প্রিয় দেশ, তুমি কি শুনছো?
প্রকাশ : 2022-08-25 12:07:08১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর নির্মিত চলচ্চিত্র ‘শনিবার বিকেল’ অনেকদিন ধরে আটকা পড়ে আছে সেন্সর বোর্ডে। সেন্সর ছাড়পত্র না পাওয়ায় ছবিটি মুক্তিতে বাধা কাটেনি। ফারুকীর প্রতি সংহতি প্রকাশ করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন গুণী অভিনেতা ও নির্মাতা আফজাল হোসেন। তিনি ফেসবুকে লিখেছেন:
‘‘মোস্তফা সরয়ার ফারুকী অত্যন্ত প্রতিভাবান চলচ্চিত্র নির্মাতা। বিরাট পৃথিবীর চলচ্চিত্র উঠোনে তাঁর চলচ্চিত্র নিয়ে আগ্রহ তৈরি হয়েছে। এমন অর্জনের জন্য বিশেষ যোগ্যতা থাকতে হয়। এই বিশেষ যোগ্যতা তরুণ প্রজন্মের অনেকের রয়েছে বলে বাংলাদেশের নাম বহু আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে সগৌরবে উচ্চারিত হয়।
মুখে মুখে দেশপ্রেম, দেশ নিয়ে গৌরবের কথা বলতে আমাদের বেশ ভালো লাগে। যাদের ভালো লাগে, তারা নিশ্চয় এটাও বুঝি- আমাদের দেশের মানুষ সংগ্রামী, সচেতন এবং সৃষ্টিশীল। এ ধারণা দুনিয়ার মানুষ যত বেশি জানতে পারবে- দেশ, দেশের মানুষ ততই সম্মানিত, বিশেষ হয়ে উঠবে। চলচ্চিত্র, সঙ্গীত, শিল্প সাহিত্য, সংস্কৃতির শক্তিতেই দেশ ও দেশের মানুষ কতখানি সমৃদ্ধ তার প্রমাণ মেলে।
ফারুকীর চলচ্চিত্র ‘শনিবার বিকেল’ অনেকদিন ধরে আটকা পড়ে আছে। শিল্পের বেলায় আটক শব্দটা খুব বিচ্ছিরি ঠেকে। শিল্পী আঁকবার সময়, লিখতে বসে লেখক বা চিত্রনির্মাণের আগে যদি নির্মাতাকে আটকানো মানুষদের চেহারা ভেবে নিতে হয়- তা দুর্ভাগ্য ও দুর্ভোগের।ফারুকীর মন ভালো নেই। অভিনেতা দিলীপ কুমারেরও একদা মনখারাপ হয়েছিল। সে শোনা গল্পটা বলি। দিলীপ কুমার গঙ্গা যমুনা বানিয়েছেলেন ১৯৬১ সনে। এটিই তাঁর প্রথম প্রযোজিত ছবি। নিজের লেখা কাহিনী, নীতিন বোসের সাথে যৌথভাবে পরিচালনাও করেছিলেন।
গঙ্গা যমুনা দুই ভাইয়ের গল্প। দুজনের একজন, গঙ্গা- ছিল ডাকাত। ডাকাত চরিত্রটির ভাষা শুনে তখনকার ভারতীয় সেন্সর বোর্ড বেঁকে বসে। তাঁরা ভেবেছিলেন এ ছবি মুক্তি পেলে হিন্দি ভাষার মহাসর্বনাশ হয়ে যাবে।
দিলীপ কুমার তখন মহাতারকা। তাতে কি, বেচারা বনে গেলেন সিনেমা প্রযোজনা করে। কয়েক মাস ধরে শত প্রকার চেষ্টা সত্ত্বেও কোনও লাভ হচ্ছে না বুঝে যোগাযোগ করেন ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে। ইন্দিরা প্রধানমন্ত্রীর কন্যা। সে পরিচয় ছাড়াও নিজের আলাদা একটা অস্তিত্ব তখন গড়ে তুলেছেন। তাঁর সাথে দেখা ও আলাপ আলোচনায় কাজ হয়।
মুক্তির পর থেকে আজ অবধি ভারতীয় চলচ্চিত্রের তালিকায় গঙ্গা যমুনা বিশেষ হয়ে আছে। হিন্দি ভাষার কোনো ক্ষতি এ চলচ্চিত্রের দ্বারা ঘটেনি।
জগতে স্বপ্ন দেখার মানুষ আছে, আছে দুঃস্বপ্ন দেখা, দেখানোর মানুষও। যে মানুষ স্বপ্ন দেখে- দেখতে চায়, দেখা উপভোগ করে বলে দেখতে পায়। ভয়, দুশ্চিন্তায় কাটানো মানুষের দিন ও রাত দুঃস্বপ্নে কাটবারই কথা।
সৃষ্টিকর্তাকে খুব কৌতুকপ্রিয় মনে হয়। দুনিয়ার সকলের মধ্যে তিনি স্বপ্ন দেখবার সাধ্য দিতে পারতেন। দেননি। দাবার ছকের মতো সাদা কালোকে মুখোমুখি রেখেছেন। তবে সান্ত্বনা ও আনন্দের কথা এই- কোনও সৃজনশীল মানুষ দ্বারা কখনোই মানুষের অনিষ্ট ঘটাননি। সৃজন দ্বারা চিরকালই মানুষের উপকার হয়েছে।’’
আফজাল হোসেননের স্ট্যাটাসটি শেয়ার করে ফেসবুকে ফারুকী লিখেছেন, ‘‘যখন গুণী মানুষ কথা বলেন, আমরা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনি। প্রিয় দেশ, তুমি কি শুনছো?’’