পাইলট সংকটে ভুগছে বাংলাদেশ বিমান

প্রকাশ : 2024-12-01 16:10:10১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

পাইলট সংকটে ভুগছে বাংলাদেশ বিমান

পাইলট সংকটে ভুগছে বাংলাদেশ বিমান। উড়োজাহাজের সংখ্যা অনুযায়ী যত জন থাকার কথা, বিমান চলছে তার অর্ধেকের কমসংখ্যক পাইলট নিয়ে। আর এই সংকটের কারণে আন্তর্জাতিক নিয়ম লঙ্ঘন করেই আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করতে হচ্ছে সংস্থাটিকে। নিয়ম অনুযায়ী, একজন পাইলট বছরে সর্বোচ্চ ১ হাজার ঘণ্টা ডিউটি করার কথা। সেখানে কখনও ১ হাজার ৪০০ ঘণ্টা, আবার কখনও ১ হাজার ৬০০ ঘণ্টাও ডিউটি করানো হচ্ছে বিমানের পাইলটদের। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিজেদের পাইলট সংকটের কথা বলে সিভিল এভিয়েশনের কাছ থেকে ১২০০ ঘণ্টার অনুমতি নেয় বিমান। এই অনুমতির বাইরেও চার থেকে পাঁচশো ঘণ্টা ডিউটি করানো হচ্ছে পাইলটদের। অতিরিক্ত ডিউটির চাপে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন কেউ কেউ।

গত ১৬ মার্চ অসুস্থ অবস্থায় পাইলটকে দিয়ে ডিউটি করানোর কারণে কলকাতা থেকে তাকে ফিরে আসতে হয়। ওই ঘটনায় বিপুল অংকের টাকা জরিমানাও গুণতে হয় বিমানকে। এ বিষয়ে এভিয়েশন খাতে দীর্ঘদিন কাজ করা খায়রুল আলম ভুঁইয়া বলেন, ‘এটি ভয়ানক তথ্য। অসুস্থ পাইলটকে দিয়ে উড়োজাহাজ পরিচালনা খুবই ভয়ংকর কথা। এখানে যাত্রীর নিরাপত্তা বলতে কিছু থাকে না, তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়ার শামিল।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ বিমান কর্তৃপক্ষ সব আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনেই ফ্লাইট অপারেশন করবে এটাই চাই। নয়তো সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে ২১টি অত্যাধুনিক উড়োজাহাজ রয়েছে। এগুলো হলো— এটিআর, ড্যাশ এইট, বোয়িং ৭৩৭, ৭৮৭ এবং বোয়িং ৭৭৭। কিন্তু আইএটিএ (ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন) নিয়ম অনুযায়ী এই সংখ্যক উড়োজাহাজের জন্য ৩২১ জন পাইলট থাকা আবশ্যক। কিন্তু বিমানের রয়েছে ১৫০ জন; অর্থাৎ অর্ধেকেরও কম।

সূত্র বলছে, ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অরগানাইজেশন (আইকাউ), ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনসহ (এফএএ) অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী কোনও দেশেই বাণিজ্যিক বিমান পরিচালনাকারী কোনও বৈমানিক বছরে ৯০০ থেকে ১ হাজার ঘণ্টার অধিক বিমান পরিচালনা করতে পারে না। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স শুধু ১ হাজার ২০০ ঘণ্টায় নয়, এর অতিরিক্ত সময়েও নিয়ম ভঙ্গ করে ফ্লাইট পরিচালনা করিয়েছে।

বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশনে মৌখিকভাবে অভিযোগ দিয়েও কোনও সুফল পাননি বিমানের বৈমানিকরা। গত মার্চ মাসে বাংলাদেশ বিমানের চিফ পাইলট প্লানিং অ্যান্ড শিডিউলের ক্যাপ্টেন ইশতিয়াক নিজেই তৎকালীন বিমানের এমডিসহ বিভিন্ন উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের ই-মেইলের মাধ্যমে অবগত করেন, বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশনের নিয়ম মেনে বৈমানিকদের শিডিউল করা সম্ভব হচ্ছে না। তথা এফডিটিএল (ফ্লাইট ডিউটি টাইম লিমিটেশন) ভঙ্গ করা হচ্ছে।

এমনকি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের এই অনিয়মের বিষয়টি আইকাউ-এর অডিটেও সম্প্রতি উঠে এসেছে। যেখানে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশনের সঠিক নজরদারি না থাকার কারণে এই বড় বড় অনিয়মগুলো করার সুযোগ পাচ্ছে বিমান। গত ২-৩ বছর ধরে বিমান বাংলাদেশ এফডিটিএল ভায়োলেশন, নিয়োগ, প্রশিক্ষণ, চেকিংয়ে বিমানের অনিয়ম থাকলেও সেগুলো দেখেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

জানা যায়, এই আইন ভঙ্গ করা এত বড় অপরাধ যে, প্রতিটি বৈমানিক এবং বিমান সংস্থাকে মডারেট পেনাল্টি করার বিধান রয়েছে। এমনকি বিমান পরিচালনা সংস্থার অনুমতিপত্র বাতিল পর্যন্ত করে দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে আন্তর্জাতিক সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের। নিয়মবহির্ভূতভাবে অত্যধিক ফ্লাইট পরিচালনা করায় বাংলাদেশ বিমানের বহু বৈমানিক হার্ট অ্যাটাক এবং শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন। এমনকি অসুস্থ শরীর নিয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে ফ্লাইট পরিচালনা করার দৃষ্টান্ত রয়েছে বিমানের বৈমানিকদের। যার ফলে মানসিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বিমানের বৈমানিকরা।

অপরদিকে একজন বৈমানিক মানসিক বা শারীরিকভাবে অসুস্থতা নিয়ে যখন ফ্লাইট পরিচালনা করে তখন উড়োজাহাজ এবং যাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা থেকেই যায়। এমনকি গত ১৬ মার্চ বিমান উড্ডয়নের পর কলকাতার আকাশে এক বৈমানিক অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় জরুরি ভিত্তিতে বিমানটি আবার ঢাকায় ফেরত আসে এবং ৬ ঘণ্টা বিলম্বে ফ্লাইটটি আবার যাত্রা শুরু করে।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিমানের একাধিক বৈমানিকরা বলেন, অসুস্থতা থাকার পরও বিমানের ফ্লাইট পরিচালনা করতে হয়। বৈমানিক স্বল্পতা তো রয়েছেই বিমানে। দীর্ঘদিন ধরেই কর্তৃপক্ষ গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়ে কোনও পদক্ষেপই নিচ্ছেন না।

নাম প্রকাশ করে সংবাদপত্রে বক্তব্য প্রদানে বিধিনিষেধ থাকার কারণে অন্যান্য কর্মকর্তা জনসংযোগ বিভাগে কথা বলার অনুরোধ করেন। পরে এ বিষয়ে জানতে বিমানের জনসংযোগ বিভাগে যোগাযোগ করা হলে বিমান জনসংযোগ মহাব্যবস্থাপক বোসরা ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের পাইলটের সংকট রয়েছে। তারাই এটি ম্যানেজ করে চালিয়ে নিচ্ছেন। তবে খুব বেশি দিন এই সংকট থাকবে না।’

 

সান