ফখরের রেকর্ডের রানেও পাকিস্তানের জয় এল না!

প্রকাশ : 2021-04-05 11:31:45১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

ফখরের রেকর্ডের রানেও পাকিস্তানের জয় এল না!

৩৪২ রানের লক্ষ্যে নামা এক দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্কোর ৩১। তিনে আছেন যিনি, তাঁর স্কোর ১৯। এমন এক ম্যাচ নিয়ে কোনো আগ্রহ জন্মানোর কথা নয়। সে ম্যাচেই কিনা শেষ ওভার পর্যন্ত সবাইকে অপেক্ষায় থাকতে হলো বিজয়ী কে সেটা জানার জন্য! একের পর এক রেকর্ড ভেঙেচুরে এমনই এক ইনিংস খেললেন ফখর জামান। একাই লড়েছেন ফখর - এমনটা বললেও এই ইনিংসের বর্ণনা দেওয়া যায় না। অবিশ্বাস্য সে ইনিংসটার শেষও হলো দারুণ এক ঘটনায়।

লং অফ থেকে সরাসরি থ্রোতে ফখরকে আউট করেছেন এইডেন মার্করাম। জোহানেসবার্গে আজ সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে তাই তাড়া করতে নেমে ১৯৩ রানের এক অবিশ্বাস্য ইনিংস উপহার দিয়েও হারতে হলো ফখরকে। দক্ষিণ আফ্রিকার ৩৪১ রানের জবাবে পাকিস্তান থেমেছে ৩২৪ রানে। তবে এ ম্যাচের কথায় জয়ী দল কে, এ নিয়ে কেই-বা ভাবতে যাবেন। এ ম্যাচ আজ বা অনন্ত আগামীর জন্য শুধুই ফখর জামানের।     

১৫৫ বলে ১৮ চার ও ১০ ছক্কা। দলের ৩২৪ রানের ১৯৩ রানই ফখরের। দলের ৫৯.৫৭ শতাংশ রানই তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে। পাকিস্তানের হয়ে এক ইনিংসে দলের রানে এত বেশি অবদানের রেকর্ড আর নেই। এক সময়কার বিশ্ব রেকর্ড ১৯৪ রানের ইনিংস খেলার পথে ভারতের বিপক্ষে দলের ৫৯.৩২ শতাংশ রান তুলেছিলেন সাঈদ আনোয়ার। ২৪ বছরের পুরোনো সে রেকর্ড আজ অতীত হয়ে গেল। অবশ্য রেকর্ডের কথা বললে শুধু দেশের গণ্ডিতে আটকে থাকছেন না ফখর।

দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে সর্বোচ্চ রানের ইনিংসটা খেলেছেন ফখর। সে রেকর্ড একটু পরই রান তাড়া করার ক্ষেত্রে বিশ্ব রেকর্ডে রূপ নিল। বাংলাদেশের বিপক্ষে ২০১১ সালে ২৩০ তাড়া করতে নেমে শেন ওয়াটসন একাই ১৮৫ তুলেছিলেন। ওয়ানডেতে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ইনিংসটা নতুন করে লেখা শেষে ফখর যখন সেটিকে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরিতেও রূপ দেবেন বলে মনে হচ্ছিল, তখনই অদ্ভুতভাবে রান আউট হলেন ফখর। তাতে আরেকটি বাংলাদেশ-সংশ্লিষ্ট বিশ্ব রেকর্ড টিকে রইল।

২০০৯ সালে বুলাওয়েতে ১৯৪ রানে অপরাজিত থেকে সাঈদ আনোয়ারের বিশ্ব রেকর্ডের পাশে বসেছিলেন চার্লস কভেন্ট্রি। কিন্তু তবু তাঁর দল জেতেনি সেদিন। আজ ১৯৩ রান করে পরাজিত দলের পক্ষে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডে দুইয়ে উঠে এলেন ফখর।

ফখরের ইনিংসটাই ম্যাচটাকে এভাবে জমজমাট বানিয়ে দিল। না হলে প্রথম ইনিংসের পরই ম্যাচ শেষ মনে হয়েছিল। সিরিজের প্রথম ম্যাচে টপ অর্ডারের ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতাই হারের কারণ ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার। আজ প্রায় সবাই জ্বলে উঠেছিলেন। কুইন্টন ডি কক (৮০), অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা (৯২) ভিত্তি গড়ে দিয়েছেন। ইনিংস উদ্বোধন করতে নেমে ইতিবাচক শুরু এনে দিয়েছেন এইডেন মার্করামও (৩৯)।

কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকাকে প্রায় সাড়ে তিন শ রান এনে দিয়েছেন প্রথম ম্যাচের সেরা দুই ব্যাটসম্যান। সেদিন সেঞ্চুরি করা রাসি ফন ডার ডুসেন আজ ৩৭ বলে তুলেছেন ৬০ রান। ডেভিড মিলারের অপরাজিত ফিফটির ইনিংসটি ছিল ২৭ বলের। ৬ উইকেটে ৩৪১ রান তোলে দক্ষিণ আফ্রিকা।

জবাব দিতে নেমে দ্বিতীয় ওভারেই ইমাম উল হক বিদায় নিয়েছেন। এরপর ৬৩ রানের জুটি গড়ে বাবর আজম (৩১) বিদায় নেওয়ার পরই হয়তো জয়ের ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল প্রোটিয়ারা। দলকে ৭১ রানে রেখে মোহাম্মদ রিজওয়ানের বিদায়ের পর তো ম্যাচের ভাগ্য লেখা হয়েই গিয়েছিল। ক্ষণিক পর পরই উইকেট হারিয়েছে পাকিস্তান। ১২০ রানে পঞ্চম উইকেট হারায় সফরকারীরা। কিন্তু ফখর জামান হার মানলে তো!

অন্য প্রান্তে ঠিকই লড়াই চালিয়ে গেছেন। আসিফ আলীকে নিয়ে ৬৬ রানের জুটি গড়ে শুরুটা করেছেন। ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে আসিফের অবদান মাত্র ১৯। অবশ্য পরের জুটিগুলোতে ফখরের একক আধিপত্য আরও স্পষ্ট হয়েছে। আসিফ যখন আউট হয়েছেন, তখনো ১৬ ওভারে ১৫৬ রান দরকার ছিল পাকিস্তানের। ফখর সঙ্গী হিসেবে পাননি কাউকে। তবু শেষ ৪ ওভারে মাত্র ৫৬ দরকার ছিল পাকিস্তানের। 

 ৪৭তম ওভারে আন্দিলে ফিকোয়াও দুর্দান্ত বল করেছেন, ফলে সে ওভার থেকে মাত্র ৫ রান তুলতে পেরেছে পাকিস্তান। দক্ষিণ আফ্রিকার সেরা বোলার আনরিখ নর্কিয়া করতে এলেন এর পরের ওভার। তাঁর ৬ বলেও ১৩ রান তুলে ফেলেন ফখর। ম্যাচটা পাকিস্তানের হাত থেকে বেরিয়ে যায় ৪৯তম ওভারে। নিজের শেষ ওভার করতে এসে আবার স্নায়ুচাপের মধ্যে শান্ত থাকার ক্ষমতা দেখিয়েছেন ফিকোয়াও। প্রথম বলে ৪ খাওয়ার পরও মাত্র ৭ রান দিয়েছেন ওই ওভারে।

শেষ ওভারে ৩১ রান তোলার কঠিন কাজটা ছিল ফখরের কাঁধে। প্রথম বলটা জোরে হাঁকিয়েও লং অফে থাকা ফিল্ডারের আওতার বাইরে নিতে পারেননি। তবু দৌড়ে দুই রান নিতে চেয়েছিলেন। নিজে স্ট্রাইকিং প্রান্তে যাচ্ছেন বলে খুব একটা তাগাদা দেখাননি। ভেবেছিলেন বোলারের প্রান্তেই বল ছুড়বেন মার্করাম। কিন্তু ডি ককের পরামর্শ উপেক্ষা করে ঠিকই উইকেটকিপারের কাছে বল ছুড়লেন মার্করাম। সরাসরি থ্রোতে রান আউট ফখর! ম্যাচের মীমাংসা অবশেষে হলো!  

ম্যাচের বাকি পাঁচ বলে তিনটি চার মেরে ব্যবধান কমানোর সঙ্গে আক্ষেপই বাড়িয়েছেন হাসনাইন। নয় বা দশে থাকা ব্যাটসম্যানরা এভাবে মারার দক্ষতা দেখালে আজ হয়তো ম্যাচটা বের করে আনতেও পারতেন ফখর।