প্লাস্টিক দূষণ রোধঃ শীর্ষ উন্নয়ন সংস্থা ও ব্যবসায়িক অংশীদাররা মিলে জোট গঠন
প্রকাশ : 2023-11-07 18:14:31১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
প্লাস্টিক দূষণের কবল থেকে দেশকে মুক্ত করতে শীর্ষ উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক এবং স্বনামধন্য স্থানীয় ও বহুজাতিক কোম্পানি মিলে এই প্রথম একটি অ্যালায়েন্স গঠন করেছে। ‘বাংলাদেশ সাসটেইনিবিলিটি অ্যালায়েন্স’ (বিএসএ) নামে এই ঐতিহাসিক যাত্রার লক্ষ্য হচ্ছে আমাদের পরিবেশের সুরক্ষা নিশ্চিত করা।
বৃহত্তর পরিসরে এই জোটের অংশীদাররা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার এজেন্ডা নিয়ে কাজ করবে। শীর্ষস্থানীয় নানা ব্র্যান্ড, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, রিসাইকেলের সাথে যুক্ত প্রতিষ্ঠান ও উন্নয়ন সংস্থাকে একত্রিত করে বিএসএ একটি ভ্যালু চেইন প্রতিষ্ঠা করবে এবং প্লাস্টিক দূষণের সমস্যাটির সার্বিক সমাধানের লক্ষ্যে কাজ করবে। সোমবার, ৬ই নভেম্বর রাজধানীর হোটেল ইন্টারকনটিনেন্টালে যাত্রা শুরু করে এই উদ্যোগ।
প্লাস্টিক নিয়ে ঐক্যবদ্ধ কণ্ঠে আওয়াজ তুলে দীর্ঘমেয়াদে প্রভাব সৃষ্টির জন্য নানা ক্ষেত্র থেকে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারদের একত্রিত করা এই উদ্যোগকে ভিন্নমাত্রা দিয়েছে। বৃহত্তর লক্ষ্যে এই উদ্যোগের অংশীদার ব্র্যাক, প্রাণ-আরএফএল, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশ, ম্যারিকো বাংলাদেশ লিমিটেড, বাংলাদেশ পেট্রোকেমিকাল কোম্পানি লিমিটেড, ও ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেড। ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকা এবং পেপসিকো বাংলাদেশও এই অ্যালায়েন্সে যোগ দিয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক বিশেষ দূত ও সাবের হোসেন চৌধুরী, এমপি। তিনি বলেন, “এই অ্যালায়েন্সে ছোট-বড় সকল ধরণের প্রতিষ্ঠানকে যুক্ত করতে হবে। আপনারা হয়তো পথ প্রবর্তক হবেন, তবে এই পথ অনুসরণ করবেন কারা? বড় কর্পোরেট থেকে শুরু করে এসএমই পর্যন্ত সবাইকে এখানে যুক্ত করার একটা ব্যবস্থা করতে হবে। এই উদ্যোগকে আমি সাধুবাদ জানিয়ে এটুকু বলতে পারি যে এতে মন্ত্রণালয়ের সার্বিক অংশগ্রহণ থাকবে।”
ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ্ এবং ইউনিলিভার বাংলাদেশে লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর মোঃ জাভেদ আখতার অনুষ্ঠানের শুরুতেই এই অ্যালায়েন্সের ভূমিকা এবং গঠনের পেছনের ভাবনাগুলো উপস্থাপন করেন।
জাভেদ আখতার বলেন, “২০১৮ সালে পৃথিবী একটি কঠিন বাস্তবতার মুখে পড়ে। যখন মহাসাগরে মাছের চেয়ে প্লাস্টিকের সংখ্যা বেড়ে গিয়েছিল। তখন ইউনিলিভার এই সমস্যার সমাধানে একটি সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ করে। ইতিমধ্যে বিশ্বজুড়ে প্লাস্টিক দূষণের প্রভাব এবং এর সংকট নিয়ে একটা ধারণার সৃষ্টি হয়েছে এবং একে সামগ্রিকভাবে মোকাবেলা করার জন্য ইউনিলিভার সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। এ জন্য উদ্ভাবন, প্যাকেজিং ডিজাইন, পরিবেশ থেকে প্লাস্টিক সংগ্রহ ও পুনর্ব্যবহারে আমরা উৎসাহ দিচ্ছি। আর এর মাধ্যমে টেকসই ব্যবসায়িক কৌশলের সাথে সামঞ্জস্য রেখে নতুন প্লাস্টিকের ব্যবহার কমাতে আমরা বাংলাদেশে নানা রকম পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি।
তিনি বলেন, অন্য বড় প্রতিষ্ঠানগুলোও একই ধরনের অঙ্গীকার গ্রহণ করেছে এবং এই ক্ষেত্রে ইতিমধ্যে আমাদের কিছু অর্জনও আছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে প্রধান বাধাগুলো যদি আমরা অতিক্রম করতে চাই, আমাদের আরো উদ্ভাবনী এবং আরো বড় মাপে সমাধানের নতুন নতুন সূত্র খুঁজতে হবে। এজন্যই এই অ্যালায়েন্স প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বর্জ্যমুক্ত বাংলাদেশ গঠনে সমমনাদের নিয়ে একত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে চায় বিএসএ। আমি আশাবাদী, এই অ্যালায়েন্স এমন পদ্ধতিগত পরিবর্তন আনবে যা সরকারের রূপকল্প ২০৪১ অর্জনের পথকে সুগম করবে।
এই অ্যালায়েন্সের পেছনের গল্প উপস্থাপন করতে গিয়ে আসিফ সালেহ্ বলেন, “এখানে এই ইকোসিস্টেমের বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা ও বেসরকারি অংশীদাররা একত্রিত হয়ে এবং সমস্বরে একটি বার্তা দিতে চায়, পরিবেশকে রক্ষা করার আহ্বান জানাতে চায়, আর এটিই বিএসএ’কে অনন্য করে তুলেছে। আমরা অংশীদারদের নিয়ে বাস্তবে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে চাই এবং এই কার্যক্রমগুলো প্রদর্শনের মাধ্যমে অ্যাডভোকেসি করতে চাই।”
স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক বাংলাদেশের সিইও নাসের এজাজ বিজয় বলেন, “আমরা বিগত ১১৮ বছর ধরে বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছি এবং জলবায়ু পরিবর্তন, সমতা ও বিশ্বায়ন নিয়ে আমাদের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা রয়েছে। পরিকল্পনাগুলো এতটাই বৃহৎ যে এখানে একা কাজ করে কিছু অর্জন করা অত্যন্ত কঠিন। এজন্যই আমরা চাই এসএমই থেকে বহুজাতিক, ফিনটেক থেকে এনজিও পর্যন্ত সকলে সম্মিলিত একটি প্রচেষ্টা চালাতে। এই অ্যালায়েন্সের মত প্ল্যাটফর্ম ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে এই বৃহত্তর লক্ষ্যে সবাইকে একত্রিত করার জন্য।”
বাংলাদেশ পেট্রোকেমিকেল কোম্পানি লিমিটেডের (বিপিসিএল) ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং সিইও খাদেম মাহমুদ ইউসুফ বলেন, “প্লাস্টিক দূষণ হ্রাস করার লক্ষ্যে বিপিসিএলসহ অন্যরা বর্জ্য সরিয়ে, দূষণ কমিয়ে একটি সার্কুলার ইকোনোমি প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছে। অ্যালায়েন্সের অংশীদার হিসেবে বিপিসিএলের লক্ষ্য সহযোগিতা করা, সমাজের মানুষকে সম্পৃক্ত করা, উদ্ভাবন করা এবং নীতিনির্ধারকদের আরও টেকসই উন্নয়নমূলক পলিসি বাস্তবায়নে প্রভাবিত করা।”
বাংলাদেশ সাসটেইনেবিলিটি অ্যালায়েন্সের অংশীদাররা বলেন, "আমরা সকলকে আমন্ত্রণ জানাই আমাদের সাথে যুক্ত হওয়ার জন্য, যেন সবাই মিলে জলবায়ু পরিবর্তন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নত করতে আমাদের সম্পদ ও দক্ষতা কাজে লাগাতে সক্ষম হই।"
ই