বঙ্গবন্ধুর যে অবদান ছিল স্বাধীনতায় সেই ইতিহাসটাও মুছে ফেলা হয়েছিল: প্রধানমন্ত্রী
প্রকাশ : 2022-03-24 12:50:00১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
আমরা যে বিজয়ী জাতি সেই কথাটাই ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর যে অবদান ছিল স্বাধীনতায় সেই ইতিহাসটাও মুছে ফেলা হয়েছিল। ৭ মার্চের ভাষণ নিষিদ্ধ; কোনো জায়গায় তার নাম থাকবে না; কোথাও ছবি থাকতে পারবে না; জয় বাংলা স্লোগান নিষিদ্ধ; মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, মুক্তিযুদ্ধের অর্জন সব আদর্শ একে একে ধ্বংস করে দেওয়া হয়।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে স্বাধীনতা পদক-২০২২ প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি জাতি বা প্রজন্মের সামনে যদি আমাদের বিজয়ের ইতিহাস তুলে ধরা না হয়, সে জাতি সামনে এগিয়ে যাবে কীভাবে? তাদের ভেতরে আত্মবিশ্বাস আসবে কী করে? তারা ভবিষ্যতে উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখবে কীভাবে? আমরা যে বিজয়ী জাতি সেই কথাটাই ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এটাই ছিল ২১ বছরের অন্ধকারের যুগ।
তিনি বলেন, ৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে আমরা বঙ্গবন্ধুর পদাঙ্ক অনুসরণ করে কাজ শুরু করি। এমন দিন বাংলাদেশে আসবে একটি মানুষও ভূমিহীন থাকবে না, গৃহহীন থাকবে না, ঠিকানাবিহীন থাকবে না। সেটা আমরা করতে সক্ষম হবো, বলেন শেখ হাসিনা।
স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্তদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব যদি আমাদের এই দেশটি উপহার না দিতেন আর স্বাধীন জাতি হিসেবে মেধা বিকাশের কোনো সুযোগই আমরা কখনো পেতাম না। সব সময় একটা পরাজয়ের গ্লানি নিয়ে আমাদের থাকতে হতো। আমরা সব সময় শোষিত-বঞ্চিত থাকতাম। জাতির পিতা আমাদের স্বতন্ত্র জাতিস্বত্তা অর্জন করে দিয়েছেন, একটি জাতিরাষ্ট্র দিয়েছেন। যে কারণে আজ আমরা সেই মেধা অন্বেষণের সুযোগ পাচ্ছি এবং পুরস্কৃত করে আগামী প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করার পদক্ষেপ নিতে পারছি।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার পর মাত্র সাড়ে ৩ বছর হাতে সময় পেয়েছিলেন। একটি জাতি গঠনে একটা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে, একটি প্রদেশকে রাষ্ট্রে উন্নীত করায় সাড়ে ৩ বছর অত্যন্ত অল্প সময়। কিন্তু তিনি অসাধ্য সাধন করেছিলেন। পৃথিবীর অনেক দেশে যখন কেউ মুক্তির সংগ্রাম করে, বিপ্লব করে, অনেক মিত্র শক্তি সহযোগিতা করে। যেসব মিত্র শক্তি সহযোগিতা করতে আসে তাদের স্বশস্ত্র বাহিনী নিয়ে, তারা কিন্তু সে দেশ থেকে কখনো চলে যায় না। যায়নি কখনো। আমরা ইতিহাসে সেটা দেখতে পাই। কিন্তু বাংলাদেশ একটি ব্যাতিক্রম। জাতির পিতা শেখ মুজিব ছিলেন অত্যন্ত স্বাধীনচেতা মানুষ। তাই আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় সেনা বাহিনী আমাদের সহযোগিতা করেছে। মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেইনিং দেওয়া, তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করা। সেই সঙ্গে অন্যান্য দেশও আমাদের সহযোগিতা করেছে, আবার অনেকে বিরোধিতাও করেছে। যারা আমাদের সঙ্গে সরাসরি মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করে নিজেদের জীবন বিসর্জন দিয়েছে আমরা তাদের শ্রদ্ধা জানাই।
স্বাধীনতার পর মাত্র ৩ মাসের মধ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানে অনুরোধে ভারতীয় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী তার ভারতীয় সেনা বাহিনী ফেরত নিয়ে যান নিজের দেশে। এটা সমসাময়িক ইতিহাসে একটি বিরল ঘটনা। জাতির পিতা ছিলেন অত্যন্ত স্বাধীনচেতা নেতা, আমি বলবো ইন্দিরা গান্ধীও ছিলেন স্বাধীনচেতা। তিনি বাংলাদেশকে শুধু স্বীকৃতিই দেননি, পুনর্গঠনের কাজেও অনেক সহযোগিতা তিনি করে গেছেন, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন ঘুণে ধরা সমাজ ভেঙে একটি নতুন সমাজ গড়তে। ঔপনিবেসিক শাসকদের তৈরি করা প্রশাসনিক কাঠামো এবং সেই সঙ্গে ঔপনিবেসিক শাসকদের শোষণ-বঞ্চনার হাত থেকে এ দেশকে মুক্তি দিয়ে তৃণমূল পর্যায়ের মানুষকে ক্ষমতায়ণ করা, তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার-মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করা ছিল তার লক্ষ্য। তাই স্বাধীনতার পর মাত্র ৯ মাসের মধ্যে তিনি আমাদের যে সংবিধান দিয়েছিলেন তাতে গণমানুষের প্রতিটি মৌলিক চাহিদার কথা উল্লেখ রয়েছে।
দুর্ভাগ্য আমাদের, ৭৫ এর ১৫ আগস্ট ঘাতকের নির্মম বুলেট শুধু যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে হত্যা করেছে তা নয়, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ যে আলোর পথে যাত্রা শুরু করেছিল সেটাও অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়। একটি স্বাধীন দেশের উপযোগী প্রত্যেকটা প্রতিষ্ঠান তিনি নিজের হাতে গড়েছিলেন। দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, সামরিক বাহিনীর কিছু বিপথগামী লোক, সেখানে আমাদের দলেরও নিশ্চয়ই কিছু খন্দকার মোস্তাকসহ অনেকে ছিল ৭৫ এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হারালাম। শুধু তাকে হারাইনি, এরপর আমাদের সামরিক বাহিনীতে প্রায় ১৯-২০টার মতো সামরিক অভ্যুত্থান হয়। প্রতিটি ক্যুর পর হাজার হাজার সৈনিক এবং অফিসারদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। বিমান বাহিনী ও সেনা বাহিনী সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় সেই সময়। আওয়ামী লীগের অগণিত নেতা-কর্মীকে ৭৫ এর পর কারাগারে নিক্ষেপ করা, তাদের অত্যাচার করা; ছাত্রলীগ-যুবলীগের যারা একটু প্রতিবাদ করতে গেছে তাদের ধরে নিয়ে হত্যা করে চির দিনের জন্য তাদের পরিবারও লাশ পায়নি। এই হত্যা, খুন, গুম সে সময় ব্যাপকভাবে হয়। এখনো সেনা বাহিনীর বহু সদস্যের পরিবার জানে না তাদের আপনজন কোথায় কীভাবে হারিয়ে গেল। এভাবেই এ দেশ এগিয়ে যাচ্ছিল অন্ধকারের চির গহ্বরে, বলেন প্রধানমন্ত্রী।