পাল্টা হামলা চালাতে দেরি করল যুক্তরাষ্ট্র
প্রকাশ : 2024-02-04 15:43:06১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
জর্ডানে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটি টাওয়ার ২২ – এ ড্রোন হামলায় তিন সৈন্য নিহত হওয়ার প্রায় এক সপ্তাহ পর ইরান-সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সিরিয়া ও ইরাকে পাল্টা হামলা করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
গত বেশ কিছুদিন ধরেই হামলা শুরু হবে এমন ধারণা করা হচ্ছিল এবং এই সময়ের মধ্যে বাইডেন প্রশাসন তাদের বিরোধী রিপাবলিকানদের কাছ থেকে নানা প্রশ্ন ও সমালোচনায় জর্জরিত হতে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের আক্রমণের সময় ও শক্তির মাত্রা নিয়েও প্রশ্ন তোলে রিপাবলিকানরা। কিন্তু কূটনীতি বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই কৌশল ইরানকে তাদের লোকজন সরিয়ে নিতে সাহায্য করে, যা যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে সম্ভাব্য বড় সংঘর্ষ এড়িয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যের প্রতিরক্ষা বিষয়ক সাবেক ডেপুটি অ্যাসিসট্যান্ট সেক্রেটারি মাইক মুলরয় বলছেন, ‘এটা ইরান সমর্থিত গোষ্ঠীগুলোকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর ওপর হামলার সক্ষমতা কমিয়ে দেবে। যদিও এটা তাদের ভবিষ্যৎ হামলা বন্ধ করবে না।’
তিনি বলেন, এর ফলে যেটা লাভ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে ‘সরাসরি যুদ্ধ এড়ানো গেল’।
ইরাক ও সিরিয়ায় ইরানের ইসলামিক বিপ্লবী গার্ড কুদস ফোর্স এবং সহযোগী অন্যান্য সশস্ত্র বাহিনীর ওপর মোট সাতটি অঞ্চলে হামলা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা বলছেন, তাদের বোমারু বিমান মোট ৮৫টি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করেছে।
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ‘যারা আমাদের ক্ষতি করতে চায় তারা সবাই জানুক, যদি আপনি কোনও আমেরিকানের ক্ষতি করেন, আমরা সেটার জবাব দেব।’
জর্ডানে হামলার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ইরান সমর্থিত জঙ্গি গোষ্ঠী, দ্য ইসলামিক রেসিসট্যান্স ইন ইরাককে দায়ী করে এসেছে। এই গোষ্ঠীকে ইরান অস্ত্র, অর্থ ও প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে বলে মনে করা হয়। ইরান এই হামলার সাথে নিজেদের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেছে।
প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা কর্মকর্তারা বলছেন, আরও আগে এই পাল্টা হামলা হওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল আবহাওয়া। শুক্রবার ছিল হামলা চালোনোর জন্য সবচেয়ে উৎকৃষ্ট পরিবেশ। যদিও হোয়াইট হাউস ও পেন্টাগন বারবার বলে এসেছে, তারা হামলার আগে সেটি প্রচার করাটা এড়িয়ে গেছে।
কিন্তু বিশেষজ্ঞদের বিশ্বাস তারা সেটাই আসলে করেছে – যাতে ইরানের সাথে বড় রকমের সংঘর্ষ এড়ানো যায়। অ্যারাবিয়ান গালফ স্টেটস ইনস্টিটিউট অব ওয়াশিংটনের ফেলো হুসেইন ইবিশ বিবিসিকে বলেন, ‘এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র আসলে ইঙ্গিত দিচ্ছে, তারা ইরানের ভেতরে কোনও হামলা করবে না।’
অন্যদিকে মাইক মুলরয় বিবিসিকে বলেন, এটার যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে যে যুক্তরাষ্ট্র যেসব স্থাপনায় হামলা করবে, সেখান থেকে ইরানের বিপ্লবী গার্ডের সদস্যদের চলে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে।
তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন ইরানের মতো একটা দেশের সাথে বড় রকমের সংঘাত এড়াতে যুক্তরাষ্ট্রকে তার সীমাটা ঠিকভাবে মেনে চলতে হবে। ‘টেলিগ্রাফ’ বা আগে জানিয়ে দেওয়াটা হয়তো যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ‘যথাযথ’ কৌশল এই হামলার ক্ষেত্রে।
ওয়াশিংটন-ভিত্তিক ফাউন্ডেশন ডিফেন্স অব ডেমোক্রেসির সিনিয়র ডিরেক্টর ব্রাডলি বাউম্যান বলছেন, ‘এটা ঠিক কঠোরও না আবার নরমও না’। তিনি বলেন, ‘এটি তাদের খানিকটা পিছিয়ে দেবে আমাদের সৈন্যদের ওপর হামলার ক্ষেত্রে, কিন্তু সেটার মাত্রা এতটাও না যে তারা একটা বড় সংঘাতের প্রয়োজন দেখবে, এতে করে আঞ্চলিক যুদ্ধও এড়ানো যাবে।’
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় কাউন্সিলের মুখপাত্র জন কারবি গত শুক্রবার বলেন, ওয়াশিংটন আর ‘ভবিষ্যৎ হামলার বিষয়ে টেলিগ্রাফ করবে না’। একই সাথে নিশ্চিত করেন, সামনে এরকম আরও হামলা চালানো হবে। তিনি বলেন, ‘এটা কেবল তাদের পাল্টা হামলার প্রথম পর্ব।’
যদিও কংগ্রসে রিপাবলিকানরা দ্রুতই ইরানের প্রতি নমনীয় আচরণের জন্য বাইডেনের কৌশলের সমালোচনা করেন। স্পিকার মাইক জনসন রিপাবলিকানদের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী কংগ্রেসম্যান। এ হামলার পর তিনি বলেন, ‘জনসমক্ষে নানা রকম ইঙ্গিত ও অতিমাত্রার সংকেত পাঠিয়ে, গত কয়েক মাস ধরে আমাদের ওপর হামলা হয়েছে।’
কংগ্রেসম্যান বায়রন ড্যানিয়েলস অনলাইনে লিখেছেন, ‘এই হামলা সেদিনই হওয়া উচিত ছিল যেদিন আমাদের কর্মী মারা যায়।’
সামাজিক মাধ্যম এক্সে আরাকানসাসের সিনেটর টম কটন লিখেছেন, বাইডেনের এই প্রতিক্রিয়া ‘অন্ত:সারশূন্য’। তিনি দাবি করেন, ‘এটা আয়াতোল্লাহকে আরও শক্তিশালী করবে।’
তিনি লেখেন, ‘ইরানিয়ানদের ওপর আরেকটু শক্তিশালী, ধ্বংসাত্মক হামলা আয়াতুল্লাহকে ভয় পাইয়ে দেবে।’
অন্যদিকে বাইডেনের তুলনায় আগের রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রেগ্যান ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরও বেশী আক্রমণাত্মক জবাবের কথা মনে করিয়ে দেন সিনেটর মার্কওয়েন মুলিন।
কিন্তু ইবিশ বলছেন, আরেকটু জটিল সংঘাতে জড়িয়ে বাইডেন প্রশাসন আসলে নিজ দেশে রাজনৈতিকভাবে চাপে পড়া এড়ানোর চেষ্টা করেছে। তিনি বলেন, ‘যদি তারা ইরানে হামলা করতো তাহলে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো রিপাবলিকান নেতারা বাইডেনকে যুদ্ধংদেহী বলে সম্বোধন করতো।’
তার ভাষায়, ‘এটা একটা রাজনৈতিক ফাঁদ, সবার সামনেই এমন ফাঁদ আসে, তারা এই ফাঁদে পড়া এড়িয়েছেন।’
সা/ই