনে তৈরি হয়েছে প্রশ্ন। পরিস্থিতি এভাবে চলতে থাকলে কচুয়া উপজেলা এক সময় মাদকের স্বর্গ রাজ্যে পরিণত হবে।এতে করে এ এলাকার যুব সমাজ মাদকের সাথে ঝুকে পড়বে। এতে করে মাদকের পাশাপাশি বেড়ে যাবে বিভিন্ন ধরনের অপরাধ প্রবনতা। কচুয়া থানার প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী চলতি বছরের গত মে মাস হতে ১৩ জুন পর্যন্ত মাদকদ্রব্য উদ্ধারের তালিকায় রয়েছে গাঁজা ৪ কেজি ৪৫৬ গ্রাম,ইয়াবার পরিমাণ মাত্র ৭ পিস। উদ্ধারকৃত মাদক দ্রব্যের আনুমানিক মূল্য ১ লক্ষ ৪৪ হাজার ৮ শত টাকার মতো। আর এ ঘটনায় মামলা হয়েছে ১২ টি এবং গ্রেফতার দেখানো হয়েছে ১২ জন। তবে অদৃশ্য শক্তি বলে মাদক কারবারীদের একটা বড় অংশ ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। অনেকে ধারণা করছেন রাজনৈতিক প্রভাব খাটিযয়ে বিভিন্ন পন্থায় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে এ ধরনের কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে আর ধরা পড়ছে ছোটখাটো কিছু মাদক সেবী।
এ বিষয়ে কচুয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাখী ব্যানার্জি বলেন, মাদকের বিষয়ে সরাসরি কোন ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ আমার নেই। এখানে স্থানীয় থানা প্রশাসনের কাজ করার সুযোগ আছে। তবে মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরের সহায়তায় সরাসরি ভ্রাম্যমাণ অভিযান পরিচালনা করার সুযোগ রয়েছে। সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য পেলে অবশ্যই এ বিষয় অভিযান পরিচালনা করা হবে। আমার পক্ষ থেকে মাদকের বিষয়ে কোনো ছাড় নেই।
প্রকৃতপক্ষে এখন স্থানীয় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নড়েচড়ে বসলেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে মাদক সেবীদের এবং লাগাম টানা সম্ভব হবে মাদক কারবারীদের।
সান