প্রশাসনিক জটিলতায় অলিম্পিকে যেতে না পেরে জিনাতের ক্ষোভ
প্রকাশ : 2024-07-13 11:30:45১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
দুইবার নিউ ইয়র্ক সিটির রিং মাস্টারের টুর্নামেন্ট জয়, দুইবার জাতীয় স্বর্ণপদক জয়, গেল বছর যুক্তরাষ্ট্রে নারী বক্সিং চ্যাম্পিয়নশিপ জয়, চলতি বছরে ডোমিনিকান রিপাবলিক ওপেন, কোপা ইনডিপেনডেনসিয়া টুর্নামেন্ট ঘুরে সবশেষ দক্ষিণ আফ্রিকার ডারবানে ইতিহাস গড়েন জিনাত ফেরদৌস। সেখানে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ম্যান্ডেলা কাপে স্বর্ণপদক জেতেন তিনি। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী এই বক্সারের স্বপ্নকে ধূলিসাৎ করে দিয়েছে বাংলাদেশ বক্সিং ফেডারেশন, এমনটাই অভিযোগ তুলেছেন তিনি। জিনাতের ইচ্ছা ছিল প্যারিস অলিম্পিকে বাংলাদেশকে তুলে ধরবেন। কিন্তু ফেডারেশনের দায়িত্বহীনতার কারণে বৈশ্বিক এই টুর্নামেন্টে অংশ নিতে পারছেন না বলে অভিযোগ তুলেছেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে সরগরম হয়ে উঠেছে বৈশ্বিক গণমাধ্যমও। নিউ ইয়র্ক থেকে ফক্স ফাইভ রীতিমতো বিস্ময় প্রকাশ করেছে এই ঘটনায়।
২০১৭ সালে নিজের স্বামীর বিরুদ্ধে বক্সিং দিয়ে এই পেশায় হাতেখড়ি হয়েছিল জিনাতের। ২০১৯ সাল থেকে সেটিকে পেশাদারিত্বের মোড়কে রূপান্তর ঘটান তিনি। এরপরে বড় কোনো আসরে বাংলাদেশকে তুলে ধরার স্বপ্ন দেখেন তিনি। সেজন্য এবারের প্যারিস অলিম্পিকের মঞ্চকেই বেছে নেন। কিন্তু ফেডারেশন থেকে বাছাইপর্বে রেজিস্ট্রেশন না করা ও শেষে ওয়াইল্ডকার্ডের জন্য আবেদন না করায় জিনাত অলিম্পিকে অংশ নিতে পারছেন না। জিনাত বলেছেন, ‘আপনারা হয়তো অনেকেই জানেন, গত দুই বছর ধরে আমার লক্ষ্য ছিল প্যারিস অলিম্পিকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা। কিন্তু কিছু ত্রুটির কারণে বাছাইপর্বে অংশগ্রহণ করতে পারিনি। তবু আশা ছাড়িনি। ভেবেছিলাম ওয়াইল্ডকার্ডে মাধ্যমে যেতে পারব। সেখানেও হতাশ হলাম। প্রশাসনিক জটিলতার কারণে আমাকে নির্বাচিত করা হয়নি, এমনটাই জানানো হয়েছে।’
জিনাত ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘একজন ক্রীড়াবিদের জন্য এটি একটি আশ্চর্যজনক ঘটনা। বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য। আমি নিজেকে প্রস্তুত করার জন্য দিনে দুইবার প্রশিক্ষণ নিয়েছি। তবে এখন বুঝলাম, শুধুমাত্র প্রশিক্ষণ এবং প্রতিযোগিতার চেয়ে আরও অনেক কিছু আছে। এসব আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং অপরাজনীতি ক্রীড়াবিদদের অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করে। তাদের সামান্য অবহেলা এভাবে একজন ক্রীড়াবিদের স্বপ্ন ধ্বংস করে দেয়।’ আক্ষেপ করে বলেছেন, ‘আমি বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করতে এবং প্রথম বক্সার হিসেবে একটি ইতিবাচক প্রভাব রাখতে চেয়েছিলাম। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের দেশ ছোট হলেও অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। এই জায়গা থেকে আমাদের একটু অনুপ্রেরণা দরকার। আমি সত্যিই ভেবেছিলাম, আমি সেই অনুপ্রেরণা হতে পারব। কিন্তু আমার সঙ্গে যা ঘটেছে সেটি নিয়ন্ত্রণের বাইরে। শেষ মুহূর্তে এসে সমস্ত স্বপ্ন শেষ হয়ে গেল।’
৪০ বছরের অভিজ্ঞ প্রশিক্ষক কলিন মরগান জিনাতের দক্ষতায় মুগ্ধ হয়েছিলেন। ২০১৯ সালে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এই বক্সারকে দেখে তিনি বলেছিলেন, ‘মেয়েটি কীভাবে এত দক্ষতার সঙ্গে বক্সিং চালিয়ে যাচ্ছে! আমার তখনই মনে হয়েছিল, সে কিছু করতে পারবে। এরপর তাকে আমি প্রশিক্ষণ দিয়েছি। সে দীর্ঘদিন ধরে অলিম্পিকের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল। কিন্তু এখন সে অংশ নিতে পারছে না। এটা তার জন্য খুবই কষ্টদায়ক।’ এই ঘটনাকে জিনাত হৃদয়বিদারক বলে উল্লেখ করেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হলেও এই দেশটি আমাকে বাংলাদেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করার অনুমতি দেয়। আমি চেয়েছি বাংলাদেশের ঐতিহ্য তুলে ধরতে ও নারী ক্রীড়াবিদদের এগিয়ে আসার পথকে ত্বরান্বিত করতে।’
ফেডারেশনের ভিন্ন সুর
দক্ষিণ আফ্রিকায় জিনাতের স্বর্ণপদক পাওয়ার খবরে বাংলাদেশ বক্সিং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম তুহিন সে সময়ে বলেছিলেন, ‘জিনাতের স্বর্ণপদক জয় দেশের বক্সিংয়ের জন্য অনেক বড় একটি সফলতা। তার স্বর্ণ জয়ই দেশের সেরা সাফল্য। জিন্নাতের পারফরম্যান্স, অভিজ্ঞতা ও ফাইটিং দক্ষতা খুবই ভালো।’ তবে এবার তার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সুর বদলে গেছে ফেডারেশনের। গতকাল মাজহারুল ইসলাম তুহিন বলেছেন, ‘অলিম্পিকের বাছাই প্রক্রিয়া সম্পর্কে সকলেই জানে। পাড়া-মহল্লার কেউ এসে কিছু বললেই হয়ে যায় না। আমরা কী করেছি এর প্রমাণ আমাদের কাছে আছে। আমরা র্যাংকিংয়ের ভিত্তিতে কাজ করি।’ জিনাতের অভিযোগের সত্যতা নিয়ে জানতে চাইলে ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘এই বিষয়ে অলিম্পিকে খোঁজ নিয়ে দেখেন। সেখানে খোঁজ নিলেই জানতে পারবেন আমরা কী করেছি, কী করিনি। এছাড়া এই বিষয়ে বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন বিস্তারিত বলতে পারবে।’ বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজা বলেন, ‘আমাদের কাজ তো এটা না। ফেডারেশন থেকে যে নামগুলো দেওয়া হয় আমরা সেগুলো চূড়ান্ত হওয়ার পরে জানতে পারি। কারও নাম সংযুক্ত কিংবা বাদ দেওয়ার দায়িত্ব আমাদের না।’