পঞ্চগড়ে স্কুলছাত্র পায়েল হত্যাকাণ্ডে তিন আসামীর মৃত্যু দণ্ডাদেশ

প্রকাশ : 2024-10-21 17:58:12১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

পঞ্চগড়ে স্কুলছাত্র পায়েল হত্যাকাণ্ডে তিন আসামীর মৃত্যু দণ্ডাদেশ

পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার বলরামপুর তাঁতীপাড়া এলাকার স্কুলছাত্র আসাদুজ্জামান পায়েলকে (১৭) অপহরণের পর হত্যার অভিযোগে তিন আসামীকে মৃত্যুদ-ের আদেশ দিয়েছে আদালত। সোমবার দুপুরে পঞ্চগড় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ-১ এর বিচারক এসএম রেজাউল বারী এই দ-াদেশ দেন।

দ-প্রাপ্ত আসামীরা হলেন; জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলার চিলাহাটি ইউনিয়নের বলরামপুর তাতীপাড়া এলাকার মহির উদ্দিনের ছেলে নুরুজ্জামান (৩৮), বলরামপুর ডাহেনা পাড়ার দুদু মিয়ার ছেলে ফরহাদ হোসেন (৩০) ও বলরামপুরের রশিদুল ইসলামের ছেলে হাসানুল ইসলাম (৩২)। রায় শুনানির সময় আসামীদের মধ্যে গ্রেপ্তার আসামী ফরহাদ হোসেন হাজির থাকলেও অপর দুই আসামী নুরুজ্জামান ও হাসানুল পলাতক রয়েছে। প্রায় ৯ বছর পর চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার রায় প্রদান দিয়েছেন আদালত। পায়েল স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্র ছিল।

মামলার এজহার ও আদালত সূত্রে জানা যায়, দেবীগঞ্জ উপজেলার বলরামপুর তাতীপাড়া এলাকার স্কুলছাত্র আসাদুজ্জামান পায়েল ২০১৫ সালের ১৮ জুন সন্ধ্যায় বাড়ির পাশের দেউনিয়ার বাজারে হালখাতা খাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হয়ে যায়। ওই দিন তার বাবা সুলতান আলী ঢাকা থেকে বাড়ি ফিরে ছেলেকে দেখতে না পেয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। পরদিন ছেলের মোবাইল নাম্বার থেকে ফোন করেও ৩ দিনের মধ্যে ৩ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। পরে ২০ জুন সুলতানের ভাই মহির উদ্দিন দেবীগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। এরপরে ২২ জুন ভোরে সুলতান বাড়ির পাশের একটি পাটক্ষেতে প্রকৃতি ডাক সাড়া দিতে গেলে গোপনে ক্ষেতের আইলে বসা ফরহাদ ও রশিদুলের মধ্যে পায়েলের হত্যাকা- নিয়ে আলাপচারিতা করতে শুনেন। পরে বিষয়টি ইউপি সদস্য, চেয়ারম্যান সহ স্থানীয়দের জানালে স্থানীয়দের সহযোগিতায় নুরুজ্জামান, ফরহাদ ও রশিদুলকে আটক করা হয়। পরে নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করা হলে তারা হত্যার কথা স্বীকার করে। হত্যাকারীরা জানায়, পায়েলকে অপহরণ করে দেউনিয়ার বাজার থেকে ১ কিলোমিটার পশ্চিমে সোনামিয়ার পাটক্ষেতে নিয়ে ফরহাদ ও রশিদুলের সহযোগিতায় শ^াসরোধ করে হত্যার পর আধাঁ কিলোমিটার উত্তরে আকবর আলী নামের এক ব্যক্তির পুকুরে বস্তাবন্দি করে ফেলে রাখে। পরে তাদের দেয়া তথ্য মতে মরদেহ উদ্ধার করা হয় এবং তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। পরে ২২শে জুন দেবীগঞ্জ থানায় ওই তিনজনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা করে পায়েলের বাবা সুলতান আলী। এই মামলায় ২০১৫ সালের ৩১ আগস্ট ওই তিনজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দায়ের করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দেবীগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সাইদুর রহমান। এরপর দীর্ঘ ৯ বছর বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে ২০ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে সোমবার দুপুরে আদালত এই দ-াদেশ দেন। 

মামলায় বাদী পক্ষের আইনজীবী এবিএম জুলফিকার আলী নয়ন বলেন, ওই আসামীরা যে পায়েলকে হত্যা করেছে আমরা আদালতে তা সন্দেহাতিতভাবে প্রমাণ করতে পেরেছি। আদালতের রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। মামলায় আসামী পক্ষের আইনজীবী আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমরা এই রায়ে সন্তুষ্ট নই। আমরা উচ্চ আদালতে এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবো। মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের কৌশলী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, দীর্ঘ আইনী প্রক্রিয়া শেষে আজ আদালত ওই তিন আসামীর মৃত্যু নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার আদেশ দেন।