পঞ্চগড়ে অভিনব পন্থায় চাঁদাবাজি করতে এসে কথিত সাংবাদিক গ্রেফতার, পলাতক এক

প্রকাশ : 2024-03-30 11:08:50১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

পঞ্চগড়ে অভিনব পন্থায় চাঁদাবাজি করতে এসে কথিত সাংবাদিক গ্রেফতার, পলাতক এক

পঞ্চগড়ে চাঁদাবাজি করতে এসে কথিত সাংবাদিক গ্রেপ্তার। পঞ্চগড় সদর থানা ও সমাজসেবা দপ্তর সূত্রে জানা যায় পঞ্চগড়ের স্থানীয় এতিমখানা নিয়ে ইতিবাচক সংবাদ পরিবেশ করার কথা বললে কথিত ওই দুজন সাংবাদিককে জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা তাদের জেলা পরিষদ ডাকবাংলোতে থাকার বন্দোবস্ত ও করে। 

এরপর শুরু হয় তাদের মিশন। প্রাইভেট কার নিয়ে ছুটের একের পর এক এতিমখানায়। দলের মূল নায়ক দুই ব্যক্তির একজনের নাম মেহেদী হাসান কবীর (৩২) আরেকজন মনিরুজ্জামান (৫৭)। নাম তালিকা ধরে বিভিন্ন এতিমখানায় গিয়ে শুরু করে চাঁদাবাজি। ভয়ভীতি দেখিয়ে কারো কাছে ৭ হাজার কারো কাছে ৮ হাজার টাকা নিয়ে ছুটেন তালিকায় থাকা অন্য এতিমখানাগুলো। তাদের অবস্থান চেনাতে তাদের সহযোগিতা করেন সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মীরা। 

বৃহস্পতিবার দুপুরে পঞ্চগড় সদর উপজেলার চকলাহাট ইউনিয়নের খেনপাড়া উম্মে কুলসুম মদিনাতুল উলুম শিশু সদন ও এতিমখানার শিক্ষকের কাছে হাতিয়ে নেয় ৮ হাজার ৫০০ টাকা। পরে তারা ছুটে খানবাহাদুর মোকলেছুর রহমান আলিম মাদরাসা ও এতিমখানায়। এদিকে কয়েকজন মাদ্রাসা শিক্ষক বিষয়টি স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে জানালে তারা এশিয়ান টিভির অফিসে খোঁজ নিয়ে নিশ্চিত এরা প্রতারক। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় মনিরুজ্জামানকে আটক করা হয়। এ সময় পালিয়ে যায় মেহেদী হাসান। তাদের ব্যবহৃত ভাড়ায় চালিত প্রাইভেটকারটিও আটক করা হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসলে তাকে পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হয়। 

এ সময় জিজ্ঞাসাবাদে মনিরুজ্জামান নিজেকে দৈনিক আজকের আলোকিত সকাল পত্রিকার ভ্রাম্যমান প্রতিনিধি বলে দাবি করেন। অন্যদিকে মেহেদী হাসান কয়েক বছর আগে এশিয়ান টিভিতে কিছুদিন কর্মরত ছিলেন বলেও জানান তিনি। মনিরুজ্জামানের বাড়ি নেত্রকোনা জেলার মদনপুর এলাকায় আর মেহেদী হাসানের বাড়ি নরসিংদী জেলার বেলাবো উপজেলার হোসেনপাড়া এলাকায়। মেহেদীর নেতৃত্বে তারা এভাবেই নিজেদের ঢাকার বড় সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে প্রত্যন্ত এলাকার মানুষদেরকে ঠকিয়ে আসছেন। গত ২৫ মার্চ বিকেলে তারা পঞ্চগড়ে প্রবেশ করে। এ ঘটনায় শুক্রবার ওই দুই ব্যক্তিকে আসামী করে মামলা করেছেন খেনপাড়া উম্মে কুলসুম মদিনাতুল উলুম শিশু সদন ও এতিমখানার শিক্ষক রশিদুল হক। 

তিনি বলেন, তারা এসেই নিউজ করার নামে বিভিন্ন হুমকি ধামকি দিতে শুরু করে। নিউজ করলে আমাদের সমাজসেবার বরাদ্দ বন্ধ হয়ে যাবে বলে হুমকি দেয়। চাপের মুখে আমি সাড়ে ৮ হাজার টাকা দেই তাদের। পরে আমি এলাকার অন্য মাদ্রাসায় খবর নিয়ে  জানতে পারি একইভাবে তারা অনেক জায়গায় চাঁদাবাজি করেছে। এক পর্যায়ে তাদের প্রতারণার বিষয়টি জানাজানি হলে তাদের মধ্যে একজনকে স্থানীয়রা আটক কর আরেকজন পালিয়ে যায়। 

খানবাহাদুর মোকলেছুর রহমান আলিম মাদ্রাসা ও এতিমখানায় শিক্ষক ইউসুফ আলী বলেন, তারা সকালে এসে একবার পরিদর্শন করে যায়। প্রত্যেক মাদরাসায় যাওয়ার সময় তাদের সাথে সমাজসেবার একজন অফিস সহকারী ছিলেন। দুপুরে আবার তারা আসে। এ সময় তাদের উদ্দেশ্য ভালো ছিলো না। এক পর্যায়ে স্থানীয় সাংবাদিকদের সহযোগিতায় তাদের আটক করা হয়। মূল হোতা পালিয়ে যায়। 

এশিয়ান টিভির পঞ্চগড় প্রতিনিধি আকরুজ্জামান আকতার বলেন, আমি অফিসে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি মেহেদী এক সময় কিছুদিন চাকরি করলেও এখন কর্মরত নন। তিনি বিভিন্ন এলাকায় আমাদের টেলিভিশনের নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি করে যাচ্ছেন। বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর তাদের একজনকে স্থানীয় পুলিশের হাতে তুলে দেয়। 

পঞ্চগড় সদর উপজেলার সমাজসেবা কর্মকর্তা লায়লা আরজুমান বলেন, আমাদের পরিচালক মহোদয়কে তারা বলেছে যে এতিমখানা নিয়ে সমাজসেবা অধিদপ্তরের ইতিবাচক নিউজ করবে। পরিচালক স্যারের নির্দেশনা পেয়ে ডিডি স্যারের নির্দেশেই আমরা তাদের থাকার ব্যবস্থা করি। পঞ্চগড় সদর উপজেলার এতিমখানাগুলোর চেনার সুবিধার্থে আমাদের একজন অফিস সহকারীকে তাদের সাথে পাঠানো হয়। কিন্তু তারা এমনটি করবে আমরা বুঝে উঠতে পারিনি। তাদের আইডি কার্ড ও কথাবার্তা সাংবাদিকসুলভ। কিন্তু এতোটা অবিশ^াসের পরিচয় দিবে আমরা কল্পনাও করতে পারিনি। 

পঞ্চগড় সদর থানার সাবইন্সপেক্টর এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আক্কেল আলী বলেন, ওই মামলায় গ্রেপ্তার মনিরুজ্জামানকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অপর পলাতক আসামীকেও গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।