দেবীগঞ্জে জিয়াউর রহমানের শাহাদত বার্ষিকী অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় নেতা আজাদের বিচার দাবি
প্রকাশ : 2024-05-31 20:06:10১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপি কর্মীদের নামিয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষে কাজ করার অভিযোগ তুলে কেন্দ্রীয় বিএনপির পল্লী উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক ও পঞ্চগড় জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ফরহাদ হোসেন আজাদের বিচার দাবি করছেন রহিমুল ইসলাম বুলবুল নামে বিএনপি’র এক বহিস্কৃত নেতা। বৃহস্পতিবার রাতে দেবীগঞ্জ উপজেলার সোনাহার ইউনিয়নের সোনাহার উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৪৩ তম শাহাদত বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠানে এ অভিযোগ তুলেন তিনি।
এই অনুষ্ঠানে ফরহাদ হোসেন আজাদের বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে কমিটি গঠন, নিজ বাসায় মিটিং করে সদ্য হয়ে যাওয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপি নেতাদেরকে ভোটে নামিয়ে টাকার বিনিময়ে আওয়ামী লীগ নেতার পক্ষে কাজ করাসহ একাধিক অভিযোগ তোলা হয়।
উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক (বহিস্কৃত) রহিমুল ইসলাম বুলবুল বক্তব্যে বলেন, গত ২১ মে হয়ে যাওয়া দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা নির্বাচনে দেবীগঞ্জ উপজেলায় আমি চেয়ারম্যান পদে অংশ নিয়েছিলাম। এই নির্বাচনে অংশ নিতে আমাকে উদ্বুদ্ধ করেছিলো ফরহাদ হোসেন আজাদ। তার বাড়িতে ১০ ইউনিয়নের নেতাকর্মীদের নিয়ে মিটিং ডেকে সেখানে তিনি (ফরহাদ হোসেন আজাদ) বলেছিলেন আমি মির্জা ফখরুল, আমি তারেক রহমান, আমি বলছি দেবীগঞ্জে বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থী হবেন বুলবুল। তার কথা মত জমি বিক্রি করে আমি ভোটে অংশ নিলাম। তিনি এভাবে না বললে আমি কখনই ভোট করতামনা। অথচ ভোটে দাঁড়ানোর পর দেখলাম সে (ফরহাদ হোসেন আজাদ) আওয়ামী লীগের সমর্থনে কাজ করলো।
ফরহাদ হোসেন আজাদকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনার পিছনে ২৮ বছর রাজনীতি করেছি। লক্ষ লক্ষ টাকা নষ্ট করেছি। মামলা খেয়েছি, হাজত খেটেছি। আপনি দলের বড় পদে আছেন, কিন্তু কেন দলের সিদ্ধান্তের বাইরে আমাকে ভোটে দাঁড়াতে বললেন? ভোটে দাঁড় করিয়ে আপনি আমাকে ধ্বংস করে দিলেন।
তিনি বলেন, আমি কখনো দলের বাইরে যাইনি, ফরহাদ হোসেন আজাদের বাইরে যাইনি। কিন্তু উনি আমাকে বিপদে ফেলতে ভোটে দাঁড় করিয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষে কাজ করলো। আজকে আমি মনে করতেছি দেবীগঞ্জের বিএনপিকে বাঁচাতে হবে। তাই যার কাছে বিএনপি নিরাপদ সেই মানুষটি আমাদের দরকার। ফরহাদ হোসেস আজাদের কাছে বিএনপি নিনাপদ না। কারণ সে সবসময় টাকা দিয়ে বিক্রি হয়। তার মত নেতার কাছে বিএনপি নিরাপদ নয়। তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও নিরাপদ নয়।
কান্নাজড়িক কন্ঠে রহিমুল ইসলাম বুলবুল বলেন, আমি ফরহাদ হোসেন আজাদের বিচার চাই। সে আমাকে কুরবানি করে দিয়েছে। আমার জায়গা জমি বিক্রি করে সারা করে ফেলেছি। যারা বিএনপি করে তাদের কাছে আমি বিচার চাই। তারেক রহমান, খালেদা জিয়ার কাছে বিচার চাই। আগামী দিনে যেন সে বোদা-দেবীগঞ্জে বিএনপির কাছে প্রশ্রয় না পায়।
প্রবীণ বিএনপি নেতা ফজলার রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে সোনাহার ইউনিয়ন ছাত্রদলের সদস্য সচিব মাজেদুর রহমান, পামুলী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ডিউক চৌধুরী, দেবীগঞ্জ উপজেলা মহিলা দলের সদস্য সচিব জান্নাতুন নাইম মিতু প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে বিএনপি নেতাদের দাবি, দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপি নেতাদের প্রার্থী করেন কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা ফরহাদ হোসেন আজাদ। নির্বাচনে এই নেতাদের আগ্রহ না থাকলেও প্রার্থী হতে প্ররোচনা দেন তিনি। পরবর্তীতে কেন্দ্র থেকে নির্বাচন বর্জনের চাপ এলে কর্মসূচীর নামে আওয়ামী লীগের নেতাদের কাছে টাকা নিয়ে তাদের পক্ষে ভোট করেন বিএনপির এই কেন্দ্রীয় নেতা। তবে নির্বাচনে নেতারা জমি ও বিভিন্ন সম্পত্তি বিক্রি করে ভোটে অংশ নিলেও ওই কেন্দ্রীয় নেতার জন্যই হেরেছেন দাবী করে তার বিচার দাবী করেছেন। বোদা ও দেবীগঞ্জ থেকে আজাদকে সড়ানো না হলে কেন্দ্রীয় বিএনপি কার্যালয় ঘেরাও করার হুশিঁয়ারী উচ্চারণ করেন বক্তারা।
বিএনপির পল্লী উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ফরহাদ হোসেন আজাদ সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার বাসায় ভোট বর্জনের মিটিং হয়েছিল। আমি সবাইকে ভোট থেকে ফিরে আসতে বলেছি। বোদা, সদর ও দেবীগঞ্জের বিএনপির কয়েকজন নেতা ভোট থেকে সরে এসেছেন। কিন্তু বুলবুল সরে আসলেন না। দলের নির্দেশনা অমান্য করে ভোট করে হেরে গেল আর এখন আমাকে দোষারোপ করছে আমি নাকি তাকে ভোটে দাড়িয়ে দিয়েছি। পারলে সেসব প্রমাণ করুক। আর তার ওই অনুষ্ঠানে যারা গেছেন তারা সবাই বিতর্কিত। তাদের কেউ দলীয় নির্দেশ না মানায় বিভিন্ন সময়ে পদ হারিয়েছেন। বর্তমানে বিএনপির দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত কেউতো তার অনুষ্ঠানে যায়নি। তারা আগেও আমার বক্তব্য সুপার ইডিট করে ছড়িয়েছে। এখনো আমার পেছনে লেগে আছে।এর আগে, গত ৫ মে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিএনপি নেতা ফরহাদ হোসেন আজাদের অডিও রেকর্ড ফাঁস হওয়া নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়। অডিওতে তাঁকে নেতা-কর্মীকে কৌশলে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা বলতে শোনা যায়। যদিও পরে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি দাবি করেছিলেন অডিওটি সুপার এডিট।এদিকে সদ্য সমাপ্ত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে বোদা ও দেবীগঞ্জ উপজেলায় দলীয় নির্দেশনা অমান্য করে নির্বাচনে ৫ বিএনপি নেতা অংশ নেন। এর মধ্যে বিএনপি নেতা রহিমুল ইসলাম বুলবুল সহ ৪ জন পরাজিত হন আর একজন নির্বাচিত হন। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে নির্বাচনে যাওয়ায় বিএনপি থেকে ৫ নেতাকেই বহিস্কার করা হয় তাকে।