পঞ্চগড়ের তরুনীকে নিয়ে ভারতীয় মিডিয়ায় অপপ্রচার, বাবা মায়ের ক্ষোভ
প্রকাশ : 2024-12-16 09:10:32১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
পঞ্চগড় জেলা শহরের বাসিন্দা এক তরুণীকে নিয়ে ভারতীয় গনমাধ্যমে অপপ্রচার করা হচ্ছে। এ নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন তার বাবা জয়দেব চন্দ্র রায় ও মা অনুরাধা রানী । এদিকে এনিয়ে রবিবার(১৫ ডিসেম্বর) সকালে পঞ্চগড় পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান স্থানীয় গন্যমাধ্যমকর্মীদের নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনেরও আয়োজন করে। এসময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এস এম শফিকুল ইসলাম (প্রশাসন) , অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) কনক কুমার রায় সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম মাসুদ পারভেজ সহ পুলিশ বিভাগের অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তরুণী অতি সম্প্রতি অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশের সময় বিএসএফের হাতে আটক হয়। পরে ভারতীয় মিডিয়া সেই মেয়েটিকে নিয়ে মিথ্যাচার করে।ভারতীয় গণমাধ্যমের ন্যক্কারজনক মিথ্যাচারে বিব্রত প্রিয়ন্তী রায় ওরফে প্রমি (অর্পিতা) বাবা জয়দেব ও স্ত্রী সহ তার স্বজনসহ এলাকাবাসী। এমন মিথ্যাচারের নিন্দা জানান তারা। এই তরুণীর বাড়ি পঞ্চগড় পৌরসভার উত্তর জালাসী পাড়া এলাকায় ভারতীয় গণমাধ্যমের তথ্য অনুসারে গত মঙ্গলবার অবৈধভাবে ভারতের উত্তর দিনাজপুর ফতেপুর বিওপি দিয়ে প্রবেশের সময় বিএসএফ আটক করে চোপরা থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে বিএসএফ। পরে তাকে বিচারক কোচবিহারের শহীদ বর্ধনা সৃতি আবাসিক হোমে পাঠিয়ে দেয়।
ভারতীয় মিডিয়া 'মাধ্যম' প্রচার করে অর্পিতা (যদিও তার নাম প্রিয়ন্তী রায় প্রমি) ইসকন ভক্ত হওয়ায় বাংলাদেশ থেকে অত্যাচারের ভয়ে বাবা ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধি। বর্তমানে প্যারালাইজড-মা খুবই অসুস্থ্য, তারা আসতে পারবেনা। বাংলাদেশ তাদের জন্য অনিরাপদ, তাই ওই তরুণীকে নিরাপদের জন্য ভারতের আত্মীয়র বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। তবে ওই ভিডিওতে তরুণীর কোন বক্তব্য ছিলনা। ভারতীয়া মিডিয়ার নৈতিকতা বিবর্জিত নিজের বয়ানে সেখানকার হলুদ সাংবাদিকরা ভিডিওতে বলেন, বাংলাদেশে হিন্দু সংখ্যালঘুরা খুবই বিপদে, হিন্দুদের উপর সরকারি আক্রমন চলছে। বিমাতা সুলভ আচরন করছে পুলিশও। তাই তারা প্রানভয়ে আইন ভেঙ্গে ভারতে নিরাপত্তার জন্য আসছে।
ওই তরুনীর ভারতীয় আত্মীয় দাদু অরানন্দ অধিকারী ভিডিওতে বলতে দেখা গেছে, বাংলাদেশে তাদের হুমকি দিচ্ছি, বাড়ি থেকে চলে যেতে বলছে, তরুণীকে টর্চার করছে, অপহরন করবে। প্রাণভয়ে চলে আসছে।বাবা মায়ের সামনে যদি মেয়েকে টেনে নিয়ে যায়, তাহলে ওরা সেখানে থাকে কি করবে। দুঃখে চলে আসছে।
পঞ্চগড়ে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজমান। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হিন্দু-মুসলাম নির্বিশেষে শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক উপস্থিতির মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু, সুন্দর পরিবেশে চলছে পাঠদান, খেলাধুলা। স্বাভাবিক নিয়মে চলছে পূজা-অর্চনাসহ দৈনন্দিন কাজকর্ম। পূর্ব পুরুষের আমল থেকেই তারা হিন্দু-মুসলমান পরস্পর সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে শান্তিতে বসবাস করছে বলে জানায় স্থানীয় হিন্দু নেতারা।
ভারতে আটক অর্পিতা ( প্রিয়ন্তী রায় প্রমি) বাবা জয়দেব চন্দ্র রায় তার মা অনুরাধা রানী বলেন, আমরা এখানে হিন্দু-মুসলিম মিলেমিশে বসবাস করছি। কোন সমস্যা নাই। আমরা ইসকন ভক্ত না। আমরা সনাতনী।ভারতীয় মিডিয়া যা প্রচার করছে তা সম্পন্ন ভিত্তিহীন, মিথ্যা, বানোয়াট এবং কাল্পনিক। আমরা পঞ্চগড়ে তথা বাংলাদেশ শান্তিতে রয়েছি। আমরা ভালো আছি। আমরা ভারতীয় গণমাধ্যম "মাধ্যম" এর বক্তব্যের তিব্র নিন্দা জানাচ্ছি। পঞ্চগড় কেন্দ্রীয় শারদীয় দূর্গাপুজা মন্ডপ কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শ্রী মনোরঞ্জন বনিক বলেন, বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায় নিয়ে ভারতীয় মিডিয়া যা প্রচার করছে তা মিথ্যা বানোয়াট। বর্তমান সময়ে আমরা নিরাপদে আছি, ভালো আছি। শেখ হাসিনা সরকারের আমলে বিশ্বজিৎকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছিল কিন্তু আমরা কোন প্রতিবাদ করতে পারিনি। বাংলাদেশেকে অস্থিতিশীল করতে এবং বাংলাদেশের সম্মান বিশ্বের কাছে কমাতে ভারতীয় গণমাধ্যম এমন মিথ্যা, বানোয়াট, মনগড়া সংবাদ প্রচার করছে। আমরা এর তিব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
এদিকে সংবাদ সম্মেলনে পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান মুন্সি জানান, আমরা গতকাল আমরা একটা ভিডিও পাই ‘ সেখানে বলা হয়েছে ওই বাংলাদেশী এক মেয়েকে ইসকন করার কারণে ভারতে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। এটি একদম মিথ্যা প্রচারণা। এরপর আমি এ ব্যাপারে মেয়েটির বাবা মায়ের কাছে যাই ব্যক্তিগত ভাবে কথা বলি। এরপর জেনেছি মেয়েটির চোখের সমস্যা আছে ‘ তাই তাকে ভারতে পাঠানো হয়। সে আটোয়ারীর তার এক মামার বাড়িতে ছিল সেখান থেকে চোখের চিকিৎসার জন্য ভারতে পাঠানো হয়। কারন সে ভিসা না পাওয়ায় সে অবৈধ পথে ভারতে পড়ে। তার বাবাও মা বলে সে তো চোখের চিকিৎসা জন্য গিয়েছে। তার ভিসা না থাকায় তাকে ভারতীয় বিএস এফ আটক করে।