পশ্চিমাদের তোয়াক্কা না করে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে বাংলাদেশ
প্রকাশ : 2023-11-20 11:57:10১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
ফিলিস্তিনে গণহত্যা, মানবতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধ করেই চলেছে দখলদার ইসরায়েল। গত ৭ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত নয় হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। নিহতদের মধ্যে প্রায় ৭৫ শতাংশ নারী ও শিশু। এ ছাড়া আহত হয়েছে ২২ হাজারের বেশি। নিখোঁজ রয়েছে প্রায় দুই হাজার, যার মধ্যে ১ হাজার ১০০টি শিশু।
বাংলাদেশসহ পাঁচ রাষ্ট্র ইসরায়েলের গণহত্যা, মানবতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধ তদন্ত করার জন্য ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্টের (আইসিসি) প্রধান কৌঁসুলি করিম এ এ খানকে লিখিত অনুরোধ জানিয়েছে। বাংলাদেশ ছাড়াও অন্য দেশগুলো হচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকা, জিবুতি, বলিভিয়া ও কমোরস।
গত ১৭ নভেম্বর করিম খানকে লেখা ওই চিঠিতে যারা ওই সব অপরাধের জন্য দায়ী, তাদের দায়বদ্ধতার আওতায় আনার জন্য তদন্ত করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
গাজা ও ইসরায়েল ইস্যুতে গোটা পৃথিবী এখন দুই ভাগে বিভক্ত। একদিকে বাংলাদেশসহ আরও অনেক দেশ মানবতার পথ ধরে ইসরায়েলকে নিন্দা জানাচ্ছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলো খোলাখুলি ইসরায়েলের মানবতাবিরোধী শুধু অপরাধকেই সমর্থন জানাচ্ছে না, তারা তাদের অর্থ-অস্ত্র দিয়েও সহায়তা করছে।
এ প্রেক্ষাপটে শক্তিশালী পশ্চিমা দুনিয়ার বিরোধিতা করে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে দাঁড়ানোর সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ। আইসিসিকে অনুরোধ জানানোর মাধ্যমে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে বক্তব্য দেওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে ইসরায়েলের অপরাধকে দায়বদ্ধতার আওতায় আনার জন্য দৃঢ় পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ।
এ বিষয়ে সাবেক একজন কূটনীতিক বলেন, যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দুনিয়া ইসরায়েলকে সমর্থন জানানোর অবস্থান নিয়েছে। অন্যদিকে যারা দৃঢ়ভাবে ফিলিস্তিনকে সমর্থন দিচ্ছে, তারা যে খুব বড় ও শক্তিশালী দেশ–বিষয়টি সে রকম নয়।
জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে বক্তব্য দেওয়া এক জিনিস এবং আইসিসির মতো শক্তিশালী আন্তর্জাতিক সংস্থাকে তদন্ত করতে অনুরোধ করা ভিন্ন জিনিস জানিয়ে তিনি বলেন, সঠিক তদন্তের মাধ্যমে ইসরায়েলের অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা এবং তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করা সম্ভব।
অপরাধীদের বিরুদ্ধে তদন্ত করার অনুরোধ জানানোকে ইসরায়েলসহ অন্যান্য অনেক দেশ ভালো চোখে নাও দেখতে পারে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ সব সময় আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে আইনের শাসন যেন বজায় থাকে, সেটির বিষয়ে সোচ্চার। দেশটি শুধু মুখে সেটি বলে না, কাজেও সেটির প্রমাণ দিয়েছে।
চারটি আন্তর্জাতিক আদালতে বাংলাদেশ বিভিন্ন সময়ে দারস্থ হয়েছে আন্তর্জাতিক সমস্যা সমাধানের জন্য। যেমন ২০১২ মিয়ানমারের সঙ্গে সুমদ্রসীমা নির্ধারণের জন্য ইন্টারন্যাশনাল ট্রাইব্যুনাল অন দ্য ল অব দ্য সি (ইটলস) এবং ২০১৪ ভারতের সঙ্গে সুমদ্রসীমা নির্ধারণের জন্য পার্মান্যান্ট কোর্ট অব জাস্টিসে মামলা করেছিল বাংলাদেশ। অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে আন্তর্জাতিক আইনি সংস্থাকে ব্যবহার বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক জটিলতার মীমাংসা করতে পেরেছে।
আবার রোহিঙ্গা গণহত্যা বিচারের জন্য ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্টের তদন্ত ও ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসের মামলায় সহায়তা দিচ্ছে বাংলাদেশ।
এ বিষয়ে সাবেক এক কূটনীতিক বলেন, আন্তর্জাতিক আইনি কাঠামোর প্রতি সব সময় আস্থাশীল ছিল বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থাকে ব্যবহার করার ক্ষেত্রে ধারাবাহিকভাবে উদ্যোগী ছিল দেশটি।
১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু এই বিখ্যাত উক্তি করে বলেছিলেন, ‘পৃথিবী দুই ভাগে বিভক্ত—একদিকে শোষক, অন্যদিকে শোষিত। আমি শোষিতের পক্ষে।’
বঙ্গবন্ধুর ওই নীতি সব সময় অনুসরণ করেছে বাংলাদেশ। তাই জন্মলগ্ন থেকেই ফিলিস্তিনের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিল দেশটি।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ইসরায়েল ১৯৬৭ থেকে ফিলিস্তিন দখল করে এবং প্রতিনিয়ত আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে যাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ সব সময় বলে থাকে এবং এর বিরুদ্ধেই দেশটির অবস্থান। ১৯৬৭ সালে যে সীমান্ত ছিল, সেই অবস্থায় ফিরে যাওয়ার পক্ষে বাংলাদেশ সব সময় সোচ্চার বলে তিনি জানান।
সান