বাংলাদেশে নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে অবস্থান স্পষ্ট বার্তা ভারতের
প্রকাশ : 2023-11-11 10:12:19১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
নির্বাচন বা উন্নয়ন একান্তই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে। এতে ভারত কোনো হস্তক্ষেপ করবে না। বাংলাদেশের জনগণই তাদের নিজেদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে। এমন বার্তাই ওয়াশিংটনকে দিয়েছে দিল্লি। সব মিলিয়ে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বাংলাদেশের মতো গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রের নির্বাচনের ক্ষেত্রে বর্তমান মার্কিন নীতি এ অঞ্চলে চীনের আধিপত্য বাড়াবে বলে ভারত স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে নয়াদিল্লির পক্ষ থেকে এ বার্তা দেওয়া হয়।
শুক্রবার দিল্লিতে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে পঞ্চম প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের ‘টু প্লাস টু বৈঠক’ অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন, ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শংকর নিজ নিজ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন। বৈঠকে দুই দেশ নিজ নিজ অগ্রাধিকার ও ভূরাজনৈতিক কৌশল এবং সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করে।
বৈঠকের পর ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় কোয়েত্রা ও প্রতিরক্ষা সচিব গিরিধর আরমানে সংবাদ সম্মেলন করেন। বৈঠকে বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ও সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানান কোয়েত্রা।
সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন করা হয়– বৈঠকে বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনা হয়েছিল কিনা। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন। এর সঙ্গে বাংলাদেশে চীনের প্রভাব বৃদ্ধিও ভারতের উদ্বেগের কারণ। এর উত্তরে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বলেন, দক্ষিণ এশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশের বিষয়ে আমরা আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিষ্কারভাবে তুলে ধরেছি। তৃতীয় দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে আমরা কোনো মন্তব্য (হস্তক্ষেপ) করি না। বাংলাদেশের উন্নয়ন ও নির্বাচন তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। বাংলাদেশের জনগণ তাদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে।
তিনি বলেন, ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও অংশীদার হিসেবে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সম্মান করে ভারত। সেই সঙ্গে স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ ও প্রগতিশীল দেশ হিসেবে গড়ে উঠতে বাংলাদেশের জনগণের যে আকাঙ্ক্ষা ও পরিকল্পনা রয়েছে তাতে ভারত সহযোগিতা করে যাবে।
এ বৈঠক প্রসঙ্গে নয়াদিল্লির প্রেস ক্লাব অব ইন্ডিয়ার সভাপতি গৌতম লাহিড়ী সমকালকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের পঞ্চম টু প্লাস টু বৈঠকে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ আলোচনায় আসে। ভারত স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশের নির্বাচনের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ভারত কোনো হস্তক্ষেপ করবে না। বাংলাদেশের জনগণই তাদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে। ভারতের এ অবস্থান পরিষ্কার করে বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে এর আগে বাংলাদেশের নির্বাচন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে ওয়াশিংটনের অবস্থান প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের উত্তরে দেশটির যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপ-মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল বলেন, যুক্তরাষ্ট্র কোনো দেশেই কোনো নির্দিষ্ট সরকার কিংবা রাজনৈতিক দল বা প্রার্থীকে সমর্থন করে না। যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন, যাতে সেখানে মানুষের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটে।
দিল্লিতে চার গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীর বৈঠকে বৈশ্বিক কৌশলগত অংশীদারিত্ব, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, উদীয়মান প্রযুক্তি, উভয় দেশের জনগণের মধ্যে সম্পর্ক বৃদ্ধি, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে আঞ্চলিক উদ্বেগ এবং সেই সঙ্গে ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা ও মতবিনিময় হয়েছে। চীনকে মোকাবিলায় ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক দৃঢ় করতে ২০১৮ সাল থেকে দুই দেশের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী পর্যায়ে এ বৈঠক হচ্ছে।
সূত্র জানায়, শুক্রবারের বৈঠকে বাংলাদেশের নির্বাচনের বিষয়ে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র তাদের নিজ নিজ অবস্থান স্পষ্ট করে তুলে ধরেছে। যুক্তরাষ্ট্র বৈঠকে বাংলাদেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে তাদের অনড় অবস্থানের কথা তুলে ধরেছে। যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে পারে বলে ভারতের আশঙ্কা। ভারত মনে করে, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নষ্ট হলে মৌলবাদী শক্তি মাথাচাড়া দেবে। দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের প্রভাবও মাত্রাতিরিক্তভাবে বেড়ে যাবে, যা ভারতের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষেও বিপজ্জনক হয়ে উঠবে। বাংলাদেশের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এ ব্যাখ্যা ভারত আগেই যুক্তরাষ্ট্রকে নানাভাবে জানিয়েছে। সর্বশেষ এ বৈঠকেও তা নতুন করে জানানো হয়। সব মিলিয়ে ভারত স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছে, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে বাংলাদেশের মতো গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রের নির্বাচনের ক্ষেত্রে বর্তমান মার্কিন নীতি চীনের আধিপত্য বাড়াবে।
বৈঠক শেষে জয়শঙ্কর বলেন– জটিল প্রযুক্তি, বেসামরিক মহাকাশ এবং জটিল খনিজের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমরা বিশ্বব্যাপী এজেন্ডা নির্মাণ করছি। একটি দূরদর্শী অংশীদারিত্ব গড়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্য। তিনি বলেন– বৈঠকে কৌশলগত, প্রতিরক্ষা এবং নিরাপত্তা সম্পর্ক, প্রযুক্তি এবং সাপ্লাই চেইন সহযোগিতা এবং জনগণের মধ্যে বিনিময়ের একটি ব্যাপক ধারণা গ্রহণ করা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ২০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি। ২ লাখ ৭০ হাজার ভারতীয় শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রে অধ্যয়ন করে এবং দেশটিতে ৪৪ লাখ প্রবাসী ভারতীয় রয়েছেন।
অ্যান্টনি ব্লিংকেন জানান, এ সংলাপ ভারত-মার্কিন সম্পর্ককে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে একটি সুযোগ হবে। তিনি বলেন, উভয় দেশের একটি শক্তিশালী অংশীদারিত্ব রয়েছে এবং ভবিষ্যতের জন্য প্রভাবসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করছে। তিনি বলেন, ‘আমরা আন্তর্জাতিক শান্তি, নিরাপত্তায় অংশীদারিত্বকে জোরদার করছি এবং বিশেষভাবে নিয়মভিত্তিক শৃঙ্খলার প্রচারণায় এবং সার্বভৌমত্ব, আঞ্চলিক অখণ্ডতা এবং স্বাধীনতার নীতিগুলোকে সমুন্নত রাখতে কাজ করছি। আমাদের প্রতিরক্ষা সহযোগিতা সেই কাজেরই একটি মূল স্তম্ভ।’
এর আগে শুক্রবার সকালে নয়াদিল্লিতে ড. জয়শঙ্কর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে ইন্দো-প্যাসিফিক এবং আঞ্চলিক বিষয় নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি উঠে আসে পশ্চিম এশিয়ার চলমান অস্থিরতার বিষয়টিও।
বৈঠক শেষে জয়শঙ্কর সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম এক্স হ্যান্ডেলে (টুইটার) লেখেন, ‘আমাদের কৌশলগত অংশীদারিত্ব আরও বৃদ্ধির লক্ষ্যে একটি খোলামেলা এবং সদর্থক আলোচনা হয়েছে। পশ্চিম এশিয়া, ইন্দো-প্যাসিফিক এবং অন্যান্য আঞ্চলিক সমস্যা নিয়েও কথা বলেছি।’
এ বৈঠকে যোগ দিতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নয়াদিল্লিতে এসে পৌঁছান দুই মার্কিন মন্ত্রী।
ই