দখল-দূষণ ও অস্তিত্ব সংকটে মাদারীপুরের বরিশাল খাল : বর্তমানে ময়লার ভাগাড়ে পরিণত
প্রকাশ : 2024-08-17 12:58:33১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
দখল , দূষণ ও অস্তিত্ব সংকটে মাদারীপুরের বরিশাল খাল। ময়লা-আবর্জনা ফেলায় ভরাট হয়ে গেছে খালের ৮ কিলোমিটারের বেশির ভাগ অংশ। এতে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে পানি প্রবাহ। দুর্গন্ধে বাড়ছে রোগ বালাই। ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। তবে, খালটি পুনরায় খননের আশ^াস পানি উন্নয়ন বোর্ডের। দেখে মনে হতে পারে এ যেন কোন এক ময়লার ভাগাড়। কিন্তু না এটি মাদারীপুর শহরের ইটেরপুল থেকে পাথুরিয়ার পাড় এলাকাজুড়ে বরিশাল খালের চিত্র। ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রয়োজনে শহর থেকে সরাসরি নৌপথে বরিশাল যাতায়াত করতে হতো স্থানীয়দের। এজন্য এটির নাম হয় বরিশাল খাল। কিন্তু ৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য খালটি দখল আর দুষণে ভরাট হয়ে গেছে বেশির ভাগ অংশ। যাও বা আছে, তাও আশপাশের লোকজন ময়লা আর আবর্জনা ফেলায় ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ, বাড়ছে রোগবালাই। পানি প্রবাহ না থাকায় অনেকেই ধানের চারাও রোপন করেছেন খালের ভেতর। কোথাও আবার বেরিবাঁধ দিয়েও খালটির মুখ আটকিয়ে দেয়া হয়েছে। এমন অবস্থায় চাষাবাদে দেখা দিয়েছে পানি সংকট।
গংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালে মাদারীপুরের জেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড, সড়ক বিভাগ এবং এলজিডিই’র যৌথ উদ্যোগে খালের দু’পাড়ে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। পাশাপাশি খালের মধ্যে থাকা ময়লা-আবর্জনা, কচুরীপানাও পরিস্কার করা হয়। সে সময়ে খালটি খননের উদ্যোগ নেয়া হলেও অদৃশ্য কারণে তা বন্ধ হয়ে যায়। দুই যুগ আগেও এই খাল দিয়ে ছোট-বড় নৌযান চলাচল করতো। কালের বিবর্তনে অস্তিত্ব সংকটে এই বরিশাল খালটি। শীর্ঘই এটি পুনঃরায় খনন করে নাব্য ফিরিয়ে আনার দাবি এলাকাবাসীর।
স্থানীয় বাসিন্দা মাহমুদুর রহমান বলেন, “ ঐহিত্যবাহী বরিশাল খালটির বর্তমান বেহাল অবস্থা; এতো দুর্গন্ধ এর আশপাশে থাকাই যায় না। ময়লার স্তুপ হয়ে গেছে। মাদারীপুরের প্রশাসন ও সরকারের কাছে দাবি জরুরি ভিত্তিতে ময়লা অপসারণ করে আমাদের দূষণ থেকে রক্ষা করবে।” ইটেরপুল জামে মসজিদের মোয়াজ্জিম মো. মাসুদুর রহমান বলেন, “অনেক আগে এই খাল দিয়ে নৌযান চলাচল করতো। চোখের সামনে দেখতাম। কিন্তু খালটির বর্তমান অবস্থা খুবই করুণ। অথচ এই খালটির প্রতি কারও নজর নেই। খালের ভেতর থাকা ময়লা-আবর্জনায় মশা-মাছির সৃষ্টি পেয়েছে। এতে বাড়ছে রোগবালাই। আমরা এর প্রতিকার চাই।” নতুন মাদারীপুর এলাকার বাসিন্দা ইমরান হোসেন বলেন, “এখানে বড় একটি খাল ছিল। এখান দিয়ে নৌযান চলাচল করতো। কৃষকরা খাল থেকে পানি নিয়ে সেচে ব্যবহার করতো। কিন্তু বর্তমানে পানি না থাকায় ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। এটি পুনঃরায় খনন করলে এলাকাবাসী সবারই উপকার হয়।”
স্থানীয় পরিবেশবাদি মাসুদ পাভেজ বলেন, “প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা আর স্থানীয়দের প্রয়োজনের তাগিদে খালটি দ্রুত খনন প্রয়োজন। দীর্ঘদিন খালটির নাব্য বন্ধ থাকলে বৃষ্টির পানি না নামতে পারলে শহরের জলাবদ্ধতা দেখা দিতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে।”
খালটির মালিকানা জেলা পরিষদ হলেও এ ব্যাপারে কথা বলতে রাজি নন কর্মকর্তরা। আর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সানাউল কাদের খান জানান, “জেলা পরিষদ থেকে খননের একটি চিঠি পেলেই উদ্যোগ নেয়া হবে। বর্তমানে খালটির অবস্থা খুবই খারাপ। পলি ও আর নোংরা আবর্জনায় ভরাট হওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে পানি প্রবাহ। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এটি জরুরি ভিত্তিতে খনন করা প্রয়োজন। এর মালিকানা জেলা পরিষদ হওয়ায় সেখান থেকে একটি চিঠি হাতে পেলে খনন কাজে কোন বাঁধা থাকে না। জেলা পরিষদ থেকে চিঠি না দিলে খালটি খনন করা সম্ভব না।”