ফেব্রুয়ারিতেই জুলাই হত্যার বিচারে বাধ্য করার কথা বলিনি

প্রকাশ : 2025-04-17 17:21:00১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

ফেব্রুয়ারিতেই জুলাই হত্যার বিচারে বাধ্য করার কথা বলিনি

জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমরা ফেব্রুয়ারি বা মার্চের মধ্যেই জুলাই হত্যার ন্যায়বিচার নিশ্চিতে বাধ্য করতে পারি কিনা? না, আমরা পারি না। আমরা বিচার সম্পন্নে বাধ্য করার কথাও বলিনি। আমরা বলেছি, কিছু দৃশ্যমান বিচার দেখতে চাই। যাতে করে জাতির মনে আস্থা তৈরি হয় যে, বিচারের এই ধারা অব্যাহত থাকবে।

বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) দুপুরে হোটেল ওয়েস্টিনে ইইউ সফর উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকের করা এক প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন তিনি।

আপনারা চাচ্ছেন ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন হোক। আপনার মনে কি এরকম কোনো শঙ্কা রয়েছে যে যারা ক্ষমতা আসবে তারা জুলাই অভ্যুত্থানের বিচারটা সঠিকভাবে করবে না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পরবর্তী সরকারের ব্যাপারে আমরা আস্থা রাখতে চাই। আমরা মনে করি, সরকারে যারা আসবে তারা জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে আসবে, জনগণের পালস বুঝে আসবে। জনগণও তাদের পালস বুঝে গ্রহণ করবে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল তো স্বতন্ত্র বডি। আপনারা যদি এভাবে বলেন যে ফেব্রুয়ারি মার্চের মধ্যেই বিচার হতে হবে, তাহলে তাদের স্বাধীনভাবে বিচার করার জন্য সেটাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে কিনা? জানতে চাইলে জামায়াত আমির বলেন, আমরা বিচারকে বাধ্য করে দিতে পারি না। আমরা বলে দিতে পারি না যে ওতো তারিখের মধ্যে বিচার সম্পন্ন করতে হবে। তাহলে এটা হবে বিচারের ওপরে নির্লজ্জ হস্তক্ষেপ। এই অহেতুক হস্তক্ষেপের অধিকার আমাদের নেই।

তবে জামায়াত আমির বলেন, আমরা দাবি করতে পারি, মজলুম হিসেবে দাবির জায়গা আমাদের খোলা।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। তারা কি অংশগ্রহণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের কথা বলেছেন? আপনাদের জবাব কি ছিল ? আর যদি আওয়ামী লীগ নির্বাচনে আসে তাহলে আপনারা নির্বাচন করবেন, নাকি তাদেরকে প্রতিহত করবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই ইইউ সফরে আমাদের কাছে অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হয়েছে। সবাই নয়, কেউ কেউ জানতে চেয়েছে। আমরা বলেছি কেবলমাত্র আমাদের দেশে একটা গণহত্যা হয়ে গেছে। শহীদের মা, শিশু, স্ত্রীরা কান্না করছে, আহতরা এখনো হাসপাতালের বেডে আছে। আমরা জাতি হিসেবে তাদের জন্য যে করণীয়টা এখনো করতে পারিনি।

তিনি বলেন, পুরো জাতির ট্রমাটাইজড। কারণ জুলাই আগস্ট এ সরকার পুরো জাতির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। আর এই আন্দোলন কোনো একক কোনো দলের বা পক্ষের ছিল না। এটা ছিল জনতার আন্দোলন নেতৃত্বে ছিল আমাদের যুবক, যুবতীরা, ইয়াং সোসাইটি। সম্পৃক্ত ছিল সারা দেশের জনগণ।

আওয়ামী লীগের ফিরে আসা ও নির্বাচনের অংশ নেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দেশের জনগণের জন্যই রাজনীতি। তারা অপার সুযোগ পেয়েছিলেন। নিজেদের অধীনে একটানা তিনটি নির্বাচন করেছেন। সেই নির্বাচনকে তারা নির্বাচন হিসেবে রাখলেন না কেন? তারা তো নির্বাচনের জান কবজ করেছেন। জনগণ তো বলে যে তাদের ভোটার সমর্থকরাও আস্থা হারিয়ে ফেলেছিল যে নিজেরাও ভোট দিতে যায়নি। এটা কিন্তু ফেক্ট। সেই রকম একটি দলকে এই মুহূর্তে বাংলাদেশের জনগণ গ্রহণ করবে কিনা এবং আওয়ামী লীগও তাদের মানসিকতা পরিবর্তন করেছে কিনা? বিশাল প্রশ্ন। এটা শোনার পর তারা আর কিছু বলেননি, পাল্টা প্রশ্ন করেনি এটা কি সেটা কি। ‘দিস ইজ রিয়েলিটি’ রিয়েলিটি মেনে নিতে হবে।

তিনি জোর দিয়ে বলেন, আমি আমি এটা বলিনি যে, ফেব্রুয়ারির ভেতরেই ইলেকশন হতে হবে। অনেকগুলো কারণে আমি বলেছি যে কেন এই ফেব্রুয়ারিকে চয়েজ করা যায়। আর এটা কোরানের আয়াত নয়, বাস্তবতার প্রয়োজনে একটু আগাতে বা পিছাতে পারে। এর আগেই যদি জাতির প্রত্যাশা পূরণ করে নির্বাচন হয়, তাহলে তো আমার আপত্তি থাকবে কেন? আমরা সাড়ে ১৫ বছর ১৬ বছর অপেক্ষা করতে পেরেছি, প্রয়োজনে আমরা আরও এক-দুই মাস অপেক্ষা করতে পারবো। দেশ তো আমাদেরই ভালোর জন্য আমরা এটা করতে পারবো।

সংবাদ সম্মেলনের সঞ্চালনা করেন দলটির সেক্রেটারি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন দলের নায়েবে আমির অধ্যপক মুজিবুর রহমান, আ ন ম শামসুল ইসলাম, সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এ টি এম মাসুম, রফিকুল ইসলাম খান, হামিদুর রহমান আজাদ, মাওলানা আব্দুল হালিম, এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, নির্বাহী পরিষদ সদস্য মতিউর রহমান আকন্দ, অধ্যাপক ইজ্জত উল্লাহ, নুরুল ইসলাম বুলবুল, মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন।

 

সা/ই