পিডিপি’র উদ্যোগে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনে রাজনৈতিক দলের করনীয় শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

প্রকাশ : 2025-11-15 15:21:23১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

পিডিপি’র উদ্যোগে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনে রাজনৈতিক দলের করনীয় শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

আজ শনিবার ১৫/১১/২০২৫ইং সকাল এগারোটায় শিশু কল্যান পরিষদ, তোপখানা রোড, ঢাকায় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনে রাজনৈতিক দলের করনীয় শীর্ষক আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রগতিশীল গজণতান্ত্রিক দল (পিডিপি)'র মহাসচিব হারুন আল রশিদ খান। অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (এমএল)'র সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কমরেড হারুন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক কমরেড খান মোঃ নুরে আলম, সমাজতান্ত্রিক মজদুর পার্টির  সাধারণ সম্পাদক কমরেড ডাঃ সামছুল আলম, সোস্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির আহবায়ক আবুল কালাম আজাদ, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল (পিডিপি)'র ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল বারী ভাইস চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম, ভাইস চেয়ারম্যান নুরে আলম সিদ্দিকী, ভাইস চেয়ারম্যান আরব আলী, যুগ্ম মহাসচিব কাজি আদনান তাজিম তুষার সঞ্চালনা করেন যুগ্ম মহাসচিব মোঃ আমানতউল্লা আমান প্রমুখ।

বক্তাগন বলেন, এযাবৎ কাল বিশ্বে রাষ্ট্র শাসন ব্যবস্থায় যত গুলো পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়ে এসেছে তাঁর মধ্যে উত্তম হলো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কাঠামো। কট্টর উগ্র ডান কিংবা বাম পন্থার রাষ্ট্র গুলোতে ভিন্নমতের নাগরিকদের জীবন অতিষ্ঠ করে তুলে। তাকে নিজ ভূমে পরবাসী হয়ে থাকতে হয় নয়তো উদ্বাস্তু হয়ে নিজ দেশ ছেড়ে অন্য কোথাও আশ্রয় নিতে হয়। শুধু মত প্রকাশের জন্য নিপীড়ন নির্যাতন হামলা মামলার শিকার হয়ে কারাগারে জীবন অতিবাহিত করতে হয়। আমরা দেখতে পাই সারাবিশ্বে যে রাষ্ট্র গুলোর শাসন কাঠামো যত শক্ত গণতান্ত্রিক ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত সেই রাষ্ট্র গুলো তত উন্নত ও নাগরিক জীবন সমৃদ্ধ। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রই সকল ভিন্নমত ধর্ম ভাষা বর্ণ ও আদর্শের নাগরিককে সমান অধিকার নিয়ে বসবাস করতে পারে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সংখ্যাগুরু সংখ্যালঘু উপেক্ষিত, আইন এবং নাগরিক অধিকার সবার জন্য সমান। রাষ্ট্রের উপাদানঃ ভূখন্ড, জনগণ, সরকার ও সার্বভৌমত্ব। গণতন্ত্রের মূলমন্ত্র সাম্য, স্বাধীনতা ও ভাতৃত্ব।

নেতৃবৃন্দ বলেন, গণতন্ত্র দুই প্রকার, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ গণতন্ত্র। আধুনিক বিশ্বে প্রত্যক্ষ গণতন্ত্রের প্রচলন নেই, পরোক্ষ গণতন্ত্র যা জনগণের প্রত্যক্ষ অথবা জনগণ কতৃক নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির শাসন। যে শাসনব্যবস্থায় রাষ্ট্রের শাসনক্ষমতা জনগণের হাতে থাকে, তাকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বলা হয়। এখানে জনগণই চূড়ান্ত ক্ষমতার অধিকারী এবং তারা ভোটের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচন করে সরকার গঠন করে, যা জনগণের কল্যাণেই পরিচালিত হয়। এই ধরনের রাষ্ট্রে সকলেরই স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের এবং শাসনে অংশগ্রহণের অধিকার থাকে। গণতন্ত্রের ইতিহাস অতি প্রাচীন হলেও খৃষ্টপূর্ব ৫০৮-৫০৭ সালে প্রাচীন গ্রীক রাজনীতিবিদ ক্লিসথেনিস কে গণতন্ত্রের জনক বলা হয়। সক্রেটিস প্লুটো এরিস্টটল থেকে মেকিয়াভেলি হয়ে আধুনিক গণতন্ত্রের জনক জন লক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কাঠামো বিনির্মানের রাজনৈতিক নেতৃত্বের ধারা বয়ে গেছেন। বৃটিশ ঔপনিবেশিক আমল পার করে সাতচল্লিশ পরবর্তী অবিভক্ত পাকিস্তানে বাঙ্গালী জাতি তাঁর অধিকার আদায়ের  আন্দোলন ৫২ এর ভাষা ৫৪ যুক্তফ্রন্টের ভূমিধস বিজয় ৬ দফা ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান ৭০ এর নির্বাচন ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লক্ষ শহীদের এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের জন আকাঙ্ক্ষা ছিল গণতন্ত্র।

তারা আরো বলেন, অত্যান্ত দুঃখজনক ও পরিতাপের বিষয় স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরেও যখনই যাঁরাই  রাষ্ট্র ক্ষমতা হোক সেটা নির্বাচনের মাধ্যমে অথবা অন্য উপয়ে কুক্ষিগত করেছে। তারা গণতন্ত্রের গলা টিপে ধরেছে। আজও গণতন্ত্র সুশাসনের জন্য নাগরিক কে রাজপথে রক্ত দিতে হয়। নিপীড়ন নির্যাতনের স্টিমরোলার চালানো হয় সাধারণ নাগরিকের উপর। খুন গুম মামলা হামলার শিকার হতে হয়। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনে ব্যর্থতাই সব সংকটের মূল। রক্তাক্ত জুলাই ২৪ গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী জন আকাঙ্ক্ষা ছিলো ফ্যাসিবাদের চির অবসান। পুরনো মাফিয়াতন্ত্রের কবর রচনা করে নতুন রাজনৈতিক বন্দবস্ত প্রতিষ্ঠা করা। বাক স্বাধীনতা, অবাধ তথ্যপ্রবাহ, স্বচ্ছতা জবাবদিহিতা, সুশাসন দুর্নীতিমুক্ত বৈষম্যহীন সমৃদ্ধ নাগরিক সুরক্ষা।  অরাজনৈতিক ড. ইউনুস ও ড. আলী রিয়াজ গংয়েরা রাষ্ট্র সংস্কারের যে গুরুদায়িত্ব স্বপ্রণোদিত ভাবে নিয়েছিল তা স্বাভাবিক ভাবেই ব্যর্থ হয়েছে। কারণ তাদের এদেশের সাধারণ জনগণের সাথে কোন সম্পর্ক নাই। মুষ্টিমেয় উচ্চবিত্ত উচ্চ শিক্ষিত শ্রেনীর প্রতিনিধি এঁরা দেশের পঁচানব্বই ভাগ দরিদ্র মানুষের যাপিত জীবন সম্পর্কে জানলেও বৈষম্য জিইয়ে রাখার কুশীলব এঁরাই। উদাহরণ হিসেবে এই যে জুলাই সনদ ও সংস্কারের নামে গণভোটের আয়োজন আশি শতাংশ সাধারণ ভোটার চারটি বিষয়ে হাঁ বা না বুঝে না-কি না বুঝেই ভোট প্রয়োগ করবে। কোন বিষয় চাপিয়ে দেওয়াই হলো স্বৈরতন্ত্র। এঁদের কর্মকান্ডে রাজনৈতিক দলের প্রতি একটি নেতিবাচক ধারণা জনমনে প্রচারের চেষ্টা প্রতিয়মান। সুক্ষ্ম ভাবে বিরাজনীতিকরণের গভীর চক্রান্ত পরিলক্ষিত হয়। অথচ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে রাজনৈতিক দলই জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সরকার গঠন করে এবং নীতিগত প্রস্তাবনা উপস্থাপন করে। এছাড়াও, রাজনৈতিক দলগুলো নতুন নেতৃত্বের বিকাশ ঘটায় এবং সরকার ও জনগণের মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী হিসেবে কাজ করে। এমতাবস্থায় দুর্নীতি মুক্ত, স্বচ্ছ জবাবদিহি, সুশাসন বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের দায় কোন অরাজনৈতিক সুশীল নয় রাজনৈতিক দল ও দলের নেতৃত্ব কেই নিতে হবে।