পুলিশ নিজেদের ব্যর্থতা ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের আড়ালের চেষ্টা করছে: ফখরুল

প্রকাশ : 2022-04-23 14:38:15১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

পুলিশ নিজেদের ব্যর্থতা ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের আড়ালের চেষ্টা করছে: ফখরুল

রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ নিজেদের ব্যর্থতা ও জড়িত ছাত্রলীগ কর্মীদের আড়াল করার চেষ্টা করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ শনিবার দুপুর ১২টায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।

ফখরুল বলেন, টানা দুদিন নিউমার্কেট এলাকায় ব্যবসায়ী ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষে ২ জন নিহত ও সাংবাদিকসহ অনেকে আহত হওয়ার ঘটনায় বিএনপি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন ও বিক্ষুব্ধ। এই ঘটনা প্রমাণ করেছে, দেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি কতটা নাজুক। পুলিশের উপস্থিতির মধ্যে ভয়াবহ হামলা-পাল্টা হামলা, মারাত্মক অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত হেলমেট পরিহিত সন্ত্রাসী পিটিয়ে মানুষ মারছে অথচ পুলিশের নিষ্ক্রয়তার জন্য জনগণের মধ্যে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। নিউমার্কেট এলাকায় ব্যবসায়ী ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় হেলমেটধারী প্রকৃত সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার না করে বিএনপি নেতা মকবুলকে গ্রেপ্তার এবং ২৪ জন বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতার নাম উল্লেখ করে প্রায় ১ হাজার ২০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করায় বিএনপি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ-ক্ষোভ প্রকাশ করছে।

বিএনপি মনে করে, এই অবৈধ সরকার পুনরায় তাদের পুরোনো খেলায় মেতে উঠেছে। টানা ২ দিনে সংর্ঘষ বন্ধ করতে না পারায় পুলিশের নিষ্ক্রয়তা ও উদাসীনতাকে যখন জনগণ দায়ী করছে, সেই সময় সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নিরপরাধ বিএনপি নেতা মকবুলকে গ্রেপ্তার ও অন্যন্যদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে পুলিশ নিজেদের ব্যর্থতা ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের আড়াল করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে, বলেন তিনি।

ফখরুল আরও বলেন, গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে যে সত্যটি উদঘটিত হয়েছে, হামলাকারীরা ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী। ভিডিও ফুটেজ থেকে অন্তত ৩ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে, তাদের নামও এসেছে। তারা ঢাকা কলেজের ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী। গণমাধ্যমের রিপোর্টে এটা স্পষ্ট, প্রধানত চাঁদাবাজির কারণে ও নিজেদের প্রভাব বিস্তারের জন্য ছাত্রলীগের বিভিন্ন গ্রুপের ভয়াবহ সন্ত্রাসীরা এই ঘটনার জন্য দায়ী। শুধু এই ঘটনাই নয়, নিউমার্কেটসহ পাশের এলাকাগুলোর দীর্ঘদিন ধরেই শাসক গোষ্ঠীর ছাত্র-ছায়ায় ব্যাপক চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপ সংঘটিত হচ্ছে। ছাত্রলীগ, যুবলীগ পুলিশের সহায়তায় অপরাধ জগত গড়ে তুলছে। এই পুরো এলাকাটা ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণে। এমনকি ছাত্রলীগের সভাপতি-সম্পাদক তাদের বরাদ্দকৃত রুম তারা সাবলেট করে ভাড়া দেয়। ছাত্রলীগের সুনির্দিষ্ট কমিটি ঢাকা কলেজে না থাকার কারণে ওই এলাকায় অনেকগুলো গ্রুপ আছে। সেই গ্রুপগুলোর মধ্যে বিরোধের কারণে এ ধরনের ঘটনা প্রায়ই ঘটে।

বিএনপি মনে করে, সরকারের সীমাহীন দুর্নীতি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে সর্বক্ষেত্রে ব্যর্থতার বিরুদ্ধে যখন জনগণ বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে তখন জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করার জন্য সরকার উদ্দেশ্যমূলকভাবে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটিয়ে বিএনপিকে জড়াচ্ছে। সরকার পূর্বের মতোই মামলার বেড়াজালে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বন্দি করার চক্রান্ত করছে। মামলা, গ্রেপ্তার, গুম, খুন, হত্যা এই সরকারের প্রধান অস্ত্র, যা দিয়ে বিএনপিকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করছে। বর্তমান অনির্বাচিত আওয়ামী লীগ সরকার গত ১ যুগ যাবৎ অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকার জন্য রাষ্ট্রের সব যন্ত্রকে ব্যবহার করে জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। জনগণের জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই, ব্যবসার কোনো পরিবেশ নেই। বিচার বিভাগকে দলীয়করণ করা হয়েছে। দুর্নীতিকে প্রতিষ্ঠানিকরণ করা হয়েছে। মানবাধিকার চরমভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে। সংবিধানকে লঙ্ঘন করে একের পর এক নিবর্তনমূলক আইন প্রণয়ন করে একটা ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে, বলেন তিনি।

বিএনপি নেতা মকবুল হোসেনের মুক্তি, মামলা প্রত্যাহার ও প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, নিউমার্কেটের সন্ত্রাসী সংঘর্ষ, পুলিশের ভূমিকা এবং পরবর্তীতে বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার ও মামলা দায়ের আবারও প্রমাণ করল আওয়ামী লীগ সরকার ভয় দেখিয়ে, নির্যাতন করে, হত্যা করে ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে চায়।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, মকবুল হোসেনের মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে আগামী ২৬ এপ্রিল ঢাকাসহ সব মহানগরে প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হবে।