বাংলাদেশিদের প্রবাসে স্থানীয় রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান পররাষ্ট্র উপদেষ্টার

প্রকাশ : 2025-01-11 18:15:03১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

বাংলাদেশিদের প্রবাসে স্থানীয় রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান পররাষ্ট্র উপদেষ্টার

 পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন দেশের বৈশ্বিক ব্র্যান্ডিং ও প্রভাব বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের (এনআরবি) প্রতি বাংলাদেশের পরিবর্তে তাদের বসবাসের দেশের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি আজ রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলাদেশ ব্র্যান্ডিং বিষয়ক এক প্রবাসী সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেন, 'যদি আমরা বৈশ্বিকভাবে প্রভাবশালী হতে চাই, তাহলে এটাই আমাদের পথ।'

তিনি বলেন, 'যখন এনআরবিরা তাদের বসবাসের দেশগুলোর গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত হন, তখন তা বৈশ্বিক পর্যায়ে বাংলাদেশের একটি শক্তিশালী ব্র্যান্ড ইমেজ গড়ে তোলে।'

ভারতীয় প্রবাসীদের উদাহরণ দিয়ে তৌহিদ বলেন, “ভারতীয়রা বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাজনৈতিক সংস্থায়, বিশেষ করে পশ্চিমা দেশগুলোতে, গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে বৈশ্বিক প্রভাব অর্জন করেছেন।'

তিনি উল্লেখ করেন যে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ, যাদের শাখা বহু দেশে বিস্তৃত।

তিনি প্রশ্ন করেন, 'আপনারা কি কখনো কোনো দেশের মানুষকে বিদেশি বিমানবন্দরে কারও বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে দেখেছেন?'

এ ধরনের কাজ দেশের ব্র্যান্ডিং ও ইমেজ ক্ষতিগ্রস্ত করে বলে মন্তব্য করে তিনি নলে, 'আপনি কখনো ভারতীয়দের এ ধরনের কাজ করতে দেখবেন না। কেন ভারতীয়রা বিদেশে বিভিন্ন সুবিধা পান, আর আমরা পাই না? কারণ আমরা স্থানীয় রাজনীতিতে কম সক্রিয়।'

তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘ব্র্যান্ডিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এবং এর পথ স্থানীয় রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হওয়ার মাধ্যমে।’

তৌহিদ আরও উল্লেখ করেন যে, ভারতীয়রা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রভাবশালী অবস্থান তৈরি করেছেন, যা বাংলাদেশি এনআরবিদেরও লক্ষ্য হওয়া উচিত।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণার মোকাবিলায় বিশেষত ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রচারিত বিভিন্ন মিথ্যা তথ্য খণ্ডন করার আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, 'কিছু ঘটনা ঘটেছে, তবে সেগুলো ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে সংখ্যালঘুদের লক্ষ্য করে ছিল না। উদাহরণস্বরূপ, যদি ১০টি বাড়ি আক্রমণ করা হয়, তার মধ্যে ৮টি মুসলমানদের।'

তিনি প্রবাসীদের প্রতি বাংলাদেশের বিষয়ে মিথ্যা তথ্য মোকাবিলা করার আহ্বান জানান।

তৌহিদ অভিবাসনের খরচ কমানো এবং ভাষার দক্ষতাসহ বাংলাদেশি কর্মীদের দক্ষতা উন্নয়নের ওপরও জোর দেন।

তিনি বলেন, 'আমরা যদি আমাদের শ্রমশক্তিকে আরও দক্ষ করে তুলতে পারি, তাহলে রেমিট্যান্স দ্বিগুণ করতে পারব।'

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে (এইচএসআইএ) যাত্রী হয়রানি বন্ধে তৎপরতার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি বলেন, 'এ ধরনের হয়রানির জন্য দায়ীদের বিচার করা হবে।'

তৌহিদ বাংলাদেশি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীদের প্রশংসা করে বলেন, তাদের কাজ দেশের বৈশ্বিক ইমেজ উন্নত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

তিনি উল্লেখ করেন,  'আমাদের ইতিবাচক ইমেজ বৃদ্ধি করতে হবে। আমাদের শান্তিরক্ষীরা আফ্রিকায় একটি শক্তিশালী ইমেজ তৈরি করেছে। এগুলো ইতিবাচক ইমেজ। অন্যদিকে, যখন আমরা (অবৈধভাবে) ভূমধ্যসাগর পার হই, তখন আমাদের ইমেজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।'

'নির্বাচনী রোডম্যাপ শিগগিরই আসছে' উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিদেশি বিনিয়োগের বিষয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা আশা প্রকাশ করেন, নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা হলে বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ বোধ করবেন এবং বিনিয়োগ আসবে।

সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ. মনসুর বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আগের অনেক দুর্বলতা কাটিয়ে উঠেছে।

তিনি বলেন, গত ছয় মাসে গড়ে রেমিট্যান্স ২৬ শতাংশ বেড়েছে, যা এ সময়ে তিন বিলিয়ন ডলার হয়েছে।

এ ছাড়া তিনি বলেন, রপ্তানি ২.৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। তিনি একটি অনুকূল পরিবেশ প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টার ওপর জোর দেন।

লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটসের স্পিকার ব্যারিস্টার সাইফ উদ্দিন খালেদ বলেন, যুক্তরাজ্যে এনআরবিরা সব সময় বাংলাদেশের মানুষের পাশে রয়েছে।

তিনি বলেন, 'আমাদের বাংলাদেশের প্রতি রক্তের ঋণ আছে। বাংলাদেশে কোনো ক্ষতি হলে আমরা লন্ডনে গর্জে উঠি। আপনাদের কষ্ট আমাদের হৃদয় স্পর্শ করে।'

ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবদুল হাই সরকার প্রবাসীদের মধ্যে ঘন ঘন বিরোধ ও সংঘাত নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, এটি একটি দুঃখজনক পরিস্থিতি যা সমাধান করা প্রয়োজন।

তিনি বাংলাদেশি শ্রমিকদের দক্ষতা উন্নয়নের গুরুত্বও তুলে ধরেন।

জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর সাবেক কমান্ডার মেজর জেনারেল (অব.) ফজলে এলাহী আকবর বাংলাদেশের বৈশ্বিক ইমেজ উন্নয়নে সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা উল্লেখ করে বলেন, এটি তাদের শৃঙ্খলা ও স্বচ্ছ রেকর্ডের কারণে সম্ভব হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, 'তাদের (বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের) বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির কোনো অভিযোগ নেই। তারা দেশের বাণিজ্য বৃদ্ধিতে আরও ভূমিকা রাখতে পারেন।'

সম্মেলনটি সেন্টার ফর নন-রেসিডেন্ট বাংলাদেশিস (সিএনআরবি)'র আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনের চেয়ারম্যান এমএস শেখিল চৌধুরী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।