দেশীয় প্রজাতির ঔষধি গাছ বিলীন হওয়ার পথে: সবুজ আন্দোলন
প্রকাশ : 2024-05-18 15:43:10১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
ক্রমবর্ধমান নগর সভ্যতা বিকশিত হওয়ার ফলে কমেছে আবাদী ও বনাঞ্চল। সারা পৃথিবী জুড়ে অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে দেখা দিয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব। বাদ যায়নি কৃষি জমি ও ঔষধ উৎপাদনের ঔষধি গাছ। সারা পৃথিবী জুড়ে ৩০ শতাংশ ওষুধি গাছ বিলীন হওয়ার পথে। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশেও আশঙ্কাজনক হারে ঔষধি গাছ বিলুপ্ত হয়ে গেছে পাশাপাশি বিলুপ্ত হওয়ার পথে অসংখ্য প্রজাতির গাছ। আজ ১৮ মে শনিবার সকালে রাজধানী ঢাকার মাতৃভূমি মিলনায়তনে পরিবেশবাদী সংগঠন সবুজ আন্দোলন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার উদ্যোগে " বিশ্ব পরিবার দিবস ও দেশীয় প্রজাতির গাছের বিলুপ্ত রোধে করনীয় শীর্ষক আলোচনা সভা আয়োজন করা হয়। ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি আব্দুল আজিজের সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন পলাশের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সবুজ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যান বাপ্পি সরদার। উদ্বোধনী বক্তব্য প্রদান করেন সবুজ আন্দোলন পরিচালনা পরিষদের অর্থ পরিচালক নারী উদ্যোক্তা নিলুফার ইয়াসমিন রুপা। প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন প্রত্যাশার বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মামুন। বিশেষ অতিথি হিসেবে আরো বক্তব্য রাখেন পরিচালক অভিনেতা উদয় খান, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ ইমরান, নারী পরিষদের সহ—সভাপতি মাতৃভূমি গ্রুপের পরিচালক শিলা মহসিন, সেলিনা চৌধুরী, কেন্দ্রীয় সহ সাংগঠনিক রবিউল ইসলাম মাস্টার।
প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বলেন, পারিবারিক বন্ধন অটুট রাখতে যৌথ ফ্যামিলি ফিরিয়ে আনতে হবে। মানুষ তার ব্যক্তি স্বার্থ চরিতার্থ করতে ফ্যামিলির বন্ধন পর্যন্ত ভেঙে ফেলছে। যার প্রভাব আমাদের পুরো বাস্তু সিস্টেমে প্রভাব ফেলছে।
এছাড়াও তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে আশঙ্কা জনক হারে ঔষধি গাছের প্রজাতি বিলুপ্তি হচ্ছে। গবেষণা ভিত্তিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা না থাকার ফলে এমনটি ঘটছে । ইতোমধ্যে প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেওয়া থানকুনি, বিলাই আছড়া, কাটানেট, ভাং, কালো ধুতরা, বনবেগুন, উলটকম্বল, রামচন্ডাল, কালো তুলসী, রাম তুলসী, শতমূলী, অগ্নিশ্বর, রক্তচিতা, দুধরাজ, ফনিমনসা, ন্যাড়াসেজার, কালো মেঘ, বনধনে, লজ্জাবতী, বিষকাটালী, নীলকন্ঠ, আকন্দ, সর্পগন্ধা, বিশলাকরণী, ঈশ্বরীমূল, পিপুল, বাসক, দাদ মর্দন, একাঙ্গী, ভেরেন্ডা, তালমাঘনা, যজ্ঞ ডুমুর, ভূই আমলা, স্বর্ণলতা সহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ বিপন্ন হওয়ার পথে। ওষুধ শিল্প সম্প্রসারণে কেমিক্যালের গুরুত্ব যতটা দেওয়া হয় ইউনানী ও আয়ুর্বেদিকের গুরুত্ব খুব বেশি দেওয়া হয় না। শরীরের এন্টিবডি তৈরির জন্য ঔষধি গাছের চিকিৎসা অত্যন্ত কার্যকর। সরকারিভাবে জেলায় গবেষণা ভিত্তিক ঔষধি গাছের বোটানিক্যাল গার্ডেন প্রতিষ্ঠা করা এখন সময়ের দাবি। ইতোমধ্যে সারা পৃথিবী জুড়ে ১৪২ টা প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে গেছে, ৪৫০—এর কাছাকাছি বিলুপ্ত হওয়ার পথে। মূলত চাষাবাদ, জ্বালানির জন্য কাঠ সংগ্রহ, গবাদি পশুর চাষাবাদ, নগর সভ্যতার উন্নয়ন এবং অগ্নিকাণ্ড ঔষধি গাছ বিলুপ্তির প্রধান কারণ। জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবের ফলে আবহাওয়া বৈরি আচরণ করে যার ফলশ্রুতিতে গাছের প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে। ঔষধি গাছ সংরক্ষণের জন্য বিদ্যমান বনাঞ্চলকে নিরাপত্তা দেওয়া, বীজ সংরক্ষণ, বৈজ্ঞানিকভাবে বৃক্ষরোপণ, বীজ সংরক্ষণে সাধারণ জনগণকে প্রশিক্ষণ প্রদান, বিদেশি প্রজাতির গাছ লাগাতে নার্সারি মালিকদের নিরুৎসাহিত করার পাশাপাশি বন সংরক্ষণের জন্য অর্থের বরাদ্দ বৃদ্ধি করা। সরকার ও পরিবেশবাদী সংগঠনের যৌথ উদ্যোগে ঔষধি গাছের গুনাগুন সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরিতে জেলা ও উপজেলা ভিত্তিক বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে হবে।
আলোচনা সভা শেষে সংগঠনের পরিচালক অধ্যক্ষ নাদিয়া নূর তনুর পিতা যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবু আহমেদ নাসিম পাভেল ও নারী পরিষদের সহ—সভাপতি সেলিনা চৌধুরীর মাতার ইন্তেকালে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। মিটিংয়ে উপস্থিত ছিলেন নারী পরিষদের সহ দপ্তর সম্পাদক রিয়া আক্তার, সহ প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক নাসরিন আক্তার আইরিন, সবুজ আন্দোলন ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা হাফিজুর রহমান, ছাত্র পরিষদের সিনিয়র সহ—সভাপতি রাইন আলম, সহ দপ্তর সম্পাদক শফিকুল ইসলাম সায়েমসহ মহানগরের বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দ।