ড.অনুপম সেনের সহধর্মিণী শ্রীমতি উমা সেনগুপ্তা মারা গেছেন
প্রকাশ : 2021-05-12 12:23:50১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির উপাচার্য, শিক্ষায় একুশে পদকপ্রাপ্ত সমাজবিজ্ঞানী ড.অনুপম সেনের সহধর্মিণী শ্রীমতি উমা সেনগুপ্তা পরলোকগমন করেছেন। মঙ্গলবার (১১ মে) দিবাগত রাত ১টা ১ মিনিটে তিনি শহরের বাসায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৭২ বছর।
উমা সেনগুপ্তা ১৯৪৮ সালের ১০ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার কানুনগোপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা স্বর্গীয় শ্রী সুবোধ বল বিপ্লবী মাস্টারদা সূর্য সেনের সহযোদ্ধা হিসেবে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন ও জালালাবাদ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তাঁর দুই ভ্রাতা টেগরা বল ও প্রভাস বল জালালাবাদ যুদ্ধে শহীদ হন। বড় ভাই লোকনাথ বল এই যুদ্ধের সর্বাধিনায়ক ছিলেন।
উমা সেনগুপ্তা মৃত্যুকালে স্বামী, এক কন্যা ইন্দ্রাণী সেন, এক নাতি ও এক নাতনি রেখে গেছেন। প্রিয়ভাষিণী ও স্বভাবমাধুর্যের জন্য তিনি স্বজন ও পরিজনদের মাঝে অত্যন্ত প্রিয়ভাজন ছিলেন। উচ্চ রক্তচাপের কারণে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের ফলে দীর্ঘ ১২ বছর তিনি অর্ধ-কোমায় ছিলেন।
১৯৬৬ সালের শেষদিকে ড. অনুপম সেনের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। ২০০২ সালে ঢাকায় মেয়ের বাসায় প্রথম দফা স্ট্রোকে উমা সেনগুপ্তার ডান পা ও ডান হাত অবশ হয়ে যায়। এরপর ২০০৯ সালে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে কোমায় চলে যান তিনি।
অসুস্থ স্ত্রীকে সেবা দিতে গিয়ে ড. অনুপম সেনের জীবনও বাঁধা পড়ে যায় নির্দিষ্ট গণ্ডিতে। নিজের শরীরেও বাসা বেঁধেছে নানান অসুখ। তারপরও ভোর ৬টা থেকে সোয়া ৬টার মধ্যে ঘুম থেকে উঠেন তিনি। স্ত্রীকে তার বেডে গিয়ে একপাশ থেকে আরেক পাশ করে দিতেন। সাড়ে ৬টার দিকে প্রেসক্রিপশন দেখে ভোরের ওষুধ খাওয়াতেন। সাড়ে ৮টার দিকে আরেকবার ওষুধ খাওয়াতেন স্ত্রীকে। ততক্ষণে চলে আসেন সেবিকা। সকাল সাড়ে ১০টার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যান অনুপম সেন। দাফতরিক কাজ, ক্লাসের তদারকি, মিটিং শেষ করে দুপুর আড়াইটার মধ্যে আবারও বাসায় ফিরেন। স্ত্রীকে দুপুরের পথ্য খাইয়ে ছুটতেন সভা, সেমিনারে বক্তব্য দিতে কিংবা মিছিলের অগ্রভাগে থেকে নেতৃত্ব দিতে। রাত সাড়ে ৭টা থেকে ৮টার মধ্যে বাসায় ফিরতেন। রাত ১২টার দিকে স্ত্রীকে শেষ পথ্য দিয়ে কিছুক্ষণ বই পড়ে রাত ১টার দিকে ঘুমাতে যেতেন তিনি।
স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে ড. অনুপম সেন বলেছিলেন, ‘উমা ভাল গান করতো। তার কণ্ঠ খুব মিষ্টি ছিল। মাঝে মাঝে হারমোনিয়াম নিয়ে সে বসে যেতো। দুই-আড়াই ঘণ্টা পর্যন্ত গান করতো। উমা অসুস্থ হলো, কথাই বলতে পারে না, গান কোত্থেকে করবে। এখন আর আমার গান শোনাই হয় না’।
উমা সেনগুপ্তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি পরিবার। ইউনিভার্সিটির ট্রেজারার প্রফেসর একেএম তফজল হক, কলা ও সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মোহীত উল আলম, ব্যবসা-শিক্ষা অনুষদের প্রফেসর অমল ভূষণ নাগ, প্রকৌশল ও বিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. তৌফিক সাঈদ, রেজিস্ট্রার খুরশিদুর রহমান, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক শেখ মুহাম্মদ ইব্রাহিমসহ ইউনিভার্সিটির সকল শিক্ষক-শিক্ষিকা ও কর্মকর্তা-কর্মচারী শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।