"ননসেন্স সাহিত্য "
প্রকাশ : 2022-10-29 09:55:52১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
ওমর ফারুক
-----------------
ছড়া বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন শাখা। সুন্দর শব্দ আর তালের ঝংকারে মূর্ত হয়ে উঠে সহজ বাক্য। ছড়ার আবেদন ব্যাপক। তবে এর মূর্ছনা পথেই মিলিয়ে যায়। ছড়ার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো সহজ শব্দ আর ছোট বাক্য। লাইন শেষে অন্তমিল প্রধান উপাদান। শিশুরা খুব সহজেই আয়ত্ত করতে পারে। খুব সহজেই মুখস্থ করতে পারে এবং শব্দের পরে শব্দ বসিয়ে ছড়া তৈরির চেষ্টা করে।
মুখে মুখে ছড়া তৈরির চেষ্টা খুব প্রাচীন সময় হতেই চলে আসছে। মানুষ প্রকৃতি দেখে, পরিবেশ দেখে, প্রযুক্তি দেখে, মাঠ-ফসলের জমি দেখে ছড়ার উপাদান খুঁজে নেয়। এই করে যে ছড়া বাংলা সাহিত্যে সৃষ্টি হয়েছে সেগুলোর আবেদন ব্যাপক। শিশুরা ছড়ার উপকরণ প্রকৃতিতে খুঁজে খুঁজে ফিরে। কয়েকটি ছড়া
১।" রোদ হচ্ছে বৃষ্টি হচ্ছে
খেকশিয়ালের বিয়ে হচ্ছে।"
২। জল পড়ে
পাতা নড়ে।
৩। মেঘের কোলে রোদ হেসেছে
বাদল গেছে টুটি টুটি
আজ আমাদের ছুটি ওভাই।।
বাঙালির নবজাগরণের সময়ে ছড়া সাহিত্য সম্পূর্ণ বাঁক নিলো। ছড়ার মধ্যে নতুন প্রাণ, নুতন আবহ সৃষ্টি হলো। রবীন্দ্রনাথ, উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী যোগ্য উত্তরসূরী হিসেবে বাংলা সাহিত্যে আবির্ভূত হলেন সুকুমার রায়। তিনি পিতার পথে হাঁটেন নি। পারিবারিক ঐতিহ্যকে বহন করে নিজের পথ তৈরি করে নিয়েছেন। উপেন্দ্রকিশোর ছেলের জন্য রাস্তা নির্মাণ না করলেও পথটা দেখিয়ে দিয়েছেন। রবীন্দ্র বলয়কে পাশ কাটিয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন ধারার ছড়া নিয়ে প্রবেশ করলেন সাহিত্যাঙ্গনে। তিনি রবীন্দ্রনাথের চেয়ে ভিন্ন ও স্বতন্ত্র। তাঁর এ স্বাতন্ত্র্যবোধ তাঁকে নতুন পরিচিতি দিয়েছে
।সুকুমার রায় উচ্চ শিক্ষিত। রসায়ন ও পদার্থবিদ্যায় বি.এস.সি (অনার্স)। বিজ্ঞানের ছাত্র হওয়ার কারণে বিজ্ঞানের মৌলিকত্ব ঢুকে পড়েছে তাঁর লেখায়। তিনি অত্যন্ত সহজ ও সাবলীলভাবে বিজ্ঞানের সহজী করণ ঘটিয়েছেন ছড়া সাহিত্যে।
সুকুমার রায় বাংলা সাহিত্যের প্রথম" ননসেন্স" সাহিত্যের উদ্ভাবক, জনক। তিনি ছড়া সাহিত্যে নতুনত্ব আনেন। ছড়া যে ব্যাঙ্গাত্মক হতে পারে আর এর মধ্যদিয়ে সমাজ, পরিবেশকে তুলে ধরা যায় সেটা প্রথম করে দেখালেন সুকুমার রায়। পূর্বের ধারণা ভেঙে দিয়ে তিনি ছড়ার মধ্যে বিজ্ঞান, তত্ত্বজ্ঞান ব্যবহার করলেন। সুকুমার রায় শিশুদের জন্য "আবোল তাবোল" লিখলেন। এতে ৫০ টি ছড়া রয়েছে। আবোল তাবোল ছড়ার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো সহজবোধ্যতা। শিশুমনে সহজের প্রভাব পড়ে। ছড়ার নামের মধ্যেও একটা ভিন্নতা দেখা যায়। যেমন -" একুশে আইন", "কাঠবুড়ো ", " খুড়োর কল", "বাবুরাম সাপুড়ে ", গোঁফ চুরি" প্রভৃতি।
মূলত সুকুমার রায় একজন মুদ্রণবিজ্ঞানী, ছড়াকার, শিশুসাহিত্যিক। বাবার মুদ্রণ পেশাকে এগিয়ে নেয়ার পাশাপাশি তিনি ননসেন্স ক্লাব, মানডে ক্লাবও প্রতিষ্ঠা করেন। বাবার মৃত্যুর পরে "সন্দেশ " পত্রিকা সম্পাদনা করেন। সন্দেশ পত্রিকা সম্পাদনা করতে গিয়ে তিনি শিশুদের জন্য ননসেন্স সাহিত্য সৃষ্টি করেন। সুকুমার সাহিত্যের সফলতা এর স্থায়ীত্বে। শিশুদের প্রথম পরিচয় সুকুমার রায়ের সাথেই। তাঁকে জানে শিশু "হনহন পনপন" ছড়ার মধ্যদিয়ে। অদ্ভুত সুন্দর ছড়া। যার প্রতিটি শব্দ ছন্দে ভরা। শিশুদের মনে থাকে খুব সহজে এবং শিশু এ ছড়ার পাঠ সরলভাবে প্রয়োগ করতে পারে। সুকুমার রায়ের আরও কিছু ছড়া
১। বায়ু শনশন
শীতে কনকন
ফোঁড়া টনটন
থালা ঝনঝন
( হনহন পনপন)
২। বিদ্যে বোঝাই বাবু মশাই চড়েন শখের বোটে
মাঝিরে কন বলতে পারিস সূর্য কেন ওঠে ?
(জীবনের হিসাব)
৩। আম পাকে বৈশাখে, কুল পাকে ফাগুনে
কাঁচা ইট পাকা হয়, পোড়ালে তা আগুনে।
(পাকাপাকি)
৪। ডাইনে বললে যায় সে বামে
তিন পা যেয়ে দুবার থামে।
(অসম্ভব নয়)
৫। খায়না সে দানাপানি -ঘাস পাতা বিচালি
খায়না সে ছোলা ছাতু ময়দা কি পিঠালি।
ক্ষণজন্মা এই মানুষটি জন্মেছিলেন ১৮৮৭ সালের ৩০ অক্টোবর। তিনি শুধু ননসেন্স সাহিত্য নিয়েই পড়ে ছিলেন এমনটা নয়। তিনি একজন "লিথোগ্রাফার"। তবে তিনি অমর হয়ে আছেন তাঁর ননসেন্স সাহিত্যের জন্য। তাঁর সৃষ্টি "অবাক জলপান," "পাগলা দাশু", " হ-য-ব-র-ল," বিশ্বসাহিত্যের অংশ। বিশ্বসাহিত্যে "আবো তাবোলের" মতো সার্থক সৃষ্টি দ্বিতীয়টি নেই।শিশুসাহিত্যের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য জায়গা সুকুমার রায়।