বরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের নীহার বালা আর নেই
প্রকাশ : 2022-11-30 20:02:36১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
বরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের জীবনের শেষ দুই দশকে তাঁর সংসারের হাল ধরেছিলেন নীহার বালা। সুলতান তাঁকে মেয়ে বলে পরিচয় দিতেন। পরিচিত ছিলেন সুলতানের পালিত কন্যা হিসেবে। আজ বুধবার দুপুরে নড়াইল সদর হাসপাতালে মারা গেছেন সেই নীহার বালা (৮৫)।
নীহার বালার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে তাঁর নাতি নয়ন বৈদ্য বলেন, নীহার বালা আজ বুধবার দুপুরে বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে নড়াইল সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে বেলা দুইটায় তিনি মারা যান। তিনি ৮ বছর ধরে দৃষ্টিহীন এবং তিন বছর ধরে শয্যাশায়ী ছিলেন। অ্যাজমা রোগও ছিল তাঁর, ছিল বার্ধক্যজনিত দুর্বলতা।
১৯২৪ সালের ১০ আগস্ট নড়াইল শহরের মাছিমদিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন বরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতান। ১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর তাঁর প্রয়াণ ঘটে। তাঁর মৃত্যুর পর ২০০৪ সালে নড়াইলের মাছিমদিয়ায় শিল্পীর বাড়িতে সরকারি উদ্যোগে নির্মাণ করা হয় শিল্পীর স্মৃতি সংগ্রহশালা। তখন ওই সংগ্রহশালা এলাকার দক্ষিণ-পশ্চিম পাশে সরকারিভাবে দুই কামরার আধা পাকা একটি টিনের ঘর করে দেওয়া হয় নীহার বালাকে। তাঁর দুই মেয়ের মধ্যে বাসনা মারা যান ২০০৩ সালে, আরেক মেয়ে পদ্ম মারা যান ২০১৭ সালে। নাতি নয়ন বৈদ্য এবং তাঁর স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে নীহার বালার সংসার ছিল। নয়ন বৈদ্য সুলতান স্মৃতি সংগ্রহশালায় অফিস সহায়ক।
সুলতানের শিষ্য ও নড়াইল সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের চারুকলার সহকারী শিক্ষক সমীর কুমার বৈরাগী বলছিলেন, শিল্পী সুলতানের সংসার ও শিশুস্বর্গ পরিচালনায় অভিভাবক ছিলেন নীহার বালা। তাঁকে ঘিরেই চলত সুলতানের সংসার। তিনি তাঁকে মেয়ে বলেই পরিচয় দিতেন, স্নেহ করতেন মেয়ের মতোই। নীহার বালা ডাকতেন কাকু বলে। নীহার বালাকে ঘিরে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সুলতানপ্রেমীদের ছিল আগ্রহ। সুলতানপ্রেমীদের লেখায় নীহার বালা ছিলেন অন্য রকম এক অনুষঙ্গ।
নীহার বালার চানাচুর বিক্রেতা স্বামী নড়াইল শহরের বাসিন্দা হরিপদ সাহার সঙ্গে প্রতিবেশী সুলতানের ছিল ঘনিষ্ঠতা। হরিপদ কাকু বলে ডাকতেন শিল্পীকে। ১৯৭৫ সালে আকস্মিক মৃত্যু হয় হরিপদ সাহার। উপার্জনক্ষম স্বামীর মৃত্যুতে দুই মেয়ে বাসনা রানী সাহা ও পদ্ম রানী সাহাকে নিয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েন নীহার বালা। তখন শিল্পী সুলতান মারাত্মক অসুস্থ হন। তাঁকে দেখার কেউ ছিল না। এগিয়ে আসেন নীহার বালা। সেই থেকে নীহার বালা, তাঁর দুই সন্তান ও ছোট ভাই দুলাল সাহাকে নিয়ে শুরু হয় অকৃতদার সুলতানের সংসার। সেই সংসারের অভিভাবকত্ব নীহার বালার। সুলতানকে খাওয়াদাওয়া, পোশাক পরানো ও চলাফেরায় শাসন করতেন নীহার বালা। সেই শাসন শিল্পী সুলতান মেনে নিতেন অবচেতন মনে।