দেশসেরা টেনিস কন্যা প্রীতি মাঠ মাতাতে চান
প্রকাশ : 2021-04-17 19:15:04১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
দেশসেরা লন টেনিস তারকা বাগেরহাটের আফরানা ইসলাম প্রীতি মাঠ মাতাতে চান । সদ্য সমাপ্ত ‘বঙ্গবন্ধু ৯ম বাংলাদেশ গেমস-২০২০’ এ দ্বৈত্ব’তে গোল্ড ও এককে ব্রোঞ্জ পদক পেয়ে ভবিষ্যতে তিনি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলতে চান। টেনিস কন্যা প্রীতির এই সাফল্যকে টিকিয়ে রাখতে এবং দেশের জন্য আরও বড় সম্মান আনতে রাষ্ট্রীয়ভাবে পৃষ্ঠপোষকতার দাবি জানান প্রীতির পরিবার।
বাগেরহাট স্টেডিয়ামে বিকেএসপি (বাংলাদেশ ক্রিড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান) থেকে খেলোয়াড় বাছাই হবে। বাছাইকৃত খেলোয়াড়রা পাবেন উন্নত প্রশিক্ষণ। ২০১০ সালে এমন খবর শুনে বাছাইয়ে অংশ নেওয়ার জন্য বাগেরহাট স্টেডিয়ামে প্রীতিকে নিয়ে আসেন তার পরিবার। পছন্দের ব্যাডমিন্টনে না হলেও, সুযোগ পান টেনিসে। প্রীতি তখন সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী। ব্যাডমিন্টনের ভালোবাসা ছেড়ে তার ধ্যানজ্ঞান তখন টেনিসে। বিকেএসপিতে প্রশিক্ষণের শুরু থেকেই ভাল করতে থাকেন তিনি। সেই ধারাবাহিকতায় ২০১৬ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত টেনিসে একক নারী ইভেন্টে নাম্বার ওয়ান ছিলেন প্রীতি। বাগেরহাটে প্রাক্টিসের ভালো সুযোগ না থাকার পরও বঙ্গবন্ধু ৯ম বাংলাদেশ গেমসএ একক ইভেন্টে ব্রোঞ্জ পদক এবং মি· ইভেন্টে স্বর্ণ পদক জিতেছেন আফরানা ইসলাম প্রীতি।
বাগেরহাট শহরের হরিণখানা এলাকার জাহিদুল ইসলাম ও শামীমা আক্তার আখি দম্পতির দুই মেয়ের মধ্যে বড় মেয়ে আফরানা ইসলাম প্রীতি। ছোট বোন আফসানা ইসলাম রীতি এইচএসসি প্রথম বর্ষে পড়েন। ২০১১ সালে বিএসপিতে পড়ার সুযোগ হওয়ার পর থেকে টেনিস খেলোয়াড় হিসেবে যাত্রা শুরু প্রীতির। এর মধ্যে খেলেছেন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক একাধিক ইভেন্টে। ২০১৬ সালে সাউথ এশিয়ান গেমসএ অংশগ্রহণ করেন বাংলাদেশের পক্ষ থেকে। সে আসরেও দেশের জন্য এনেছেন সম্মান। জাতীয় টেনিস টিমের এই কৃতি খেলোয়াড় ২০১৬ ও ২০১৭ দুই বছর বিকেএসপির সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছেন। বিকেএসপি থেকে এইচএসসি শেষ করার পরে ২০১৮ সালে চায়নার গুয়ানজুতে টেনিস প্রশিক্ষক হিসেবে চাকরির সুযোগ হয় প্রীতির। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৯ সালের অক্টোবর পর্যন্ত সফলভাবে কাজ করে বাংলাদেশ গেমস-এর টানে ফিরে আসেন দেশে। অংশগ্রহণ করেন বাংলাদেশ গেমসে। শুধু খেলাধুলা নয়, নৃত্য ও সৌন্দর্য্য চর্চায়ও এগিয়ে টেনিস কন্যা প্রীতি। ২০১৭ সালে মমতাজ সুন্দরী তমা প্রতিযোগিতায় এক হাজার ৩০০ প্রতিযোগীকে পিছনে ফেলে প্রথম রানআর্স আপ হয়েছিলেন প্রীতি। তার এখন একমাত্র স্বপ্ন সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় প্রশিক্ষণ নিয়ে আন্তর্জাতিক আসরে দেশের প্রতিনিধিত্ব করে দেশের জন্য বড় সম্মান ছিনিয়ে আনবেন।
আফরানা ইসলাম প্রীতি বলেন, ‘‘২০১১ সালে আমি বিকেএসপিতে ভর্তি হই। ২০১৩ থেকে আমি ভাল করা শুরু করি। আন্ডার ফোরটিনে এশিয়ান টেনিস ফেডারেশনে (এটিএফ) আমি সিঙ্গেলস ও ডাবলস দুটোতেই চ্যাম্পিয়ন হই। ২০১১ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত আমি বিকেএসপির শিক্ষার্থী ছিলাম। ভাল কেটেছে সেখানে আমার। বিকেএসপি থেকে বের হওয়ার পর আমার খেলোয়াড় জীবনে বাধা আসতে থাকে।
‘পরে চীনে ছিলাম ১৪ মাস। সেখানেও ভাল ছিলাম। বাংলাদেশ গেমস-এ স্বর্ণ জেতার আশায় আমি এগোচ্ছিলাম। সিঙ্গেলস-এ আমি ব্রোঞ্জ এবং মি·ড ডাবলস-এ এ ¯^র্ণ পদক পেয়েছি। আমার কোনো কোচ ছিল না। কোনো প্রশিক্ষণ নিতে পারিনি। প্রাক্টিসেরও পর্যাপ্ত সুযোগ ছিল না। সরকার থেকে যদি সাপোর্ট পাই, তাহলে ভবিষ্যতে আরও ভাল করতে পারব। উপযুক্ত কোচের মাধ্যমে আমাদের পরামর্শ, অনুশীলন ও সুযোগ সুবিধা প্রদান করা হলে দেশের জন্য হয়তো আরও বড় সম্মান বয়ে আনা সম্ভব হবে।”
প্রীতির বাবা জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘‘আমার মেয়ে ‘বঙ্গবন্ধু ৯ম বাংলাদেশ গেমস-২০২০’ এ যে সফলতা অর্জন করেছে, তাতে আমরা খুবই গর্বিত। তবে ব্যয়বহুল এই খেলায় মেয়ের অনুশীলন চালিয়ে রাখতে আমার খুবই কষ্ট হয়। প্রীতির সফলতা শুধু আমাদের নয়, সারা দেশের মানুষেরই। তার এই প্রতিভাকে টিকিয়ে রাখতে এবং দেশের জন্য আরও বড় সম্মান আনতে রাষ্ট্রীয়ভাবে পৃষ্ঠপোষকতার দাবি জানাচ্ছি।’
প্রীতির মা শামীমা আক্তার বাঁখি বলেন, ‘আল্লাহর কাছে হাজার শুকরিয়া- তিনি আমাকে একটি পরিশ্রমী মেয়ে দিয়েছেন। আমি সব সময় মেয়ের খেলাধূলায় সহযোগিতা করতাম। আমি চাই বাংলাদেশ গেমস-এর সফলতা ধরে রেখে এসএ গেমসসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আরও বড় সফলতা নিয়ে আসুক আমার মেয়ে।’
বাগেরহাট টেনিস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ডা. মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘ক্রিকেটে বাগেরহাটের রাজ্জাক, রুবেলের স্বর্ণজ্জ্বল ইতিহাস রয়েছে। ফুটবলেও বাগেরহাটের কৃতি খেলোয়াড় রয়েছে। টেনিসে প্রীতিও আমাদের গর্ব। আমরা তার উজ্জল ভবিষ্যৎ কামনা করি। আমরা চাই সে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভাল খেলে বাগেরহাট ও দেশের সম্মান বৃদ্ধি করুক। তার চলার পথে বাগেরহাট টেনিস ক্লাব সবসময় পাশে থাকবে।’
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক আ.ন.ম ফয়জুল হক বলেন, ‘বাংলাদেশ গেমসে একক ইভেন্টে ব্রোঞ্জ এবং দ্বৈত ইভেন্টে বাগেরহাটের সন্তান প্রীতি স্বর্ণ জিতেছেন এটা বাগেরহাটবাসীর জন্য আনন্দের বিষয়। যেকোনো খেলায় আয়োজক সংস্থা যদি কোনো খরচ বহন না করে, সেক্ষেত্রে খেলোয়াড়দের সুবিধার জন্য আমরা টেনিস ক্লাবের অনুকূলে একটি ফান্ড তৈরি করব। বাগেরহাট থেকে যেসব খেলোয়াড় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বড় ইভেন্টে অংশগ্রহণ করবে তাদেরকে ওই ফান্ড থেকে সহযোগিতা করা হবে।’