ডা. জাফরউল্লাহ চৌধুরী বিএনপির কেউ না, তিনি সম্মানিত ব্যক্তি: ফখরুল
প্রকাশ : 2022-02-28 19:39:16১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
সরকারের লাগমহীন লুটপাটের কারণে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আওয়ামী লীগ যতবার ক্ষমতায় এসেছে জনগণের সঙ্গে বেঈমানি করেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, শেখ হাসিনা মাথায় হিজাব পড়ে, হাতে তসবি নিয়ে বলেছিলেন দশ টাকা কেজিতে চাল খাওয়াবেন, ঘরে ঘরে চাকরি দেবেন, বিনা পয়সায় সার দেবেন। কিন্তু তারা কিছুই দেয়নি। এটাই হচ্ছে আওয়ামী লীগ।
তিনি বলেন, দেশে ৪২টি টিভি চ্যানেল আছে, পত্রিকা অনেক, কিন্তু লেখার স্বাধীনতা নেই। অথচ সংবিধান আমাকে এই অধিকার দিয়েছে। কিন্তু শেখ হাসিনা তা লঙ্ঘন করে দেশের জনগণকে ক্রীতদাস করে রেখেছেন। মানুষের মুখে হাসি নেই, কৃষকের পাট-ধানের মূল্য নেই।
তিনি অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ নিজেরা বড়লোক হওয়ার জন্য দুর্নীতি করছে। তারা দুর্নীতির টাকায় পকেট ভারী করে বিদেশে পাচার করছে। শেয়ার মার্কেটের কোটি কোটি টাকা লুটপাট হয়ে গেছে। স্বাস্থ্য বিভাগের লাগামহীন দুর্নীতির পরও মন্ত্রী বহাল তবিয়তে রয়ে গেছেন। শিক্ষামন্ত্রীর স্বজনরা ভূমি অধিগ্রহণের কাজে ৩৬৫ কোটি টাকা লুট করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। ধ্বংস হয়ে গেছে শিক্ষা ব্যবস্থা।
তিনি বলেন, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির দাম ৪/৫ দফা বাড়ানো হয়েছে। সরকারের মন্ত্রীরা চুরি করে, ঘুষ খায়। দাম বাড়ানো ছাড়া উপায় কী?
সোমবার (২৮ ফেব্রয়ারি) দুপুরে ময়মনসিংহ শহরের নতুন বাজার এলাকায় দলীয় কার্যালয়ের সামনে মহানগর বিএনপি আয়োজিত দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে আয়োজিত বিক্ষোভ-সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ময়মনসিংহ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক একেএম শফিকুল ইসলএমের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম আহ্বায়ক আবু ওয়াহাব আকন্দ ও অধ্যাপক শেখ আমজাদ আলীর যৌথ সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শাহ ওয়ারেস আলী মামুন, শরীফুল আলম প্রমুখ।
এছাড়াও সমাবেশে দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ডা. মাহাবুবুর রহমান লিটন, যুগ্ম আহ্বায়ক জাকির হোসেন বাবলু, কাজী রানা, একেএম মাহাবুবুল আলম, এড. এমএ হান্নান খান, ফখরুদ্দিন আহমেদ বাচ্চু, সাবেক এমপি শাহ শহীদ সারোয়ার, শাহ নূরুল কবীর শাহীন, উত্তর জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মোতাহার হোসেন তালুকদার সহ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, এখনও সময় আছে, চাল, ডাল, তেলের দাম কমান। গ্যাস-বিদ্যুৎ ও পানির দাম কমান এবং জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা দিন এবং নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন করে জনগণের হাতে ক্ষমতা দিন।
তাত্ত্বিকরা বলেন- তত্ত্বাধায়ক সরকার নাকি গণতন্ত্রের সঙ্গে যায় না, এটা ভুল বক্তব্য মন্তব্য করে তিনি বলেন, গণতন্ত্রই জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা, এর জন্য মানুষ নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়। নিজের ভোট নিজে দিতে চায়, আর এটা করতে হলে তত্ত্বাধায়ক সরকার আনতে হবে। আবারও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ভোট দিতে হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ইলেকশন কমিশন (ইসি) দিয়ে আবারও চোরা পথে ভোট নিয়ে চলে যাবা, সেই কাজ এবার আর হবে না। ‘বার বার ঘু ঘু তুমি খেয়ে যাও ধান, এইবার ঘুঘু তোমার বধিব পরাণ’। এবার জনগণ জেগে উঠেছে, তাদের সব চক্রান্ত রুখে দিয়ে দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্ত করবে, দেশের মানুষকে মুক্ত করবে।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, তারা ‘মুলা দেখিয়ে’ কোন লাভ হবে না। নির্বাচন কমিশন যাই হোক, আমরা বিশ্বাস করি না। আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে এ দেশে কখনোই সুষ্ঠ নির্বাচন হতে পারে না।
ডা. জাফরউল্লাহ চৌধুরী বিএনপির কেউ না: সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ডা. জাফরউল্লাহ চৌধুরী বিএনপির কেউ না। তার সঙ্গে বিএনপির কোন সর্ম্পক নেই। তিনি সম্মানিত, শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি। আমি তাকে সম্মান করি। তিনি অত্যন্ত ভাল মানুষ। তবে বিএনপিকে নির্বাচন কমিশন (ইসি) মেনে নেওয়ার কথা বলার মতো তিনি কেউ নন। ইসি নিয়ে তিনি যে বক্তব্য দিয়েছেন, এটি ওনার একান্তই ব্যক্তিগত মত।
তিনি বলেন, অথচ আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুবুল আলম হানিফ প্রতিদিন বলেন- জাফরউল্লাহ বিএনপির উপদেষ্টা। এ সময় হানিফকে উদ্দেশ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আপনি কিছুই জানেন না, আপনার পদ থেকে পদত্যাগ করা উচিত।
প্রসঙ্গত, বিএনপির এই সমাবেশকে কেন্দ্র করে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা চোখে পড়ে। ফলে সমাবেশের শুরুর বেশ আগে থেকেই মিছিল নিয়ে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী এতে যোগ দেন।